দুই সন্তানকে জাপানি মা নাকানো এরিকোর জিম্মায় দেওয়ার রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফের করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন আদালত। একই সঙ্গে বিষয়টি আপসের মাধ্যমে সমাধানের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার জেলা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে উভয় পক্ষকে আপস করার জন্য বসতে বলেছেন। জাপানি মা ও বাংলাদেশি বাবার দুই সন্তান কোথায় থাকলে কল্যাণ হবে, সেদিক বিবেচনায় রেখে দুই পক্ষকে বিষয়টি সমাধানের পরামর্শ দেন তিনি।
সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক এর আগে শিশুদের আলাদা ডেকে কথাবার্তা শুনেছেন কি না, জানতে চেয়ে বিচারক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘শিশুরা কার সঙ্গে থাকবে, সে বিষয়ে একেক সময় একেক কথা বলবে। কিন্তু আপনারা কল্যাণের বিষয়টি দেখবেন। ন্যাচারাল ট্রেন্ড, ন্যাচারাল লর বিষয়টি আসল।’
আদালতে আপিলকারীর আইনজীবী নাসিমা আক্তার লাভলী, মো. নূরুল ইসলাম মিলন এবং বিবাদীপক্ষের আইনজীবী আহসানুল করিম ও শিশির মনির উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে দুই শিশুর হেফাজত ও অভিভাবকত্ব চেয়ে বাবার করা মামলা খারিজ করে রায় দেন আদালত। গত ২৯ জানুয়ারি ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান এ বিষয়ে রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আদালত বলেন, মায়ের জিম্মায় থাকবে দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা। একই সঙ্গে মেয়েদের নিয়ে জাপান যেতে পারবেন তাদের মা নাকানো এরিকো।
২০০৮ সালে জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকোর সঙ্গে বাংলাদেশি প্রকৌশলী ইমরান শরীফের বিয়ে হয়। দাম্পত্য কলহের জেরে ২০২০ সালের শুরুতে বিচ্ছেদের আবেদন করেন এরিকো। এরপর ইমরান স্কুলপড়ুয়া বড় দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। আর ছোট মেয়ে থেকে যায় জাপানে মা এরিকোর সঙ্গে।
তবে ওই দুই মেয়েকে জিম্মায় পেতে ২০২১ সালে বাংলাদেশে আসেন এই জাপানি নারী।
তিনি হাইকোর্টে রিট করলে তাঁদের সমঝোতায় আসতে বলেন বিচারক। তবে ওই দম্পতি সমঝোতায় না আসায় কয়েক মাস ধরে শুনানির পর হাইকোর্ট দুই সন্তানকে বাবার হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত দেন। পাশাপাশি মা যাতে সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে বাবাকে খরচ দিতে বলা হয়।
এরপর হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন নাকানো এরিকো। পরে আপিল বিভাগ এক আদেশে শিশু দুটিকে মায়ের জিম্মায় রাখার নির্দেশ দিলেও বাবা তা না মানায় বিচারকরা উষ্মা প্রকাশ করেন। পরে আদালত শিশু দুটিকে বাবার হেফাজত থেকে এনে তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং পরে মায়ের হেফাজতে দেওয়ার আদেশ দেন।
এরপর দুই মেয়ে কার জিম্মায় থাকবে তার নিষ্পত্তি পারিবারিক আদালতে হবে এবং তার আগ পর্যন্ত দুই শিশু তাদের মায়ের কাছেই থাকবে বলে সিদ্ধান্ত দেন আপিল বিভাগ। গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি এ আদেশ দেওয়া হয়।