রেনু বেগম
মেয়েটির বয়স যখন চৌদ্দ, রাগ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। দিন, মাস, বছর, যুগ পার হলেও আর সন্ধান মেলেনি মেয়েটির। এ অবস্থায় একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে সন্ধান মেলে তাঁর। তত দিনে পার হয়ে গেছে ৩৪ বছর।
বিজ্ঞাপন
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ী ইউনিয়নের শ্রীফলতলা গ্রামের ইয়াকুব আলী (৯০) ও ফুল বানুর (৭০) মেয়ে রেনু বেগম (৫২)। গতকাল তাঁদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় প্রচুর প্রতিবেশীর জমায়েত। একজন মোবাইল হাতে নিয়ে ভিডিও কলে কথা বলছেন। তাঁকে ঘিরে রয়েছেন অনেকে।
জানা যায়, সকাল থেকে ভিডিও কলে যিনি অন্য পাশ থেকে কথা বলছেন, তিনি ৩৪ বছর আগে নিখোঁজ হওয়া রেনু বেগম। তাঁর সঙ্গে রয়েছে সন্তান ও নাতিরা। একবার হাসছেন, আবার কাঁদছেন। এ পাশে মা-বাবা, ভাই-বোনরা আবেগে আপ্লুত হয়ে নানা কথা বলছেন।
মা ফুলবানু হাহাকার করে বলছিলেন, ‘এই তো আমার রেনুর কপালে ছোড বেলায় পইর্যা যাওয়ার দাগডা। ’ বাবা ইয়াকুব আলী বলেন, ‘রেনু মায়া, আমি বাইচ্যা আছি তোর লাইগ্যা। তুমি আইয়া পরো। আমার বুকটা জুড়াইব। ’ অপর প্রান্ত থেকে রেনু উর্দুতে কথা বললেও মা-বাবার কাছে এ যেন অমূল্য কিছু পাওয়া।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, ইয়াকুব আলীর চার মেয়ে, তিন ছেলে। রেনু তৃতীয়। পড়াশোনায় মন না বসায় পরিবারের শাসন ও বকুনি খেয়ে রাগ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। সেটা ১৯৮৮ সালের কথা। দেশে তখন ভয়াবহ বন্যা। তার পরও থেমে থাকেনি মেয়ের সন্ধান। কিন্তু কোথাও তাঁকে পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি আঠারবাড়ী এলাকার আহাদুল ইসলাম নাঈম নামের এক তরুণের হোয়াটসঅ্যাপে সংযুক্ত হন পাকিস্তানের আনোয়ার হোসেন নামের আরেক তরুণ। এই দুজনের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে যোগাযোগও হচ্ছিল।
নাঈম জানান, ঈদের কয়েক দিন আগে আনোয়ার জানতে চান, তিনি বাংলাদেশের ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ী এলাকার কি না। হ্যাঁ-সূচক উত্তর পেয়ে আনোয়ার রেনু বেগমের বাবার নাম, ভাইদের নামসহ গুগল ম্যাপে বাড়িটি চিহ্নিত করে দেন। এই আনোয়ার হলেন রেনু বেগমের বড় ছেলে আসগর আলীর পুত্র।