প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করেছে। অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ করে কারা ক্ষমতায় যাবে, তার সিদ্ধান্ত নিতে জনগণকে ক্ষমতা দিয়েছে। তিনি বলেন, কে কোন দলের মেয়র সেটা দেখা হয়নি, তাঁর সরকার মানুষের জন্য কাজ করে।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল মঙ্গলবার তাঁর কার্যালয়ে রংপুর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আনার ফলে এবং দীর্ঘদিন ধরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার কারণে দেশে স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। তাই এখন কোনো অনির্বাচিত ব্যক্তি অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে পারছে না।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সংবিধান লঙ্ঘন করে ‘মার্শাল ল’ জারি করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকে সর্বোচ্চ আদালত অবৈধ ঘোষণা করেছেন। যার ফলে বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী এনে গণতন্ত্র সুসংহত করেছি। এই গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের শক্তিকে আরো দৃঢ় করা এবং ক্ষমতায় কে যাবে, না যাবে—জনগণই যেন তা নির্ধারণ করতে পারে তা নিশ্চিত করা।’
সরকারপ্রধান বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী আনার ফলে দেশে স্থিতিশীলতা এসেছে। দীর্ঘদিন গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে।
এখন আর অনির্বাচিত কেউ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করতে পারছে না। যদিও সেটা দেশের তথাকথিত একশ্রেণির বুদ্ধিজীবীর অন্তর্জ্বালার কারণ। তাঁরা কোনো দিন ভোটের জিততে পারবেন না। রাজনীতি করতে পারবেন না বা জনগণের মুখোমুখি দাঁড়ানোর মতো সাহস তাঁদের নেই। কোনোমতে ক্ষমতায় কিভাবে যাবেন তাই তাঁরা সব সময় এই গণতান্ত্রিক ধারা ব্যর্থ করার চেষ্টা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একুশ বছর পর ’৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদে সরকারে এসে আওয়ামী লীগ পাঁচ বছর দেশ পরিচালনার পর শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল। যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের একমাত্র ঘটনা। এ ছাড়া অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল, জরুরি অবস্থা জারি বা ‘মার্শাল ল’ নানা ধরনের ঘটনায় বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তনই হয়নি। তিনি বলেন, তাঁর সরকারের গত তিন মেয়াদের টানা শাসনের ফলে বাংলাদেশ বদলে গেছে। এ সময় নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রস্তাবে নির্বাচন পদ্ধতিতে সংস্কার, এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার বাদ দিয়ে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনে নির্বাচন কমিশন আইন পাসসহ নির্বাচন কমিশনের ব্যয় নির্বাহের বিষয়টাও স্বাধীন করে দেওয়া তাঁর সরকারের পদক্ষেপের উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
রংপুর সিটি করপোরেশনের আটটি প্রকল্পে মোট ১১৭৩.৮৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘কে কোন দলের মেয়র সেটা কিন্তু দেখিনি। আমরা কিন্তু মানুষের জন্যই কাজ করেছি। এটাই হলো বাস্তব কথা।’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে নির্বাচিত মেয়র এবং কাউন্সিলরদের অভিনন্দন জানিয়ে তাঁদের নিবেদিতপ্রাণ হয়ে দায়িত্ব পালনের আহবান জানান। জনগণ যাতে সরকারের সেবা পায়—তা নিশ্চিত করার জন্যই রংপুর বিভাগ করে দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর রংপুর সিটি করপোরেশন করে দিয়ে তাঁর সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পেরও একটি খতিয়ান তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী রংপুর সিটির নবনির্বাচিত মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে শপথবাক্য পাঠ করান এবং নবনির্বাচিত কাউন্সিলরদের শপথবাক্য পাঠ করান এলজিআরডি ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
গত ২৭ ডিসেম্বর রংপুর সিটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী মোস্তফা টানা দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র পদে জয়ী হন।