দেশে সব ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক ই-ফাইলিং ব্যবস্থা করা হলে প্রথম বছরে ২৪.১ বিলিয়ন ডলার বা দুই লাখ ৮৩ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে বলে প্রক্ষেপণ করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। রাজস্ব আদায়কে সম্পূর্ণ ডিজিটাইজেশন করা গেলে ছয় বছরের মধ্যে রাজস্ব-জিডিপির অনুপাতের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হবে বলে এক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপনায় জানিয়েছেন সংস্থাটির সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
গতকাল রবিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সিপিডি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন যৌথভাবে আয়োজিত ‘ডিজিটাইজেশন অব দ্য বাংলাদেশ ট্যাক্স সিস্টেম : দ্য নেক্সট ফ্রন্টিয়ার ফর হায়ার রিসোর্স মবিলাইজেশন’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় এসব কথা বলেন মোস্তাফিজুর রহমান। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রাজস্ব আদায়ে সমন্বিতভাবে সম্পূর্ণ ডিজিটাইজেশন করা গেলে ২০৩০ সালে ৭৭ বিলিয়ন বা ৯ লাখ পাঁচ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১১৭.৬২ টাকা হিসাবে) বছরে অতিরিক্ত রাজস্ব আসবে। এতে মোট রাজস্ব ১৬৭ বিলিয়ন বা ১৯ লাখ ৬৪ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা আদায় করা যাবে। তখন কর জিডিপির অনুপাত ১৬ শতাংশে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, রাজস্ব আদায়ে বাধ্যতামূলক ই-ফাইলিংয়ের ব্যবস্থা করা হলে জিডিপির ৫ শতাংশ বাড়বে।
ই-ফাইলিং হলে চার বছর পরে বার্ষিক ৩২.৬ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করা যাবে। দেশের ২৫ শতাংশ কর প্রদান অনলাইনের মাধ্যমে করা হলে জিডিপির কর অনুপাত বাড়বে ১.২ শতাংশ।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, রাজস্ব আহরণের জন্য করদাতাকে সেবার মাধ্যমে পুরস্কৃত করতে হবে। রাজস্ব বৃদ্ধি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনার ডিজিটাইজেশনে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা রয়েছে।
আগামী বাজেটে রাজস্ব আদায়ে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
ক্যাশলেস সোসাইটি গড়ার কথা ওঠায় অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যদি বড় ব্যবসায়ীরা ক্যাশে লেনদেন করতে চান, তবে আমরা কিভাবে ক্যাশলেস ইকোনমিতে পরিণত হব?’
সম্মানিত অতিথি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এনবিআরের কার্যক্রমের ওপর এক উপস্থাপনায় বলেন, ‘রাজস্ব আয় বাড়াতে অটোমেশন করতে হবে। এ জন্য এরই মধ্যে বেশ কিছু কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সম্পূর্ণ ব্যবস্থা ডিজিটাইজেশনের পরিকল্পনা এনবিআরের আছে। ভবিষ্যতে করপোরেট ট্যাক্স অনলাইনে নিয়ে আসতে চাই।
পাশাপাশি ভ্যাট আদায় বাড়াতে ক্রেতা ইনভয়েস নিলে ক্যাশ ব্যাক পাবেন এমন পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা আছে।’
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাজেটে যখন রাজস্ব আদায়ের টার্গেট দেওয়া হয় তখন অসহায় এনবিআর। মন্ত্রণালয় আগের বছরের অর্জন হিসাবে না এনে কেবল টার্গেট থেকে পরের বছরে নতুন টার্গেট বাড়িয়ে দেয়। ফলে অন্য উদ্ভাবনী পরিকল্পনা বা চিন্তার সুযোগ থাকে না।
সিপিডির সিনিয়র ফেলো মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজস্ব বাজেটে কোনো উদ্বৃত্ত নেই। এর ফলে দিন যত যাবে আমাদের পরনির্ভরশীলতা তত বাড়বে। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হলে ঋণের সুদহার অনেক বেড়ে যাবে। এ অবস্থায় রাজস্ব-জিডিপির অনুপাত না বাড়ালে বড় রকমের সমস্যা সৃষ্টি হবে। তবে রাজস্ব-জিডিপির অনুপাত বাড়ালে এক টাকাও বিদেশি ঋণ নিতে হবে না।’
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সম্ভাব্য করদাতাদের বিশ্বাসের ঘাটতি রয়েছে। ডিজিটাইজেশন এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। যাতে মানুষের সংশ্রব থাকবে না। এতে স্বচ্ছতা ও ন্যয্যতা নিশ্চিত করতে হবে। সংস্কার যদি বিচ্ছিন্নভাবে হয় তাহলে রাজস্ব আয় বাড়বে না।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মুসলিম চৌধুরী, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন, সাবেক সদস্য আলমগীর হোসেনসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।