তিন ঘণ্টার ভারি বর্ষণে আরেক দফা পানিতে ডুবল সিলেট নগরের বেশির ভাগ এলাকা। বিভাগের সবচেয়ে বড় চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালও জলমগ্ন হয়েছে। তবে বৃষ্টি কমতে শুরু করলে ভোরের দিকে পানি নামতে শুরু করে এবং সকালে সব এলাকা থেকে পানি নেমে যায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ২২০ মিলিমিটার।
তবে এরপর বৃষ্টিপাত কমে যায়। রাত ১২টা থেকে গতকাল রবিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন এই কার্যালয়ের আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন।
শনিবার রাত সাড়ে ১১টার পর খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, নগরের দরগা মহল্লা, পায়রা, জালালাবাদ, চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার, কাজলশাহ, ওসমানী মেডিক্যাল এলাকা, বাগবাড়ি, কালীবাড়ি, হাওলাদারপাড়া, সোবহানীঘাট, তেরোরতন, মেন্দিবাগ, মাছিমপুর, শিবগঞ্জ, চৌহাট্টা, মিরবক্সটুলা, জামতলা, মনিপুরী রাজবাড়ি, মিরের ময়দানসহ বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়েছে।
মানুষের বাড়িঘরেও পানি ঢুকে পড়েছে।
নগরের দরগাহ মহল্লার বাসিন্দা কবি রাজীব চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাত ১০টার দিকেই আমার পাড়ার রাস্তা ডুবে যায়। পরে প্রায় তিন ফুটের মতো পানি উঠে আমাদের সিঁড়ির গোড়া পর্যন্ত ডুবে যায়।’
উপশহর এলাকার বাসিন্দা রিপন আহমদ ফরিদী বলেন, ‘জলাবদ্ধতা দূর হওয়ার পর ঘরদোর ও আসবাব পরিষ্কার করার কাজ শেষ করার সপ্তাহ ঘোরার আগেই আবার জলাবদ্ধতা, ঘরবাড়ি আবার নোংরা করে দিয়ে গেছে।
’
তবে অতিমাত্রায় ভারি বর্ষণ হলেও সিলেটের নদ-নদীর পানি বাড়েনি। সিলেট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপত্সীমার নিচ দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বৃষ্টি কমার সঙ্গে সঙ্গে নগরের পানি নেমে গেছে। এমনটাই বলেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের ড্রেন, ছড়া সব ক্লিয়ার আছে।
অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়েছে। কিন্তু নদীর পানি না বাড়ায় এবং বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় ভোরের দিকেই সব পানি নেমে গেছে।’
ওসমানী হাসপাতালও ডুবেছে
শনিবার রাতের ভারি বর্ষণে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালও জলমগ্ন হয়ে যায়। হাসপাতালের বিশাল চত্বর ডুবে রাত ১১টার দিকে পানি হাসপাতাল ভবন ও মেডিক্যাল কলেজের ভবনগুলোতে প্রবেশ করে। হাসপাতালের করিডর হয়ে বিভিন্ন বিভাগেও পানি প্রবেশ করে। মেডিক্যাল কলেজের ক্যান্টিনও পানিতে নিমজ্জিত হয়ে যায়। পরে ভোরের দিকে পানি নেমে যায়।
এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী।
তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, হাসপাতাল এলাকা ডোবার পর পানি হাসপাতাল ভবনেও ঢুকেছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলোতে পানি ঢোকা ঠেকানো গেছে।
এর আগে গত রবিবার (২ জুন) রাত থেকে টানা ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে গত সোমবার ভোর ৫টার দিকে জলমগ্ন হয়ে পড়ে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। হাসপাতালের ভেতরে পানি প্রবেশ করে চরম দুর্ভোগে পড়েন রোগী, স্বজন ও চিকিৎসকরা। তবে বিকেল ৩টার পর পানি নেমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।