মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের কালিছালি আশ্রয়ণ প্রকল্পে থাকতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন ভূমিহীন মানুষ। গত তিন বছরে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৭৭টি ঘর নির্মাণ করা হলেও মাত্র ৮৪টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ১৯৩ ঘরে তালা ঝুলছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হস্তান্তরকৃত ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলেও কেউ ওঠেনি।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোতে বিদ্যুতের তার টানা হলেও মিটার সংযোগ হয়নি। যেসব ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল, সেগুলোও বকেয়া বিলের জন্য কেটে দিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। অন্যদিকে ঘরের চাবি ও কাগজপত্র নেওয়ার পরও বেশির ভাগ পরিবারই তাদের ঘরে ওঠেনি। আবার অনেক উপকারভোগীর নিজ নামে ঘর বরাদ্দ থাকলেও সেখানে বসবাস করতে পারছেন না। অন্য ঘরে থাকছেন।
তবে যাঁরা ঘরে ওঠেননি তাঁদের দাবি, যে জায়গায় ঘর দেওয়া হয়েছে এর পাঁচ-ছয় কিলোমিটারের মধ্যে কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে কালিছালি আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় দেখা যায়, ৮৪টি ঘর ভূমিহীনদের মাঝে হস্তান্তর করা হলেও বাস্তবে ৩০টি ঘরে বসবাস করছেন উপকারভোগীরা। বাকি ৫৪টি ঘরেই তালা ঝুলছে।
তালাগুলোতেও জং ধরেছে। বেশির ভাগ ঘরে বৈদ্যুতিক তার টানা হলেও, এখনো হয়নি মিটার সংযোগ। মিটার সংযোগহীন ঘরে অনেকেই বসবাস করছেন। আবার বিদ্যুৎ সংযোগ থাকা ঘরটিও তালা মারা। কেউ বরাদ্দ পাননি। আশ্রয়ণ এলাকার সড়কধার ও ঘরগুলোর আশপাশে রাতে বাতির কোনো ব্যবস্থা না থাকায় সন্ধ্যা হলেই এলাকায় তৈরি হয় ভূতুড়ে পরিবেশ। এ ছাড়া প্রকল্পে বসবাসকারীদের জন্য পাঁচটি পানীয় জলের নলকূপ নির্মাণ হলেও, সচল আছে দুটি। এতে খাবার পানি সংগ্রহ ও গোসলের সমস্যায় ভুগছেন উপকারভোগীরা। ঘরগুলো পাশাপাশি হওয়ায় বৃষ্টিতে পানি জমে থাকে ঘরের সম্মুখে। অনেকের ঘরের সঙ্গে বৈদ্যুতিক মিটারের মিলও নেই। ফলে উপকারভোগীরা একজনের মিটারের বিল অন্যজন দিচ্ছে।
প্রকল্পের বাসিন্দা আব্দুল জব্বার ও হালিমা বেগম বলেন, ‘এখানে আমাদের পানির খুব সমস্যা। মাত্র দুটি স্থানে অগভীর নলকূপ বসিয়ে খাবার ও গোসলের পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার পরও আমরা কষ্ট করে থাকি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো গোসলখানার চারপাশ খোলামেলা।’
রফিক মিয়া ও শ্যামা বেগম নামের দুই বাসিন্দা বলেন, ‘রমজানের আগে এখানে পাওয়া ঘরে উঠেছি। ঘর তো পাইছি, কিন্তু বিদ্যুৎ নেই। রাতের বেলা অন্ধকারে থাকতে হয়। দিনের বেলাও অসহ্য গরমে পরিবারের সবাইকে নিয়ে কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে। কষ্টের কারণেই অনেক পরিবার এখান থেকে চলে যাচ্ছে।’
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মীর গোলাম ফারুক বলেন, ‘কালিছালি আশ্রয়ণ প্রকল্পে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৩৮টি ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করায় ২৭টি ঘরের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।’
উপজেলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের সদস্যসচিব ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রইছ আল রিজুয়ান বলেন, ‘কালিছালি এলাকায় ২৭৭টি ঘর নির্মাণ করা হলেও প্রথম ও তৃতীয় পর্যায়ের উপকারভোগীদের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় চেয়ারম্যানরা উপকারভোগী নির্বাচনে বিলম্ব করায় ঘরগুলো খালি পড়ে আছে। এ ছাড়া বরাদ্দকৃত ঘরেও কেউ থাকতে চাচ্ছেন না।’
কমলগঞ্জ আশ্রয়ণ প্রকল্প সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত উদ্দিন বলেন, ‘কালিছালি আশ্রয়ণ এলাকাটি দুর্গম হওয়ার কারণে অনেকে সেখানে বসবাস করতে চাচ্ছেন না।’