<p>ছবিতে যে বস্তু দেখা যাচ্ছে তা হচ্ছে সেই লৌহ যুগের মানুষ ,মানে হলো গিয়ে ২৬০০ বছর আগের মানুষের মগজ। সেই হিসেবে বলা চলে এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচাইতে প্রাচীন অক্ষত মস্তিষ্ক। </p> <p>এই বস্তু ইয়র্ক আর্কিওলজিকাল ট্রাস্ট এর গবেষকেরা ২০০৮ সালে ইংল্যান্ডের উত্তরে ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের হেসলিংটন ক্যাম্পাসে খনন কার্জক্রমের সময় আবিস্কার করেন। </p> <p>খনন কার্জক্রম চালানোর সময় একটা গর্তে মানুষের শরীরের কিছু অংশ পাওয়া যায়, তার মাঝে ছিলো করোটি, চোয়ালের হাঁড় বা ম্যান্ডিবল আর ঘাড়ের লোয়ার সার্ভাইকাল ভার্ট্রিব্রা। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, ওই গর্তে এর বাইরে গোটা শরীরের আর কোন অংশই পাওয়া যায়নি। পরে বিচার বিশ্লেষণে করে জানা যায় যে ওইসব হাঁড়গোড় মধ্যবয়স্ক একজন পুরুষ মানুষের। করোটির হাঁড়ের জোড়া বা ক্রেনিয়াল সুচার এবং দাঁতের অবস্থা দেখে ধারণা করা হয় যে ঐ করোটির মালিকের মৃত্যুর সময় বয়স ছিল ২৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সের মধ্যে। </p> <p>কার্বন ডেটিংয়ের মাধ্যমে আবার জানা গিয়েছে, ভদ্রলোক মৃত্যুবরণ করেছেন ৬৭৩ থেকে ৪৮২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। ঘাড়ের কশেরুকা বা ভার্টিব্রায় আঘাতের চিহ্ন ও তার ধরন দেখে আবার অনুমান করা হয়েছে যে ভদ্রলোকের মৃত্যু হয়েছে মেরুদণ্ড ভাঙার কারণে এবং সেই মেরুদন্ড ভাঙার কারন ফাঁসী! ফাঁসীতে মৃত্যুর পর খুব দ্রুত ধারালো কিছু দিয়ে শরীর থেকে মাথা আলাদা করে ফেলা হয়েছিল। </p> <figure class="image"><img alt="মানুষের সবচেয়ে প্রাচীন মগজ" height="450" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/online/2024/04/29/my1182/440186494_10231959235354579_7830005048925924152_n.jpg" width="600" /> <figcaption>মানুষের সবচেয়ে প্রাচীন মগজ</figcaption> </figure> <p>পুরো বিষয়টা দেখে প্রত্নতত্ববিদদের মোটামুটি স্পষ্ট একটা বিশ্বাস হয়েছে যে মানুষটাকে ধর্মীয় কোন উপাচারে হত্যা করা হয়েছিল। গোটা ব্যাপারটায় সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং যে বিষয়, তা হচ্ছে করোটির ভেতর মস্তিষ্কের একটা অংশ প্রায় নিখুঁতভাবে সংরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া গেছে। ব্র‍্যাডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকড. সোনিয়া ও কনোর পরে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘প্রথমে আমরা ভেবেছি আর দশটা যেমন হাঁড়গোড় পাওয়া যায়, এও সেরকম কিছু। আশপাশের ধূলো ময়লা পরিস্কার করার পরেই দেখা গেলো খুলির ভেতরটা ফাঁপা নয়, মগজের মতো হলুদ কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে।’</p> <p>রয়ে যাওয়া মগজের বায়োকেমিক্যাল অ্যানালাইসিস করা হয়েছে। মৃত্যুর পর সাধারণত মস্তিষ্কের টিস্যু শরীরের অন্যান্য অংশের চাইতে দ্রুত নষ্ট হয়।</p> <p>এই মৃতদেহের ক্ষেত্রে একটা অদ্ভুত কাজ করা হয়েছিলো। মৃত্যুর পরপরই শরীরবিহীন শুধু মাথাটাকে ভেজা কাদামাটি দিয়ে সীল করে কবর দেয়া হয়েছিলো। ভেজা কাদামাটির রাসায়নিক গুনের কারণে মস্তিষ্কের অভ্যন্তরস্থ ফ্যাট এবং প্রোটিন একসাথে মিলে একাকার হয়ে গেলো। মস্তিষ্ক চুপষে গেলো প্রায় ২০ শতাংশের মতো। চুপষে গেলেও এর আকার এবং মাইক্রোস্কোপিক নানান অংশ ছিলো অক্ষত।</p> <p>জ্যান্ত মানুষের মস্তিষ্কে আমরা একটা বিষয় দেখি। প্রোটিন অ্যাগ্রিগেশন। প্রোটিনের অণুরা ভাঁজ এবং একত্রিত হয়ে এই অ্যাগ্রিগেশন হয়। সাধারণত স্মৃতিভ্রংশ রোগীদের মস্তিষ্কের কোষের ভেতরকার প্রোটিনে ওরকম অ্যাগ্রিগেশন পাওয়া যায়। এই মস্তিষ্কের কোষেও প্রোটিনের ওরকম অবস্থা পাওয়া গেছে। পাওয়া এই মস্তিষ্কের নাম দেয়া হয়েছে, ‘দ্য ব্রেইন অফ হেসলিংটন।’</p> <p>দূর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, আমরা কখনো জানতে পারবো না, এই মানুষটা কে ছিলো। শুধুমাত্র এর মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ এর পরিচয় পাওয়া গিয়েছে। এই ভদ্রলোকের ডিএনএ মাইটোকন্ড্রিয়াতে জে-ওয়ান হ্যাপ্লোগ্রুপ পাওয়া গিয়েছে। একই হ্যাপ্লোগ্রুপ পাওয়া গিয়েছে মধ্যপ্রাচ্য আর তাসকানির কিছু প্রাচীন মানব দেহাবশেষ এর মাঝে। এই হ্যাপ্লোগ্রুপ সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ধারণা হচ্ছে, এই গ্রুপটা সম্ভবত ব্রিটেনেও প্রাচীন সময়ে ছিল, কিন্তু জিনেটিক ড্রিফটের কারণে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।</p> <p>এই হেসলিংটন ব্রেইন হচ্ছে পৃথিবীতে টিকে যাওয়া মানুষের মস্তিষ্ক হিসেবে সবচাইতে প্রাচীন। বর্তমানে লন্ডনের সায়েন্স মিউজিয়ামে এই মস্তিষ্ক সংরক্ষিত রয়েছে।</p> <p>লেখক: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী গবেষক ও  লেখক<br /> সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক<br />  </p>
