ঢাকা, শুক্রবার ২৫ জুলাই ২০২৫
১০ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৯ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ২৫ জুলাই ২০২৫
১০ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৯ মহররম ১৪৪৭
রাজশাহী নগরীর ৭ কিলোমিটার

৬৫০ দখলদারের পেটে পদ্মা

  • * কমপক্ষে ৬৫০ জন নদীর পার ও চর দখলে রেখেছে * বানানো হয়েছে রাস্তা, দখলে শহর রক্ষা বাঁধও * নদী গতিপথ হারাচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে সৌন্দর্য
রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী
রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী
শেয়ার
৬৫০ দখলদারের পেটে পদ্মা
রাজশাহী মহানগরীর পাঠানপাড়া মুক্তমঞ্চের নিচে পদ্মার চর দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে দোকানপাট। ছবি : কালের কণ্ঠ

রাজশাহীতে পদ্মা নদী দখলের মহোৎসব চলছে। নগরীর বেড়পাড়া থেকে তালাইমারী পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার এলাকা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে বিনোদনকেন্দ্র, রেস্তরাঁ, বসতঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা। নিজেদের মতো করে স্থাপনা তৈরি করেছে দখলদাররা। কমপক্ষে ৬৫০ জন দখলদার পদ্মা নদীর পার ও চর দখলে রেখেছে।

চলাচলের জন্য বানানো হয়েছে রাস্তা। দখল হয়েছে শহর রক্ষা বাঁধও। এতে নদী সংকুচিত হওয়ার পাশাপাশি গতিপথ হারাচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে সৌন্দর্য। দখলদারির বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠছে দখলদাররা।

নগরীর আলুপট্টি এলাকায় পদ্মা নদীর উত্তর পারে ভরাট করে তৈরি করা হয়েছে বেশ কিছু দোকান। ধর্মীয় এক সংগঠনের নেতাও একটি অংশ ভরাট করে রেখেছেন। আরো কয়েকজন ব্যক্তি ফাস্ট ফুডের দোকান দিয়েছে।

নগরীর পঞ্চবটি এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধের নিচে গড়ে উঠেছে একাধিক বাড়ি।

বড়কুঠি এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধের নিচে বিশাল জায়গা ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে কয়েকটি রেস্তরাঁ ও ফাস্ট ফুডের দোকান। এসব দোকানের বেশির ভাগই ভাড়া দেওয়া। স্থানীয় প্রভাবশালী বা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা দোকানগুলো তৈরি করে ভাড়া দিয়েছেন।

এখানকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দোকানের আয়তনভেদে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে ১০০ থেকে ২০০ টাকা চাঁদা দিতে  হয়। চাঁদা না দিলে এখানে দোকান করা সম্ভব না।

এদিকে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নগরীর পাঠানপাড়া এলাকায় একটি পার্ক ও রেস্তরাঁ তৈরি করে সেটি ভাড়া দিয়েছে। লালনশাহ মঞ্চ এলাকায় প্রায় পাঁচ বিঘা আয়তনের জায়গাটি বছর তিনেক আগে ভাড়া দেওয়া হয় জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক কোচ খালেদ মাসুদ পাইলটকে। শহর রক্ষা বাঁধের একটি অংশে কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে সেখানে তৈরি করা হয়েছে পার্ক।

লালনশাহ মুক্তমঞ্চের পাশে তৈরি করা নোঙর রেস্তরাঁয়ও প্রতিদিন শত শত মানুষ খেতে আসে।

নোঙরের পাশেই দুটি বিশাল আমবাগানে গড়ে তোলা হয়েছে সীমান্ত নোঙর এবং সীমান্ত অবকাশ নামের দুটি রেস্তরাঁ।

নোঙর রেস্তরাঁর ব্যবস্থাপক রিপন আলী বলেন, আমরা সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে লিজ নিয়ে ব্যবসা করছি। আগে এখানে মাদক কারবারিদের আস্তানা ছিল। এখন বিনোদনপ্রেমীরা ঘুরতে পারেন স্বাচ্ছন্দ্যে।

