মীরা রূপা হিমুদের হাতে রংবেরঙের ফুল। ফুল নিয়ে দলে দলে প্রবেশ করছেন ভক্ত-শুভানুধ্যায়ীরাও। কেউ সমাধিতে ফুল রেখে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন, কেউ অশ্রুসিক্ত চোখে দুই হাত তুলে মোনাজাত করছেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তাঁদেরকে দল বেঁধে ঘুরতে দেখা গেছে সবুজ চত্বর, ঔষধি গাছের বাগান, বৃষ্টি বিলাস, ভূত বিলাস, লীলাবতী দিঘি, মৎস্যকুমারী লেকে।
গতকাল শনিবার সকালে এমন দৃশ্য দেখা গেছে দেশের জনপ্রিয় লেখক, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর সমাধিস্থল গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে।
সকাল থেকেই গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী গ্রামে নুহাশপল্লীতে ভক্তদের সমাগম ঘটতে থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুল হাতে শ্রদ্ধা জানাতে আসা ভক্ত, কবি, লেখক, প্রকাশক আর নাট্যজনদের ভিড়ও বাড়তে থাকে। হলুদ পাঞ্জাবি গায়ে খালি পায়ে হিমু ও নীল শাড়িতে সেজে আসেন মীরা-রূপারাও।
ফুলেল ভালোবাসায় স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন হিমু পরিবহনের সদস্যরাও।
রূপা সেজে হিমু পরিবহনের সঙ্গে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুর্শিদা খন্দকার রূপা বলেন, ‘স্যারের গল্প, উপন্যাস, নাটক, সিনেমা সবগুলোতেই নুহাশপল্লীর দৃশ্য ও বিভিন্ন স্থান যেমন—বৃষ্টি বিলাস, ভূত বিলাস, লীলাবতী দিঘি এসবের বর্ণনা রয়েছে। এখানে এলে এসব খুঁজে পাই।’
হিমু পরিবহন গাজীপুরের সদস্য আফরিনা তানজিন ঊর্মি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই একজন হিমু, মীরা বা রূপা রয়েছে।
স্যারের সকল লেখা আমাদের সব সময়ের অনুপ্রেরণার উৎস’।
নন্দিত লেখকের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে অন্য প্রকাশের প্রধান নির্বাহী মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘স্যার নেই ১৩ বছর। কিন্তু তাঁর বইয়ের চাহিদা এখনো আগের মতোই অটুট। গত বইমেলা এবং তার আগের মেলায়ও বিক্রির শীর্ষে ছিল স্যারের বই।’
প্রতিবছর মৃত্যুবার্ষিকীতে নুহাশপল্লীতে পরিবারের লোকজন ও ভক্ত-শুভানুধ্যায়ীরা হুমায়ূন আহমেদকে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় স্মরণ করেন।
শ্রদ্ধা জানাতে দুই পুত্র নিষাদ-নিনিতকে নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে নুহাশপল্লীতে আসেন হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন। শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নুহাশপল্লীর কর্মচারী, এতিম শিশু ও ভক্ত-শুভানুধ্যায়ী এবং দুই ছেলেকে নিয়ে লেখকের কবর জিয়ারত, পুষ্পস্তবক অর্পণ ও মোনাজাতে অংশ নেন তিনি। এ উপলক্ষে নুহাশপল্লীতে কোরআনখানি ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
কেন্দুয়ায় হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত : হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালন করা হয়েছে।
গতকাল দিনব্যাপী হুমায়ূন আহমেদের পিতৃভূমি উপজেলার রোয়াইলবাড়ী ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এসব কর্মসূচির আয়োজন করে। আলোচনাসভায় শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামানের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়টির সহকারী প্রধান শিক্ষক শরীফ আনিস আহমেদ, ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা, বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও হুমায়ূনভক্তরা উপস্থিত ছিলেন।