রোপণ করা চারার পরিচর্যায় ব্যস্ত এক কৃষক। গত মঙ্গলবার রাজশাহীর পবা উপজেলার দারুসা এলাকায়। ছবি : কালের কণ্ঠ
চলতি মৌসুমে বোরো ধান চাষের জন্য মাঠে নেমে পড়েছেন রাজশাহীর কৃষকরা। কেউ এরই মধ্যে জমিতে ধানের চারা রোপণ শুরু করেছেন, কেউ জমি প্রস্তুত করছেন, কেউ বা এখনো বীজতলার পরিচর্যায় ব্যস্ত। কিন্তু গত কয়েক দিনে তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে বীজতলার ক্ষতি হচ্ছে। রোপণ করা চারার গোড়াও পচে যাচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
গত কয়েক দিনের তীব্র শীত ও মাঝারি কুয়াশায় অনেক কৃষকের বীজতলার ক্ষতি হয়েছে। ধানের চারা রক্ষায় কৃষকরা স্প্রে করছেন। তবে কৃষি অফিস বলছে, শীতে বীজতলার তেমন ক্ষতি হবে না। তাদের যুক্তি, বীজতলা ওপরে পলিথিন দিয়ে ঢাকা থাকে। কিন্তু বাস্তব চিত্র হচ্ছে—বেশির ভাগ কৃষকই এ পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করেন না। শীতে খোলা আকাশের নিচে যেসব বীজতলা রয়েছে, সেগুলো এরই মধ্যে ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। আবার যাঁরা এরই মধ্যে জমিতে ধানের চারা রোপণ করেছেন, তীব্র শীতে সেগুলোর মধ্যে কিছু জমির চারায় পচন ধরেছে বলে দাবি করেছেন কৃষকরা।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা উম্মে ছালমা জানান, এ বছর রাজশাহীতে ৬৬ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বীজতলার জমি তিন হাজার ৭৭৩ হেক্টর। এখন পর্যন্ত চার হাজার ৯২৯ হেক্টর জমিতে ধান রোপণ করা হয়েছে। বাকি জমি ধানচাষের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। তবে তীব্র শীতের কারণে গত কয়েক দিনে ধানের চারা রোপণের পরিমাণ কমে গেছে। কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘কুয়াশার কারণে বীজতলার তেমন ক্ষতি হবে না। পলিথিন দিয়ে বীজতলা কৃষকরা ঢেকে রাখেন। তাই কুয়াশা ও শীতের কারণে বীজতলার কোনো ক্ষতি হয়নি। ’
রাজশাহীর পবার কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কুয়াশা আর শীতের ভয়ে জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে সাহস পাচ্ছি না। আবার জমিতে থাকা চারা (বীজতলা) শীত আর কুয়াশায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চারা হলুদ হয়ে মরে যাচ্ছে। চারা রক্ষায় কীটনাশক স্প্রে করছি। কিন্তু তেমন কোনো সুফল পাচ্ছি না। চারা মরতে শুরু করলে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। ’
দুর্গাপুরের কৃষক জাবের আলী বলেন, ‘এরই মধ্যে কিছু জমিতে ধান লাগিয়েছি। এবার পাঁচ বিঘা জমিতে বোরো ধান লাগাব। কিন্তু শীতের কারণে বীজের ক্ষতি হচ্ছে। এ কারণে চিন্তায় আছি। কুয়াশা ও শীত না কাটা পর্যন্ত ধানের চারা জমিতে লাগিয়েও কোনো লাভ নেই। উল্টো শীতে চারার গোড়া পচে যাচ্ছে। অনেকের এই অবস্থা হয়েছে। এখন ওই সমস্ত জমিতে নতুন করে চারা লাগাতে হবে। ’
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র মতে, গত বছর রাজশাহীতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৬৫ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে। সেখানে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় দুই লাখ ৮৪ হাজার মেট্রিক টন ধান। এবার গত বছরের চেয়ে একটু বেশি জমিতে ধান চাষ করা হবে।