নীলফামারীতে তিস্তা নদী, কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা এবং গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই অবস্থা বগুড়ার যমুনা; রাজবাড়ী ও ফরিদপুরের পদ্মা নদীতে। রংপুরের গঙ্গাচড়ায় চরাঞ্চলে সৃষ্ট বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে আট হাজার পরিবার। আর ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় মধুমতী এবং চরভদ্রাসনে পদ্মায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
নদীর পানি বিপত্সীমার ওপরে, ভাঙনে দুর্ভোগ
- পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার পরিবার
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

নীলফামারী : গতকাল সকাল ৯টায় ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপত্সীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এর আগে সেখানে গত বুধবার বিকেল ৩টায় ওই পয়েন্টে বিপত্সীমার ৫৮ এবং বৃহস্পতিবার ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
তিস্তার পানি বিপত্সীমা অতিক্রম করায় ফের বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী ও গয়াবাড়ী ইউনিয়নের তিস্তা নদী বেষ্টিত ১৫ গ্রামের পাঁচ সহস্রাধিক পরিবার। চলতি বর্ষায় কয়েক দফায় এসব পরিবারের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় চরম ভোগান্তিতে আছে বাসিন্দারা।
শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে ব্যারাজের ভাটিতে ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের দক্ষিণ সোনাখুলি গ্রামে তিস্তার বাঁধে আশ্রিতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে দুর্ভোগের কথা। ওই বাঁধে আশ্রিতরা জানায়, ইউনিয়নের ভেণ্ডাবাড়ী গ্রামের গত রবিবার রাতে তিস্তার ২ নম্বর স্পার বাঁধটির দেড় শ মিটার ভেঙে পানি প্রবেশ করে লোকালয়ে। এ সময় ভেণ্ডাবাড়ীসহ ভাবনচুর, দক্ষিণ সোনাখুলি, ও কুটিপাড়া গুচ্ছগ্রামে (আশ্রয়ণ প্রকল্প) সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়।
রংপুর : ভারি বর্ষণসহ উজানের ঢলে নদীতে পানি বাড়ায় রংপুরের গঙ্গাচড়ায় চরাঞ্চলে সৃষ্ট বন্যায় আট হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে চাষাবাদকৃত আমন ক্ষেত।
আকস্মিক তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় নদপারের সাতটি ইউনিয়নের আট হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গত দেড় মাস ধরে দফায় দফায় তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে নদীভাঙনে নিঃস্ব পরিবারগুলোর দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। কোলকোন্দ ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব আলী রাজু জানান, সৃষ্ট বন্যায় বেড়িবাঁধ, পাকা রাস্তা ও ব্রিজ ভেঙে বিনবিনা এলাকায় লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। চরাঞ্চলের আবাদি জমি এখন নদীতে পরিণত হয়েছে। মটুকপুর, চিলাখালসহ তারা ইউনিয়নে দুই হাজার ৫০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলী, বাগেরহাট ও শংকরদহ এলাকাতেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এক হাজার ৫০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী। এ ছাড়া নোহালী, গঙ্গাচড়া সদর, গজঘণ্টা, আলমবিদিতর ও মর্নেয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন চরাঞ্চলে আরো চার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. জাকারিয়া সকালে তিস্তার পানি বৃদ্ধি ও বিকেলে পানি কমার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তাপারে আকস্মিক এ বন্যার সৃষ্টি হয়।
কুড়িগ্রাম : ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় কুড়িগ্রামে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গতকাল ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপত্সীমার ৫০ সেন্টিমিটার এবং ধরলার পানি বিপত্সীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। উলিপুর উপজেলার অনন্তপুর বাজারের কাছে বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে নতুন করে সাতটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার নাগেশ্বরী, সদর, উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলার তিন শতাধিক চরের প্রায় এক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, বন্যার পানিতে ২৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত রয়েছে।
গাইবান্ধা : গাইবান্ধার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। তবে আগের তুলনায় পানি শুক্রবার কম হারে বেড়েছে। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় বিকেল ৩টা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রের পানি এক সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপত্সীমার ৫১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং ঘাঘটের পানি এক সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপত্সীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
পানি বৃদ্ধিতে গাইবান্ধা সদর, সাঘাটা, ফুলছড়ি, ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ২৯টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের নিম্নাঞ্চল ও চর এলাকায় ৩২ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
ধুনট (বগুড়া) : সংস্কারকাজ শেষ না হতেই বগুড়ার ধুনটে যমুনার বাঁধ রক্ষায় নির্মিত বানিয়াজান স্পারের আরো পাঁচ মিটার অংশ ভেঙে বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। পানির তোড়ে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে চতুর্থ দফায় ভাঙন শুরু হয় এই স্পারে। এ নিয়ে স্পারের প্রায় ৮৫ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়েছে। ফলে ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ জনবসতি এলাকা।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, উপজেলার ভাণ্ডারবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব পাশ দিয়ে বহমান যমুনা নদীর ভাঙন ঠেকাতে ২০০৩ সালে ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে স্পরটি নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এর পর থেকে নদীর পানি অনেক দূর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ঝুঁকিমুক্তি ছিল স্পারটি, কিন্তু নদীর বুকে ডুবুচর জেগে ওঠায় গেল ৫ আগস্ট পানির তোড়ে ভেঙে যায় স্পারের ২০মিটার অংশ। পানি উন্নয়ন বোর্ড সেখানে শুরু করে মেরামতকাজ। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার চতুর্থ দফায় স্পারের ৮৫ মিটার অংশ বিলীন হয়েছে। তবে এই ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
এতে স্পারের অগ্রভাগের ঢালাই করা অংশ থেকে মাটির তৈরি অংশ আলাদা হয়েছে। স্পারের ওপরের অংশ পুরোটাই নদীতে বিলীন হয়ে ভাঙনের ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঢালাই করা অংশ। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে স্রোত বেড়ে গেলে স্পারের অগ্রভাগের অংশ নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।
ফরিদপুর : জেলার পদ্মা, মধুমতী, কুমার, আড়িয়াল খাঁসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বেড়েই চলেছে। গতকাল শুক্রবার বিপত্সীমার ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ জানান, পদ্মায় গোয়ালন্দ পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর পানি আট সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে তা বিপত্সীমার ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার চারটি উপজেলা সদর, চরভদ্রাসন, সদরপুর ও ভাঙ্গা উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকা প্রায় দেড় শতাধিক গ্রামে ফসলি জমি, নিচু সড়ক ও বসতিঘর তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া মধুখালী, আলফাডাঙ্গা ও সদরপুরের বিভিন্ন অংশে নদীভাঙন শুরু হয়েছে।
এদিকে জেলার মধুমতী নদী ও আড়িয়াল খাঁ নদের বিভিন্ন অংশে ভাঙন দেখা দেওয়ায় আতঙ্কে রয়েছে মানুষ। প্রতিদিনই বিলীন হচ্ছে ফসলের জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এ ছাড়া ফরিদপুর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ও ডিক্রিরচর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে।
রাজবাড়ী : জেলায় পদ্মার পানি বেড়েই চলছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মার পানি আট সেন্টিমিটার বেড়ে তা শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত বিপত্সীমার ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ফলে রাজবাড়ীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে বসবাস করা হাজারো মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। পানি উঠে গেছে ঘরবাড়িতে। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, ফসলি জমি, ধানক্ষেত ও সবজিক্ষেত। পানিবন্দিরা অনেকেই নিরাপদ স্থানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বন?্যাদুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি, খাবার ও গো-খাদ্যের সংকটও বিরাজ করছে।
সম্পর্কিত খবর

