বৈষম্য থেকেই হতাশা ও ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে। আর এগুলো ধ্বংস ডেকে আনছে। মালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুসা মারা গতকাল রবিবার ঢাকায় বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন (বিওবিসি) সম্মেলনে এ কথা বলেন। তিনি আশা করেন, বাংলাদেশ সত্যিকারের গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার দেশ হবে।
বিওবিসি সম্মেলনে মালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী
বৈষম্য থেকেই হতাশা, ক্ষোভ
কূটনৈতিক প্রতিবেদক

মুসা বলেন, ‘বৈষম্য হলো সত্যিকারের উদ্বেগের বিষয়। এটিই বিশ্বে বিভক্তি তৈরি করে। বৈষম্য হতাশা, ক্ষোভ সৃষ্টি করে। আমাদের বিশ্ব ধ্বংস করে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় ভোটাররা শক্তিশালী ব্যক্তি নির্বাচন করেন। নির্বাচিত ব্যক্তিরা বিশ্বের চেয়ে তাঁদের নিজ দেশের ব্যাপারে বেশি সচেতন। তাঁরা অন্য দেশে সহযোগিতা নয়, বরং নিজেদের স্বার্থই বেশি বোঝেন। এ ধরনের ব্যক্তিদের নির্বাচিত করতে গিয়ে মানুষ কার্যত সহযোগিতার বিরুদ্ধে ভোট দিচ্ছে বলে মনে করেন মালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
মুসা বলেন, বিশ্বনেতাদের অঙ্গীকারের অভাবে এবার বাকু জলাবায়ু সম্মেলনে খুব অসহায় মনে হচ্ছে। জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলার জন্য বিশ্ব পথ খুঁজে পাচ্ছে না।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের বরাত দিয়ে মুসা মারা বলেন, জলবায়ু ক্ষতিপূরণ তহবিলে এ পর্যন্ত মাত্র ৭০০ মিলিয়ন ডলার জমা হয়েছে। এটি বিশ্বের বিখ্যাত ১০ জন ফুটবলারের বেতনের সমান। বিশ্ব কখনো এত ধনী ছিল না, অথচ সহযোগিতায় কতই না পিছিয়ে।
মালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক বিলিয়ন ডলার প্রতি সপ্তাহে ইউক্রেনকে দেওয়া হচ্ছে। এক পক্ষে ১৫ দেশ। অপর পক্ষে মাত্র একটি দেশ। অথচ আফ্রিকা সহযোগিতা পাচ্ছে না। তিনি রোহিঙ্গা ও মধ্য আফ্রিকার সমস্যারও উদাহরণ দেন।
মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে বিপুল সম্পদ থাকার তথ্য তুলে ধরেন মুসা। তিনি বলেন, আফ্রিকা থেকে বিপুল সম্পদ অন্যত্র চলে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমন্বয়ের ঘাটতি আছে আফ্রিকায়। উপনিবেশ থেকে মুক্ত হওয়ার ৫০ বছর পরও বিভক্তি রয়ে গেছে। যারা উপনিবেশ স্থাপন করেছিল তাদের সঙ্গে আফ্রিকার দেশগুলোর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ভালো। কিন্তু প্রতিবেশীদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ভালো নেই।
মুসা বলেন, বড় তেল উৎপাদনকারী থাকা সত্ত্বেও আফ্রিকায় তেলের ঘাটতি। ১ শতাংশ লোক দেশের ৫০ শতাংশ সম্পদের মালিক। এর সঙ্গে বাংলাদেশসহ আরো অনেক দেশের মিল থাকতে পারে।
মুসা বলেন, আফ্রিকার সরকার ব্যবস্থায় নারী ও তরুণদের অন্তর্ভুক্তির অভাব আছে। আফ্রিকায় দুর্নীতি মহামারি আকারে আছে। এটিও হতাশা ও ক্ষোভের কারণ। এমন পটভূমিতে আফ্রিকায় সন্ত্রাসের উপস্থিতি আছে। এটি শুধু আফ্রিকা নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশ, বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথের বাস্তবতা।
তিনি বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সম্প্রসারণ করা দরকার। নিরাপত্তা পরিষদে গ্লোবাল সাউথ থেকে সদস্য নেওয়া দরকার। অনেক ফোরাম আছে। কিন্তু জাতিসংঘের বিকল্প নেই। জাতিসংঘ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে।
মুসা বলেন, ‘জলবায়ু ইস্যুতে অঙ্গীকার আইনিকাঠামোতে রূপ দিতে হবে। অঙ্গীকার না রাখা দেশগুলোকে বিচারের মুখোমুখি করার সুযোগ থাকা দরকার। আমাদের আন্তর্জাতিক অর্থায়নকাঠামোও পরিবর্তন করা দরকার। বহুজাতিক কম্পানিগুলোর কর ফাঁকি দেওয়া ঠেকাতে হবে।’ তিনি বলেন, সুশাসন, আইনের শাসন—এগুলো রাজনীতি, অর্থনীতি দুটির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) তিন দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করে। সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানসহ অন্য অতিথি, আলোচক ও বিশ্লেষকরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সম্পর্কিত খবর

