ঈদকে সামনে রেখে বাটিকের গ্রাম হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার বান্টি এলাকায় কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন বাটিক কাপড়ের ব্যবসায়ী ও কারিগররা।
সম্প্রতি বান্টি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের রাস্তাঘাট, মাঠ সব জায়গায় উড়ছে রং-বেরঙের কাপড়। বান্টি এলাকায় ঘরে ঘরে তৈরি হয় বাটিক কাপড়। সাদা কাপড়ে বাটিকের নকশা করছে শত শত মানুষ।
হাজার হাজার পোশাকে বাটিক প্রিন্টের কারুকাজ করছেন কারিগররা। কেউ কেউ কাপড়ে দেওয়ার জন্য রং মেশানোর কাজ করছেন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত। ফ্যাশনপ্রিয়দের কথা মাথায় রেখে কাপড়ে ভিন্ন ভিন্ন নকশা দেন একেকজন কারিগর। নকশাগুলো ঢেকে দেওয়া হয় মোম দিয়ে। কেউ কেউ গরম পানি দিয়ে সেই মোম গলানোর কাজ করছেন। বাটিক করার পর কাপড়গুলো শুকানোর জন্য মাঠে ও ছাদে বিছিয়ে দেওয়া হয়। কড়া রোদে শুকানোর পর তা কারখানায় নিয়ে আসেন শ্রমিকরা। এরপর কারখানায় কাপড়গুলো ভাঁজ করা হয়। যাঁরা এখানে কাজ করেন, তাঁরা সবাই পারিবারিকভাবে এ কাজে জড়িত।
গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, বান্টি গ্রামের প্রায় সবাই এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এলাকার শ্রমিক দিয়েই কাজ করানো হয়।
বাটিকশিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী আলম মিয়া বলেন, ‘গরমকালে বাটিকের চাহিদা বাড়ে। আর এই পোশাক পরতেও আরামদায়ক।
চাহিদা থাকায় একসময় লাভজনক ছিল বাটিকের ব্যবসা। তবে বর্তমানে সুতা, রং ও কেমিক্যালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাটিকের ব্যবসা আর আগের মতো নেই। তাই অনেকে অন্য ব্যবসা খুঁজছেন।’
কাপড় ব্যবসায়ীরা জানান, বাটিক, থ্রি-পিসসহ বাটিক কাপড়ের রাজধানী বান্টি বাজার। বান্টি বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ৪৫ বছর আগে এ এলাকায় বাটিকশিল্পের কাজ শুরু হয়। আবহাওয়াজনিত কারণে এবারের ঈদে সুতি কাপড়ের প্রতিই মানুষের আগ্রহ বেশি। তাই সুতি কাপড়ে বাটিকের কাজ করছেন এখানকার কারিগররা। বাটিকশিল্প ঘিরে বান্টি এলাকায় গড়ে উঠেছে বিশাল মোকাম। বান্টি এলাকায় বর্তমানে এক হাজার ৭০০ বাটিকের শোরুম রয়েছে।
দোকান মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুক্রবার বাটিকের মোকামে বেশি বিক্রি হয়। এখানকার প্রায় এক হাজার ৭০০টি দোকানে এদিন গড়ে সাড়ে তিন লাখ টাকার কাপড় বিক্রি হয়। শুক্রবার ছাড়া অন্য দিনগুলোতে বিক্রি হয় গড়ে ৬০ হাজার টাকা। এ হিসাবে বছরে এখানে এক হাজার ৮০০ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। এবারের ঈদে প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাপড় বিক্রির লক্ষ্য রয়েছে ব্যবসায়ীদের।
মদিনা বাটিক হাউসের মালিক ওমর কাজী জানান, এ গ্রাম থেকে বাটিকের কাপড় ঢাকাসহ দেশের বহু এলাকায় যায়। বান্টির বাটিক দেশ ছাপিয়ে মধ্যপ্রাচ্যেও যাচ্ছে। সৌদি আরব, দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারত, নেপালসহ বিভিন্ন দেশে বাটিকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।