বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে রাজধানীর নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকায় গত শনিবার সংঘর্ষ চলাকালে আহত সাংবাদিক রফিক ভূঁইয়া মারা গেছেন।
রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল রবিবার তাঁর মৃত্যু হয়। এ ছাড়া সংঘর্ষের সময় আহত ২৫ সাংবাদিক বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁদের মধ্যে ১৩ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।
জানা গেছে, শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে যাওয়ার সময় সেগুনবাগিচা এলাকায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পুরনো ভবনের কাছে বিএনপি নেতাকর্মী ও পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন রফিক। এ সময় তাঁর রিকশা উল্টে রাস্তায় ছিটকে পড়েন তিনি। পরে তাঁকে উদ্ধার করে বারডেম হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনি ডিইউজে ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের যথাক্রমে স্থায়ী ও সিনিয়র সদস্য ছিলেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দৈনিক কালবেলার প্রতিবেদক রাফসান জানি বলেন, নাইটিঙ্গেল মোড়ে পুলিশের দুই সদস্য ও একজন আনসার সদস্যকে বিএনপির নেতাকর্মীরা মারধর করতে থাকেন। এ সময় তিনি কোনো ছবি বা ভিডিও না করলেও কালবেলার আইডি কার্ড দেখে কয়েকজন এসে তাঁকে পেটাতে থাকেন। পরে গণমাধ্যমের সহকর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
এ ছাড়া সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর আহত ঢাকা টাইমসের প্রতিবেদক সিরাজুম সালেকীন বলেন, তাঁর একটি পা ভেঙে গেছে।
তাঁকে চিকিৎসার জন্য জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে নেওয়া হয়েছে।
কাকরাইল তাবলিগ মসজিদ মোড়ে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে লাইভ করার সময় বিএনপির নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হন ইত্তেফাক মাল্টিমিডিয়ার রিপোর্টার শেখ নাছের। তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ছাড়া নিউ এজ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি আহমেদ ফয়েজ, গ্রিন টিভির বিশেষ প্রতিনিধি রুদ্র সাইফুল্লাহ ও ক্যামেরাম্যান আরজু, ব্রেকিং নিউজের কাজী ইহসান বিন দিদার, বাংলানিউজের জাফর আহমেদসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দৈনিক ইত্তেফাকের তিন সাংবাদিকসহ ১০ জন আহত হয়েছেন।
এসব ঘটনায় জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘এ ধরনের হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। হামলার ঘটনায় সাংবাদিকরা চাইলে মামলা করতে পারেন। আপনাদের আইনগত সহযোগিতা করা হবে।’
বিএনপিকে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম
সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের কাছে সোপর্দ করতে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেন সাংবাদিক নেতারা।
সম্পাদক পরিষদ
সাংবাদিকদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়ে উদ্বেগ ও হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। গতকাল সম্পাদক পরিষদের পক্ষে এর সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ এক যৌথ বিবৃতিতে ওই উদ্বেগ জানান।
বিবৃতিতে সম্পাদক পরিষদ বলেছে, সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব পালনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচির খবর সংগ্রহ করেন এবং জনগণের সামনে তা উপস্থাপন করেন। কিন্তু এ দায়িত্ব পালনে তাঁদের ওপর আক্রমণ বা নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়া খুবই উদ্বেগের।