এডিস মশা নিধনে কর্মপরিকল্পনা নিতে সব জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, সারা দেশে মশা নিধনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত অন্যান্য রোগ প্রতিরোধের লক্ষ্যে সিটি করপোরেশনসহ সারা দেশে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
গতকাল রবিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এসব তথ্য জানান।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে তিনি আরো বলেন, ২০২১ সালে ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে জাতীয় নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। নির্দেশিকায় সিটি করপোরেশন থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত সব অংশীজনের বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা এবং দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। ডেঙ্গুসহ অন্যান্য মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে জাতীয় নির্দেশিকা অনুযায়ী জেলা কমিটির জরুরি সভা আয়োজনসহ এডিস মশা নিধনে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের জন্য সব জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী, সব জেলা থেকে কর্মপরিকল্পনা পাওয়া গেছে।
মন্ত্রী জানান, ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ বিষয়ক জাতীয় কমিটি এবং এসংক্রান্ত অন্যান্য কমিটির সভায় কর্মপরিকল্পনাগুলো নিয়মিত আলোচনা করা হয়। জেলা পর্যায়ে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে গৃহীত কার্যক্রম পরিচালক ও উপপরিচালকরা (স্থানীয় সরকার) সমন্বয় ও মনিটর করেন। এ ছাড়া মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশের সব ব্যাংক, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস ও আবাসিক এলাকা এবং এর চারপাশের পরিবেশ নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাসহ দেশের সব সিটি করপোরেশন, বিভাগ, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সারা বছর পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
একই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বর্তমান অর্থবছরে স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালন বাজেটের আওতায় ‘ডেঙ্গু মোকাবেলা, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও প্রচার’ খাতে সিটি করপোরেশনগুলোর অনুকূলে ৪০ কোটি টাকা এবং পৌরসভাগুলোর অনুকূলে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনা ও চারপাশের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাসহ সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজের খুতবার সময় মসজিদে ইমামদের মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগ সম্পর্কে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র যাতে তৈরি হতে না পারে, সে জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় ২০১৯ সাল থেকে সারা দেশে পরিচ্ছন্ন গ্রাম-পরিচ্ছন্ন শহর কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় বিভাগের মাধ্যমে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি পরিচ্ছন্ন গ্রাম-পরিচ্ছন্ন শহর কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে।
আর্সেনিকমুক্ত পানির উৎস স্থাপন করা হবে
সরকারি দলের মো. মামুনুর রশীদ কিরনের প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, আর্সেনিকমুক্ত পানি সরবরাহের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ২০২৫ সালের মধ্যে গ্রামাঞ্চলে প্রায় ১০ লাখ ৬৫ হাজার আর্সেনিকমুক্ত পানির উৎস স্থাপন করা হবে। এ ক্ষেত্রে গভীর নলকূপ ছাড়াও পাইপের মাধ্যমে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, বৃষ্টির পানির সংরক্ষণ ব্যবস্থা এবং পুকুর খনন ও পুনঃখননসহ সৌরচালিত পন্ড স্যান্ড ফিল্টার স্থাপন করা হবে। বর্তমানে যারা আর্সেনিক ঝুঁকিতে রয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যে তাদের ৫-৬ শতাংশে নেমে আসবে।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও ইউনিসেফের যৌথ জরিপ প্রতিবেদন মাল্টিপল ইনডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার ১১ শতাংশ আর্সেনিক দূষণের ঝুঁকিতে রয়েছে।