‘বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া সম্ভাবনাময় এমন টগবগে তরুণকে, আমাদের সাম্যকে এমন নৃশংসভাবে হত্যা করা হবে, কখনো ভাবিনি। ভাবতেই পারছি না—আমার ভাতিজার সঙ্গে আর কখনো দেখা হবে না, কথা হবে না!’
অন্তর ছুঁয়ে যাওয়া এই কথাগুলো সাম্যের আপন চাচা কায়সার উল আলমের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যের আকস্মিক খুনের ঘটনায় তিনি মুষড়ে পড়েছেন। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার ধুকরিয়াবেড়া ইউনিয়নের সরাতৈল গ্রামে তাঁর সঙ্গে কালের কণ্ঠের এই প্রতিনিধির কথা হয়।
তখন তাঁরা সাম্যের মরদেহ আসার অপেক্ষায় ছিলেন। তাঁরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না বাড়ির তরতাজা এই তরুণের অপঘাত মৃত্যু।
চাচা কায়সার উল আলম জানান, ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্যের প্রথম জানাজা হবে। এরপর মরদেহ সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হবে।
এখানে বাদ মাগরিব সড়াতৈল গ্রামের মাদরাসা মাঠে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাদির কবরের পাশে তাঁর মরদেহ দাফন করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা সেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
কায়সার উল আলম বলেন, টেলিভিশনে ভাতিজা সাম্য হত্যার সংবাদ দেখে স্বজন আর গ্রামের মানুষের ফোন আসতে থাকে। বাড়িতে ভিড় জমে যায়।
প্রতিবেশী কবির সরদার বলেন, ‘সাম্য প্রতিবছর গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসত। আমাদের সঙ্গে কুশলবিনিময় হতো। এমন নম্র-ভদ্র ছেলেটির এই খুনের ঘটনা আমরা মেনে নিতে পারছি না।’
সাম্যের ছোট চাচি তানিয়া খাতুন বলেন, ‘প্রতিবছর দু-তিনবার সাম্য গ্রামের বাড়িতে আসত। তার সঙ্গে আমাদের অনেক স্মৃতি রয়েছে।
তার মৃত্যুর খবরে আমরা হতবাক।’
স্বজন ও প্রতিবেশী সবাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছে।
গতকাল সকালে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ ও ইসলামী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সমন্বয়ে এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে কলেজ এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়।
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জুনায়েদ হোসেন সবুজ বলেন, ‘দেশের যেকোনো আন্দোলনে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছে। অথচ অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার আমরাই বেশি হয়েছি।’ হত্যাকারীদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
স্বজনরা জানায়, সাম্যের বাবা ফখরুল আলম ঢাকার রূপনগর আবাসিক এলাকায় ১৮ নম্বর সড়কে একটি বহুতল ভবনের সপ্তম তলায় নিজের ফ্ল্যাটে থাকেন। চার ভাইয়ের মধ্যে সাম্য সবার ছোট। তাঁর বড় ভাই আমিরুল ইসলাম সাগর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাম্য স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। তিনি হলের ২২২ নম্বর কক্ষে থাকতেন। কয়েক বছর আগে তাঁর মা মারা গেছেন।