মানববন্ধন ও বিক্ষোভ


যাত্রাবাড়ী ও রমনায় দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে আবাসিক হোটেল থেকে অজ্ঞাতপরিচয় ১২ বছরের শিশু এবং রমনায় একটি বাসা থেকে সুফিয়া আক্তার (১০) নামে অপর এক শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুর ২টা ও ভোর সাড়ে ৪টার দিকে মৃতদেহগুলো উদ্ধার করে পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহগুলো ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ছেলেশিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে।

চাঁদা না পেয়ে হামলা আরো ৫ জন গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর পল্লবী থানা এলাকায় পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে এ কে বিল্ডার্স প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের মারধর ও গুলির ঘটনায় আরো পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তাঁরা হলেন মো. আব্বাস, মো. ইয়ামিন, মো. সোহেল, মো. মাজহারুল ও মো. চাঁদ মিয়া।
গতকাল সোমবার দুপুরে র্যাব-৪-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপস) কে এন রায় নিয়তি এ তথ্য দেন। তিনি বলেন, এর আগে গত রবিবার এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আরো তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ঘটনায় মামলার এজাহার ও ভুক্তভোগীর বিবরণে বলা হয়, গত ১১ জুলাই পল্লবীর আলব্দির টেক এলাকায় এ কে বিল্ডার্স নামের আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে না পেয়ে একদল লোক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এসে হামলা চালায়। হামলাকারীরা এ সময় চারটি গুলি করে।

সংক্ষিপ্ত
ওয়ারীতে হামলার শিকার শিক্ষার্থী, গ্রেপ্তার ২
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর ওয়ারী থানায় হামলার শিকার হয়েছে সৈয়দ রেদোয়ান মাওলা (১৭) নামের এক শিক্ষার্থী। পরে এলাকাবাসী হামলাকারীদের মধ্যে আব্দুর রহিম মাহি (১৯) ও সাব্বির হোসেন রাতুল (১৯) নামের দুই কিশোরকে আটক করে পুলিশে দেয়।
রবিবার রাত ৯টার দিকে হাটখোলা রোডে ইলিশিয়াল ভবনের পেছনের গলিতে এ ঘটনা ঘটে। ওয়ারী থানার ওসি ফয়সাল আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, হামলাকারী ও ভুক্তভোগী সবাই শিক্ষার্থী।