বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানী ঢাকার উত্তরায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর মৃত্যু নিয়ে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘আওয়ামী লীগ সমর্থিত’ বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া পোস্টে দাবি করা হয়, ‘মুগ্ধ মারা যাননি, মুগ্ধ নামে কেউ নাকি ছিলেনই না। এমনকি মুগ্ধ-স্নিগ্ধ দুই ভাই নয়, মুগ্ধই স্নিগ্ধ, মানুষ একজনই।’
তবে ফ্যাক্ট চেকিং বা তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার বাংলাদেশ গতকাল শনিবার জানিয়েছে, মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ আলাদা দুই ব্যক্তি।
তারা দুজন যমজ ভাই। ওপেন সোর্স অনুসন্ধানের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত মুগ্ধ ও স্নিগ্ধর একসঙ্গে তোলা অসংখ্য ছবি ও ভিডিওর বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে রিউমার স্ক্যানার।
গতকালই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই সব পোস্টকে মিথ্যা বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রেস উইংয়ের এক পোস্টে বলা হয়, গত ১৮ জুলাই উত্তরার আজমপুরে বিক্ষোভকারীরা পিপাসার্ত হয়ে পড়লে তিনি (মুগ্ধ) তাদের জন্য পানি ও খাবার নিয়ে ছুটে যান।
মৃত্যুর ১৫ মিনিট আগে ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি বিক্ষোভকারীদের পানির বোতল ও বিস্কুট বিতরণ করছেন। বিকেল ৫টার দিকে উত্তরার আজমপুর মোড়ে রাস্তার পাশে থাকা অবস্থায় তাকে গুলি করা হয়। তাকে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিজের পরিবারের কথা চিন্তা করে গুজব ছড়াবেন : স্নিগ্ধ
এদিকে এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মুগ্ধর ভাই ও ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ।
গতকাল বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্নিগ্ধ বলেন, ‘গুজব ছড়ানো অনেক সহজ, কিন্তু যাদের ব্যাপারে ছড়ানো হচ্ছে তাদের জীবনের ওপর দিয়ে কী যাচ্ছে, তা জড়িতরা বুঝতে পারছে না।’ গুজব ছড়ানোর আগে তিনি নিজের ভাই-বোন-পরিবারের কথা চিন্তা করতে বলেছেন।
স্নিগ্ধ বলেন, ‘যারা আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন, তারা তাদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছেন। কেউ তাদের কবর জিয়ারত করতে গেছে কি না কিংবা করতে যাচ্ছে কি না, এ কারণে তার আত্মত্যাগ কোনো অংশে কম হতে পারে না। তারা তাদের জীবন দিয়েছেন, এর থেকে বড় আত্মত্যাগ আর হতে পারে না।
তাদের সম্মান সর্বোচ্চ থাকবে। বাংলাদেশের সরকারকেও নিশ্চিত করতে হবে যেন শহীদরা তাদের সম্মান ও তাদের পরিবার প্রাপ্য অধিকারটুকু পায়।’