নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেছেন, সড়ক নিরাপত্তায় কোনো কাজ হচ্ছে না। যেভাবে হওয়া দরকার সেভাবে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ হচ্ছে না। অন্তর থেকে কাজ করতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার সংগঠনের ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত আলোচনাসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আলোচনায় বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতা সড়ক নিরাপত্তার নানা দিক নিয়ে কথা বলেন।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘সড়ক নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ নির্ভর করছে সরকার ও রাজনৈতিক নেতাদের সদিচ্ছার ওপর। আমরা সব সময় সরকার ও বিরোধী দলের সঙ্গে যোগাযোগ করে আসছি। এটি একটি জাতীয় ইস্যু।
মানুষ সড়কে জীবন দিচ্ছে। এই ইস্যুতে সব দলকে এক হতে হবে, যা অতীতে কখনো হয়নি।’
আলোচনায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম বলেন, নিরাপদ সড়কের আন্দোলন এখনো সময়ের দাবি। সড়ক নিরাপত্তায় রাষ্ট্রীয় একটি চিন্তা দরকার।
কিন্তু তেমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘দুটি বাসের রেষারেষিতে পথচারী নিহত হওয়াকে আমি দুর্ঘটনা বলতে চাই না। এ রকম দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেক। এটিকে হত্যা, গণহত্যা বলতে চাই। আইনকে আইনের গতিতে চলতে দিতে হবে।’
সাবেক এমপি গোলাম মওলা রনি বলেন, বিআরটির সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেট হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতিতে যুক্ত। একজন মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী দিয়ে এটি সমাধান সম্ভব নয়। জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুর রহমান মাসুদ বলেন, নিরাপদ সড়কের জন্য দরকার নিরাপদ রাষ্ট্র, নিরাপদ শাসক, নিরাপদ সড়ক।
নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আজাদ বলেন, ৩২ বছর ধরে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, সরকারে যাওয়ার জন্য নয়, সামাজিক একটি দাবি প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করে গেছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ ওভারটেকিং, বেপরোয়া গতি, অদক্ষ চালক ও চালকদের মানসিক উদ্বেগ। আমাদের দেশে এই বিষয়গুলো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সমাধানের কোনো অথরিটি নাই।’
এদিকে সেফটি ফাউন্ডেশন প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণে দেখা যায় মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও অ্যাম্বুল্যান্স আরোহী হিসেবে একসঙ্গে পুরো পরিবার বা এক পরিবারের অধিক সদস্য নিহতের প্রবণতা বাড়ছে। গত পাঁচ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় শতাধিক পরিবার পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। গতকাল রোড সেফটি ফাউন্ডেশন প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে। সংগঠনটি ৯টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মোটরসাইকেল আরোহী হিসেবে স্বামী-স্ত্রী নিহতের ঘটনা ঘটেছে ১২৩টি এবং পিতা-পুত্র নিহতের ঘটনা ঘটেছে ৮৪টি। অর্থাৎ ১২৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় স্বামী-স্ত্রী নিহত হয়েছেন ২৪৬ জন এবং ৮৪টি দুর্ঘটনায় পিতা-পুত্র নিহত হয়েছেন ১৬৮ জন।
অটোরিকশা যাত্রী হিসেবে স্বামী-স্ত্রীসহ একই পরিবারের দুজন নিহতের ঘটনা ঘটেছে ১৩৭টি। তিনজন নিহতের ঘটনা ৭৮টি, চারজন নিহতের ঘটনা ৬২টি, পাঁচজন নিহতের ঘটনা ৩৮টি, ছয়জন নিহতের ঘটনা ২৬টি এবং সাতজন নিহতের ঘটনা ঘটেছে ১১টি। মোট ৩৫২টি পরিবারের এক হাজার ১৭৯ জন নিহত হয়েছেন।
এ ছাড়া মাইক্রোবাসের আরোহী হিসেবে একই পরিবারের দুজন নিহতের ঘটনা ঘটেছে ১৬টি, তিনজন নিহতের ঘটনা ২২টি, চারজন নিহতের ঘটনা ১৭টি, পাঁচজন নিহতের ঘটনা ১১টি, ছয়জন নিহতের ঘটনা আটটি এবং ১১ জন নিহতের ঘটনা একটি। মোট ৭৫টি পরিবারের ২৮০ জন নিহত হয়েছে। আর ব্যক্তিগত গাড়ির আরোহী হিসেবে একই পরিবারের দুজন নিহতের ঘটনা ঘটেছে ২৪টি। তিনজন নিহতের ঘটনা ২১টি, চারজন নিহতের ঘটনা ১৭টি, পাঁচজন নিহতের ঘটনা ১৪টি। এতে মোট ৭৬টি পরিবারের ২৪৯ জন নিহত হয়েছে।