চট্টগ্রামের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের কাছে থাকা অস্ত্রগুলো এখনো উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এ ব্যাপারে অনুসন্ধান চালিয়েও এসব অস্ত্রের খোঁজ পাওয়া যায়নি। অথচ পুলিশের কাছে সাজ্জাদ ও তাঁর সহযোগীদের কাছে ভারী অস্ত্র থাকার তথ্য রয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, একে-৪৭সহ অত্যাধুনিক এসব অস্ত্র তাহলে কোথায়?
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, ছোট সাজ্জাদের এসব অস্ত্রের উৎস পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা।
তাদের কাছ থেকে এসব অস্ত্র কিনেছেন সাজ্জাদ। অস্ত্র সংরক্ষণও করে পাহাড়িরা।
গত ১৫ মার্চ রাজধানীর একটি বিপণিকেন্দ্র থেকে গ্রেপ্তারের পর ছোট সাজ্জাদ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে পাঁচটি হত্যাসহ বহু অপরাধের অভিযোগে মামলা রয়েছে।
হত্যাকাণ্ড, চাঁদাবাজিসহ অপরাধমূলক নানা ঘটনার পর চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের এক ওসিকে নগ্ন করে পেটানোর হুমকি দিয়ে আলোচনায় আসা ছোট সাজ্জাদের অস্ত্রের ভাণ্ডার এখনো আড়ালে।
পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে, তাঁর ভাণ্ডারে একে-৪৭সহ অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে। সাজ্জাদ নিজে ব্যবহার করতেন আমেরিকায় তৈরি দামি পিস্তল। প্রায় ২৫ জন সহযোগী রয়েছে তাঁর।
তাদের প্রত্যেকের স্বাচ্ছন্দ্য অনুযায়ী বিভিন্ন মডেলের অস্ত্র সরবরাহ করা হতো। এসব অস্ত্র পাহাড়ের সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো থেকে সংগ্রহ করা হয় বলে জানান পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, সেনাবাহিনীর সহযোগিতা ছাড়া এসব অস্ত্র উদ্ধার প্রায় অসম্ভব।
সাজ্জাদ গ্রেপ্তার হলেন, বিভিন্ন মামলায় ২৭ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো, তবু তাঁর এসব অস্ত্রের হদিস মিলছে না কেন?
কালের কণ্ঠের এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিএমপির একজন উপকমিশনার জানান, ছোট সাজ্জাদের অস্ত্রের উৎস পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। তাঁর বাহিনীতে কমপক্ষে ২৫ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
তারা অস্ত্রবাজিতে দক্ষ। চট্টগ্রামে চাঁদাবাজি করতে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের থেকে তারা একে-৪৭সহ অত্যাধুনিক অস্ত্র কিনেছে। এসব অস্ত্র গহিন পাহাড়ে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, তাঁদের যে লজিস্টিক সাপোর্ট আছে, তা দিয়ে পাহাড়ে অভিযান পরিচালনা করা ঝুঁকিপূর্ণ।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি, ‘সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় যৌথ অভিযান’ ছাড়া ছোট সাজ্জাদের অস্ত্রভাণ্ডারে হাত দেওয়া এই মুহূর্তে ঝুঁকিপূর্ণ।” সাজ্জাদ তাঁর সহযোগীদের পাহাড়ে নিয়ে অস্ত্র চালনায় দক্ষ করে তুলেছেন বলেও জানান তিনি।
একই প্রশ্নের জবাবে সাজ্জাদের মামলা তদারকির দায়িত্বে থাকা একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘সাজ্জাদের বেশ কয়েকজন সহযোগীকে আমরা গ্রেপ্তার করতে পারলেও ভাগ্নে মোহাম্মদ, ইমনসহ একাধিক সন্ত্রাসী এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। অস্ত্রগুলো দুর্গম পাহাড়ে সংরক্ষিত বলে সাজ্জাদ নিজেও স্বীকার করেছে। তার সহযোগীরাও একই তথ্য দিয়েছে। অস্ত্র ব্যবহারের দরকার হলে তারা সেগুলো পাহাড় থেকে সমতলে নিয়ে আসে। অপরাধ ঘটিয়ে আবার পাহাড়ে ফেরত নেওয়া হয়। অস্ত্র আনা-নেওয়ার কাজে তার সহযোগী ছাড়াও পাহাড়ের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা কাজ করে। সব হিসাব-নিকাশ করে আমরা এগাব, অবশ্যই এগাব। অবৈধ অস্ত্র কারো হাতে থাকবে না।’
চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের মো. জামালের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন নগরীর বায়েজিদ, অক্সিজেন, চান্দগাঁও এলাকায় ‘ছোট সাজ্জাদ’ বা ‘বুড়ির নাতি’ হিসেবে পরিচিত। বায়েজিদ, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ এলাকায় আরো এক সাজ্জাদ রয়েছেন। তিনি বিদেশে পলাতক আরেক শীর্ষ সস্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী।
ছোট সাজ্জাদের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট রাতে বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে মাসুদ কায়সার ও মোহাম্মদ আনিসকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। ২১ অক্টোবর প্রকাশ্য দিবালোকে চান্দগাঁও থানার অদূরপাড়া এলাকায় ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন তাহসীনকে গুলি করে হত্যা করেন সাজ্জাদ।