কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে নিরাপত্তাহীন সাধারণ রোহিঙ্গার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। শিবিরগুলোতে মিয়ানমারের নিষিদ্ধ ঘোষিত ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)’ নামের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্যরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আরসার হুমকিতে নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকির মুখে থাকা কয়েক শ রোহিঙ্গাকে শিবির থেকে সরিয়ে নিরাপদ স্থান হিসেবে কুতুপালং ট্রানজিট শিবিরে রাখা হয়েছে।
এদিকে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত সংগঠন রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসসিএইচ) সভাপতি এবং আরসা সদস্যদের হাতে নিহত রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মহিব উল্লাহর পরিবার নিরাপত্তাহীনতার কারণে কানাডায় পাড়ি জমিয়েছে।
মহিব উল্লাহর স্ত্রী নাসিমা খাতুন তাঁর পাঁচ ছেলে, চার মেয়ে ও এক মেয়েজামাইকে নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে কানাডার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন।
ট্রানজিট শিবিরটিতে বর্তমানে ছয় শতাধিক রোহিঙ্গা রয়েছে। জানা গেছে, তাদের বেশির ভাগই শিবিরে আরসা সন্ত্রাসীদের হাতে খুন-গুমের শিকার হওয়ার ভয়ে থাকা নিরীহ রোহিঙ্গা। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের অতিরিক্ত শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার ও সরকারের উপসচিব মো. শামছুদ্দৌজা নয়ন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আকস্মিক বিপদের মুখে পড়া রোহিঙ্গাদের নিরাপদ স্থান হিসেবেই শিবিরটি করা হয়েছে।
এখানে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হয়ে থাকে।’
তিনি জানান, দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা অথবা অন্য কোনো দেশ থেকে আইডি কার্ডবিহীন রোহিঙ্গা যদি থাকে, তাদেরও এখানে রাখা হয় সাময়িকভাবে। মূলত ট্রানজিট শিবিরটি হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন নিরাপদ আশ্রয় স্থান। শিবিরটির নিরাপত্তায় তিন ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন।
তবে শিবিরগুলোতে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হুমকির কারণে কতসংখ্যক রোহিঙ্গা নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে, তার সঠিক সংখ্যা গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় জানাতে পারেননি এই সরকারি কর্মকর্তা।
একপ্রকার গোপনেই আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তায় মহিব উল্লাহর পরিবার বাংলাদেশ ছাড়ে। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা প্রশাসনের কোনো সরকারি কর্মকর্তাই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে রাজি নন। এমনকি আরসার সদস্যদের হাতে মুহিব উল্লাহ নিহত হওয়ার পর তাঁর পরিবারকে নিরাপত্তাহীনতার কারণে যেখানে রাখা হয়েছিল, সেখানকার লোকজনও বিষয়টি জানেন না। এক রোহিঙ্গা গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মহিব উল্লাহর পরিবারের সদস্যদের তিন দিন আগে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি।
এখনো তারা তাদের আশ্রয় নেওয়া বস্তিতে ফেরেনি।’
গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কুতুপালং শিবিরের নিজ অফিসে সশস্ত্র দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন রোহিঙ্গা নেতা মহিব উল্লাহ। পরে মহিব উল্লাহর ভাই হাবিবুল্লাহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন। পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডে আরসা জড়িত থাকার বিষয়টি। পরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী নিরাপত্তাজনিত কারণে মহিব উল্লাহর স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি, মামলার বাদী হাবিবুল্লাহসহ ছয়টি পরিবারের সদস্যদের সরিয়ে কুতুপালং ট্রানজিট শিবিরে রাখে।