মহান বিজয় দিবসে ১৩৫ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা দিয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। ফুল ও প্রাইজ মানি দিয়ে তাঁদের সম্মানিত করা হয়েছে। গতকাল সোমবার ঢাকার জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গণে এ আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে ঢাকা জেলা প্রশাসক তানভীর আহমদ প্রধান অতিথি ও ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদ বিশেষ অতিথি ছিলেন।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শোয়েব শাত-ঈল ইভান ও সহকারী কমিশনার নুসরাত নওশীন সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক মো. ইকবাল হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোছা. ফুয়ারা খাতুন ও ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান বক্তব্য দেন।
বক্তব্যে জেলা প্রশাসক তানভীর আহমদ বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা যে উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করেছেন, যে চেতনা নিয়ে যুদ্ধ করেছেন—সমাজটা সুন্দর হবে, সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হবে, সব অন্যায় খতম হবে, কেউ কারো প্রতি অন্যায় করবে না। সমাজে আইনের শাসন থাকবে। একে অপরকে শ্রদ্ধা করবে।
মিলেমিশে বসবাস করবে—তাঁদের সে চেতনা পূরণ হয়নি। আমরা দেখেছি, মুক্তিযুদ্ধকে উপলক্ষ করে আমাদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের চেতনা বাস্তবায়নে অনেক কাজ আমাদের বাকি রয়েছে। আজ এত বছর পরও আমাদের শুনতে হচ্ছে দ্রব্যমূল্য কেন আকাশছোঁয়া। সিন্ডিকেটের হাতে কেন সব কিছু জিম্মি। আইন-শৃঙ্খলা অবস্থা কেন ভালো না। রাস্তাঘাটে কেন যানজট। এ সমস্যাগুলো দূর করাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়ন।’
সংবর্ধনা নিতে এসে বীর মুক্তিযোদ্ধা মুকিত মজুমদার বলেন, ‘একাত্তরের কারণে আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ।
সেই দিনগুলোতে যদি সাধারণ জনগণ, ছাত্র-জনতা ঝাঁপিয়ে না পড়তেন তাহলে আমাদের জন্য স্বাধীনতা অর্জন কঠিন হয়ে যেত। স্বাধীনতা পাওয়ার ৫৩ বছরে অনেক কিছু অর্জন করেছি। আবার অনেক কিছু করতে পারিনি। তবে যা অর্জিত হয়েছে, তা ধরে রাখতে হবে। তা না হলে যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছেন তাঁরা শান্তি পাবেন না। এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে নেওয়ার জন্য এই যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়নি। এই দেশটা কলুষিত করে ফেললে আমরাই খারাপ থাকব। আমাদের অতিলোভ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা লুতফা হাসিন রোজী বলেন, ‘শুধু কয়েকজন যুদ্ধ করেই স্বাধীনতা পাইনি। সাড়ে সাত কোটি মানুষ যোদ্ধা ছিলেন। দেশ স্বাধীন হয়েছে, তবে মুক্তিযুদ্ধের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। আমরা শোষণহীন দেশ প্রত্যাশা করছি।’
বক্তব্যের আগে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে বিজয় দিবসের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পরে পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে বিজয় মেলার উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।