ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার বনপাড়া আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ইমদাদুল হকের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতিসহ নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা হাসান।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, অধ্যক্ষ ইমদাদুল হক দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে তাঁর ১১ জন স্বজনকে বনপাড়া আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিভিন্ন পদে চাকরি দিয়েছেন।
তাঁদের মধ্যে অধ্যক্ষের স্ত্রী ইসমতারা ও স্ত্রীর বড় ভাই মোস্তফা কামাল সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরি করছেন। তা ছাড়া ছেলে ইমরুল কায়েস ল্যাব সহকারী, ছোট বোন আয়শা খাতুন সহকারী শিক্ষক (কৃষি শিক্ষা), বোন জামাই আজিজুল হক সহকারী শিক্ষক (বাংলা), দুই ভাগ্নির মধ্যে শেফালী বেগম ল্যাব সহকারী, ঝর্ণা আক্তার অফিস সহায়ক, ভাগ্নি জামাই তরিকুল ইসলাম নৈশ প্রহরী, দুই ভাগ্নের মধ্যে আবু নাঈম পরিচ্ছন্নতাকর্মী, আসাদুজ্জামান শান্ত অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ও চাচাতো ভাই কামরুল ইসলামকে প্রভাষক (ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং) পদে নিয়োগ দিয়েছেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, চাকরি পাওয়া বেশ কয়েকজনের রয়েছে জাল সনদ ও ভুয়া শিক্ষক নিবন্ধন সার্টিফিকেট। উচ্চ পর্যায়ে সঠিক তদন্ত করলে তা বেরিয়ে আসবে।
প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের বনপাড়া গ্রামে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রথমে প্রতিষ্ঠানটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে এমপিওভুক্ত হয়। ২০২২ সালের ১ জুলাই উচ্চ মাধ্যমিকের স্তরে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
অধ্যক্ষের প্রতারণার শিকার পাশের ফুলপুর উপজেলার সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘ল্যাব সহকারী পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে আমার পরিবারের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা নিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ।
পরে অধ্যক্ষ ইমদাদুল হকের ছেলে ইমরুল কায়েসের সঙ্গে পারিবারিকভাবে আমার বিয়ে হয়। কলেজ শাখা এমপিওভুক্ত হওয়ার পর আমাকে কৌশলে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে একটি ভুয়া তালাকনামা আমাদের বাড়িতে পাঠায়। এ ঘটনায় ন্যায়বিচার চেয়ে গত বছরের আগস্টে অধ্যক্ষ ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে পৃথকভাবে আদালতে মামলা করি। বর্তমানে মামলা আদালতে চলমান। আমার কাছে অধ্যক্ষ স্বাক্ষরিত প্রতিষ্ঠানের নিয়োগপত্র ও যোগদানপত্র রয়েছে। আমি আমার স্বামী ও চাকরি ফেরত চাই। একই সঙ্গে ওই প্রতারক অধ্যক্ষের শাস্তি চাই।’
ভুক্তভোগী মোহাম্মদ শরিফুল আলম বলেন, ‘২০১৪ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানের কলেজ শাখায় আমি নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের কথা বলে আমার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন অধ্যক্ষ। কিন্তু গত বছর কলেজ শাখা এমপিওভুক্ত হওয়ার পর আমি জানতে পারি, আমাকে প্রতিষ্ঠান থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আমার স্থলে অন্য এক নারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমি চাকরি ফিরে পাওয়ার আশায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ শিক্ষা অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’
অপর ভুক্তভোগী শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হওয়ার পর আমার অগোচরে অন্য এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় আমি আদালতে মামলা করেছি। অধ্যক্ষ ওই প্রতিষ্ঠানকে তাঁর পৈতৃক সম্পত্তি বানিয়ে নিয়েছেন।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ইমদাদুল হক বলেন, ‘নিয়োগ বিধি ও যোগ্যতা অনুযায়ী আমার আত্মীয়-স্বজনরা চাকরি পেয়েছেন। নিয়োগসংক্রান্ত ছেলের বউয়ের করা মামলার বিষয়টি এরই মধ্যে মীমাংসা করা হয়েছে। কারো কাছ থেকে কোনো প্রকার অর্থ নেওয়া হয়নি। অভিযোগের বিষয়টি একেবারেই ভিত্তিহীন।’
বনপাড়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, ‘যখন নিয়োগ হয়েছে, তখন আমি সভাপতির দায়িত্বে ছিলাম না।’
ইউএনও মাহমুদা হাসান বলেন, ‘অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমি এখনো তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাইনি। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’