প্রাথমিক শিক্ষকদের মহাসমাবেশ
চার দফা দাবি না মানলে ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে টানা অনশন
নিজস্ব প্রতিবেদক

বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, পদোন্নতিসহ চার দফা দাবিতে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাসমাবেশ করেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। গতকাল শুক্রবার মহাসমাবেশ থেকে দাবি আদায়ে সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আবুল কাসেম বলেন, ‘আগামী ১৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চার দফা দাবি পূরণ করা না হলে ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে সারা দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা টানা অনশন কর্মসূচি পালন করবেন। কোথাও কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হবে না।
গতকাল সকাল থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হতে শুরু করেন দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসা প্রাথমিকের সহকারী ও প্রধান শিক্ষকরা। সকাল ১১টার দিকে এই মহাসমাবেশ শুরু হয়।
দুপুর ২টার দিকে মহাসমাবেশের সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে সভাপতি মো. আবুল কাসেম বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্রে জেনেছি, রিট করা ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের জন্য দশম গ্রেড বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তাহলে যাঁরা মামলা করেননি, তাঁদের জন্য কবে দশম গ্রেড বাস্তবায়ন হবে? আমরা চাই, দেশের সব প্রধান শিক্ষক যেন সমানভাবে দশম গ্রেড পান। সহকারী শিক্ষকদের জন্য কনসালটেশন কমিটি ১২তম গ্রেডের প্রস্তাব দিয়েছে, অথচ আমাদের দাবি হচ্ছে ১১তম গ্রেড।’
প্রাথমিক শিক্ষকদের চার দফা দাবি হচ্ছে সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতন-ভাতা প্রদান; ২০১৪ সালের ৯ মার্চ থেকে সব প্রধান শিক্ষকের দশম গ্রেডে পদোন্নতির সরকারি আদেশ (জিও) জারি; চলতি দায়িত্বে থাকা সিনিয়র শিক্ষকদের শতভাগ পদোন্নতি নিশ্চিতকরণ এবং চাকরির ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রদান।

জুলাই শহীদ রিজভীর প্রতি শ্রদ্ধা
শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে গণতান্ত্রিক-বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে হবে : সিপিবি
নিজস্ব প্রতিবেদক

চব্বিশের গণ-আন্দোলনের সময় ১৮ জুলাই রাজধানীর উত্তরায় পুলিশের গুলিতে শহীদ মাহমুদুল হাসান রিজভীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। এ সময় সিপিবি নেতারা বলেন, শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে হবে। অবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের উত্তরা থানা কমিটির সদস্য শহীদ রিজভী স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও স্মরণসভার আয়োজন করা হয়।

শহীদ মুগ্ধর বাবা
জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে মানুষ স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিল
নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বাধীনতার স্বাদ মানুষ জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে পেয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ মীর মুগ্ধর বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে এ দেশের মানুষ স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিল। কিন্তু তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর দিয়াবাড়ীতে অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (এডাস্ট) অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত এক স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

সংক্ষিপ্ত
ঢাকায় জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে প্রতীকী ম্যারাথন
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই যোদ্ধাসহ আন্দোলনে আহত ও নিহত পরিবারের সদস্যদের অংশগ্রহণে এক প্রতীকী ম্যারাথন গতকাল শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ওই ম্যারাথন আয়োজন করা হয়। এই বিশেষ কর্মসূচিতে বিভিন্ন বয়সের প্রতিযোগীদের সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এক হাজার প্রতিযোগী নিয়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ এই প্রতীকী ম্যারাথনটি বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র থেকে শুরু হয়ে গণভবন, সংসদ ভবন, খামারবাড়ি হয়ে আবারও চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এসে শেষ হয়।