নোঙরের নিচেই পদ্মার চরের মধ্যে রাস্তা তৈরি করে দুই ধারে গড়ে উঠেছে শতাধিক দোকান। বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবার, ফুচকা ও শিশুদের খেলনার এসব দোকান থেকে প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ টাকা চাঁদা তোলেন স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি।

হাবিল উদ্দিন নামের এক দোকানদার বলেন, দোকান করতে হলে কিছু টাকা তো দিতেই হবে। যাঁরা টাকা নেন তাঁরা স্থানীয়। টাকা না দিলে শৃঙ্খলা থাকবে না, যে যার মতো দোকান করবে।

ঘুরতে আসা নাদিয়া খাতুন নামের এক কলেজছাত্রী বলেন, নদীর চরে দোকান তৈরির কারণে পদ্মার সৌন্দর্য অনেকটা নষ্ট হয়েছে। জেগে ওঠা চরে ঘাস বা লতাপাতা জন্মালেও দেখতে সুন্দর লাগে। চর দখল করে দোকান গড়ে তোলার কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

নগরীর শ্রীরামপুর এলাকায় নদীর চরে তৈরি করা হয়েছে শত শত বাড়ি। এসব বাড়িতে বছরের পর বছর বসবাস করে আসছে হাজার হাজার মানুষ। শহর রক্ষা বাঁধের নিচেই এসব বাড়ি তৈরি করা হয়েছে।

কথা হয় নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকীর সঙ্গে। তিনি বলেন, একসময় আমাদের রাজশাহীর পদ্মায় ইলিশ পাওয়া যেত। রাজশাহী শহরের সঙ্গে যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম ছিল স্টিমার। কিন্তু নদী এখন মৃতপ্রায়। দখলে দখলে ধুঁকছে পদ্মা। বর্ষাকাল ছাড়া নদীর প্রায় বেশির ভাগ চরে পরিণত হয়। নদী রক্ষার কোনো ব্যবস্থা কোনো সরকারই করেনি। ফলে দখলদাররা আরো বেপরোয়া। আর নদী বদলাচ্ছে গতিপথ। ভাঙছে দুই পার। অনেক মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে।

নদী দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বলেন, বেড়পাড়া থেকে তালাইমারী পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার এলাকায় নদী দখল করা হয়েছে। ৬০০ দখলদারের তালিকা করা হয়েছে। এদের উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসককে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, নদী দখলের বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে দ্রুতই।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

শাহজালালে প্রতিজন যাত্রীর সঙ্গে দুজন সঙ্গী প্রবেশের নির্দেশনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শাহজালালে প্রতিজন যাত্রীর সঙ্গে দুজন সঙ্গী প্রবেশের নির্দেশনা

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগমন ও বহির্গমন প্রতিজন যাত্রীর সঙ্গে সর্বোচ্চ দুজন সঙ্গী প্রবেশ করতে পারবেন—এমন নির্দেশনা জারি করেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

এই নির্দেশনা আগামী রবিবার (২৭ জুলাই) থেকে কার্যকর হবে। বিমানবন্দর এলাকার ডিপারচার ড্রাইভওয়ে ও অ্যারাইভাল ক্যানোপিতে যাত্রীপ্রতি সর্বোচ্চ দুজন ব্যক্তি ভেতরে প্রবেশের অনুমতি পাবেন।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যাত্রীদের যাতায়াত স্বাভাবিক রাখা, যানজট নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

নির্দেশনায় আরো বলা হয়, বিমানবন্দর এলাকায় আসা সবাইকে সুশৃঙ্খলভাবে চলাচল ও কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

যানজট ও নিরাপত্তাঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে এ ধরনের পদক্ষেপকে জরুরি বলছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বিমানবন্দর সূত্র বলছে, প্রয়োজনে এই নিয়ম আরো কড়াকড়ি করা হতে পারে। এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রমাণসহ পরিচয়পত্র রাখার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

মন্তব্য

শেখ হাসিনার মামাতো ভাই হিরা কারাগারে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শেখ হাসিনার মামাতো ভাই হিরা কারাগারে

রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানার আমির হোসেন হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামাতো ভাই শেখ ওয়ালিদুর রহমান হিরাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুজ্জামানের আদালত এই আদেশ দেন।

এদিন হিরাকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার উপপরিদর্শক মো. মাসুদ রানা তাঁকে কারাগারে রাখার আবেদন করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন।

শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। গত বুধবার ভাটারা এলাকা থেকে শেখ ওয়াহিদুর রহমান হিরাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

মন্তব্য

দেড় দশকে ‘আওয়ামী সন্ত্রাসে’ নিহতদের তালিকা তৈরির নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
দেড় দশকে ‘আওয়ামী সন্ত্রাসে’ নিহতদের তালিকা তৈরির নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

দেশে গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংগঠনের ‘সন্ত্রাসী’ হামলা এবং তৎকালীন ‘সরকারের নির্দেশে’ রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের বাবা মোহাম্মদ বরকত উল্লাহ, ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ এবং মামা মোহাম্মদ মোফাজ্জল হোসেন সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এই নির্দেশ দেন।

সাক্ষাতে আবরার ফাহাদের পরিবার দাবি জানায়, আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের তালিকা তৈরি করে প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে। একই সঙ্গে আবরার হত্যা মামলার বিচার দ্রুত শেষ করতে সরকারের উদ্যোগ চান তাঁরা।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনা পুরো জাতিকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। এ ঘটনার বিচার অবশ্যই শেষ হবে। গণ-অভ্যুত্থানের আগের ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ ও তাদের সংগঠনের হাতে যারা প্রাণ হারিয়েছে, তাদের প্রতিটি ঘটনার সঠিক তদন্ত হবে। তৎকালীন সরকারের নির্দেশে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মাধ্যমে যে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটেছে, সেগুলোও তদন্তের আওতায় রয়েছে।

সরকার এরই মধ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে।

সাক্ষাৎকালে মোহাম্মদ বরকত উল্লাহ বলেন, ‘দেশের স্বার্থে কথা বলার কারণেই আমার ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। অসম পানিবণ্টনের বিরুদ্ধেও সে কথা বলেছিল। আজও তার মা ছেলের জন্য কান্না করে।

 

মন্তব্য

হাসিনার কার্যালয়ের ১৫ চালককে রাজউকের প্লট

    রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান!
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
হাসিনার কার্যালয়ের ১৫ চালককে রাজউকের প্লট

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ের ১৫ চালককে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ঝিলমিল প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ১৫ চালককে প্লট দেওয়া হয়।

গত বুধবার কমিশনের এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান পরিচালনা করে এই অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে। গতকাল সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এসব তথ্য জানান।

দুদক সূত্র জানায়, রাজউকের ঝিলমিল প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে নানা দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে ঝিলমিল প্রকল্পের প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখার ক্ষেত্রে চার শ্রেণিতে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

বরাদ্দের ক্ষেত্রে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে চিঠি দিলে রাজউক তা বাস্তবায়ন করে। ওই প্রকল্পে ১৩/এ ধারার আওতায় বিভিন্ন সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব-২-এর গাড়িচালক, বিশেষ সহকারীর গাড়িচালক, সহকারী একান্ত সচিব-১-এর চালক, একান্ত সচিব-১ ও ২-এর চালক, প্রটোকল অফিসারের চালক, মুখ্য
সচিবের চালক, চিফ ফটোগ্রাফারের চালকসহ প্রায় ১৫ জন চালককে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়।

তবে এসআরও এবং রাজউক বিধিতে অসামান্য অবদানের কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া পাওয়া যায়নি। প্লট বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের কোন কোন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রয়েছে তার উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