শ্যামল দাশ। বয়স পঞ্চান্ন ছুঁই ছুঁই। পেশায় গৃহশিক্ষক। করোনায় আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন শনিবার মধ্যরাতে।
শ্যামল দাসের লাশ মেহেদীর কাঁধে
রফিকুল ইসলাম, বরিশাল

সম্প্রীতির এই দৃষ্টান্ত দেখা গেছে সাগরতীরের বরগুনা জেলার পাথরঘাটা পৌরসভার হার্ডওয়্যার পট্টিতে। ধর্মীয় হানাহানির খবরই যখন সংবাদের শিরোনাম হয়, সেই সময় যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির গড়লেন পাথরঘাটার পৌর এলাকার মানুষজন। তিন ভিন্নধর্মী মানুষের কাঁধেই শেষযাত্রায় যান শ্যামল দাশ। শ্মশানেও কাঠ জোগাড় করা থেকে শুরু করে দাহ করার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত শ্যামলের পাশে ছিলেন মেহেদী, নুর আলম ও রাসেল। মেহেদী শিকদার এর আগেও করোনায় আক্তান্ত হয়ে মারা যাওয়া দুজনের লাশ দাফন করেছেন।
বৃদ্ধ শ্যামলের দেহ সৎকারের পরে প্রশাসনের সহযোগিতায় শিপ্রা রানী এবং তাঁর একমাত্র সন্তান শ্রীতমা দাশের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। শিপ্রা রানীর করোনা পজিটিভ এবং তাঁর মেয়ের করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে। তাঁরা দুজন হার্ডওয়্যার পট্টির বাসায় অবস্থান করছেন। প্রশাসনের তরফ থেকে তাঁদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। মেহেদী ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু শুকনো খাবার শ্যামলের স্ত্রী আর মেয়েকে দিয়েছেন। যদি তাঁরা দুপুরের খাবার গ্রহণ করেন, সেই দায়িত্বও কাঁধে নিয়েছেন।
শিপ্রা রানী সাংবাদিকদের জানান, স্বামী-সন্তান নিয়ে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে পৌর এলাকায় থাকতেন। তাঁর আত্মীয়-স্বজন সবাই বাইরে থাকে। মূলত পাড়ায় পাড়ায় শিশুদের পড়িয়ে শ্যামল সংসার চালাতেন। হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তিন দিন আগে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনার স্যাম্পল দিয়ে আসেন। ওই দিন হাসপাতাল থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় তিনি করোনা পজিটিভ। সেই থেকেই শ্যামল ঘরের মেঝেতে থাকছেন।
শিপ্রা রানী আরো বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে আমি জ্বরে ভুগছিলাম। শনিবার জ্বরের সঙ্গে আমারও শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকে। স্বামীর ঠিকমতো যত্ন নিতে পারছিলাম না।’ শনিবার রাতে তাঁর স্বামীর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। রাত আনুমানিক ২টার দিকে তিনি দেহ ত্যাগ করেন।
শিপ্রা বলেন, ‘তখন আমি আরো ভয়ে কুঁকড়ে যাই। কাছের আত্মীয়-স্বজনের খবর দিয়েছি। প্রতিবেশীদের সহযাগিতা চেয়েছি। কিন্তু কেউই আমার পাশে দাঁড়ায়নি। মৃতদেহ নিয়ে প্রায় আট ঘণ্টা আমি ঘরের মধ্যে ছিলাম। সকাল (গতকাল রবিবার সকাল) পৌনে ১০টার দিকে মেহেদী শিকদার নামের এক যুবক প্রথম ঘরে ঢোকেন। তাঁর সঙ্গে আরো তিনজন ছিলেন। তারা ঘর থেকে দেহ নামিয়ে শ্মশানে নিয়ে যান। তার পর কী হয়েছে আমি কিছুই জানি না। সকাল ১১টার দিকে মেহেদী আবার এসে আমাদের দুজনকে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। সঙ্গে প্রশাসনের গাড়ি ছিল। তবে আমরা মা-মেয়ে রিকশাযোগে হাসপাতালে গিয়ে নমুনা দিয়েছি। শুনেছি, আমি নাকি করোনায় আক্রান্ত। আমি যদি না ফেরার দেশে পাড়ি জমাই, তবে আমার পাশেও স্বজন কিংবা প্রতিবেশীরা দাঁড়াবেন না। এটা ভাবতেই পারছি না।’
স্বেচ্ছায় রক্তদান ও সামাজিক সংগঠন ‘প্রত্যয়’র সভাপতি মেহেদী শিকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘স্থানীয় এক যুবক মুঠোফোনে বিষয়টি জানায়। আমি সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখি, ঘরের মেঝেতে শ্যামলের লাশ। লাশের পাশেই ছিলেন স্ত্রী। ঘরের মধ্যে তো দূরে কথা প্রতিবেশীদের কেউ তাঁদের ঘরের আশপাশেই আসেননি। শ্যামলের করোনায় মৃত্যুর খবর জেনে প্রতিবেশী পুরুষ লোকেরা আগেভাগেই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। হার্ডওয়্যারের ব্যবসায়ী নূর আলম, কিশোর রাসেলকে নিয়ে আমি ঘরে যাই। তিনজন চেষ্টা করেও লাশ বাইরে নিয়ে আসতে পারছিলাম না। পৌরসভার মর্কেটের দিকে এগিয়ে যাই। সেখানে গিয়ে শিপন কর্মকারের সঙ্গে দেখা হয়। শিপনকে অনেক অনুরোধ করে শ্যামলের বাসায় নিয়ে আসি। পরে আমরা চারজনে লাশ ঘর থেকে নামিয়ে বাইরে নিয়ে আসি। দেহ তুলে খাটিয়ায় করে ভ্যানযোগে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরের শ্মশানে আমরাই নিয়ে যাই। এমনকি শ্যামলের দেহ খাটিয়ায় করে আমরাই চিতায় তুলে দিই। তারপর শ্মশানের পুরোহিত হিন্দু রীতি অনুযায়ী শ্যামলের দেহ সৎকার করেন। এই দীর্ঘ সময়ে শ্যামলের প্রতিবেশী কিংবা স্বজনদের দেখা পাইনি।’
সম্পর্কিত খবর

ভুয়া স্বাক্ষর ও প্রেস বিজ্ঞপ্তি নিয়ে রিজভীর সতর্কবার্তা
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী জানিয়েছেন, কুচক্রী ও স্বার্থান্বেষী মহল তাঁর স্বাক্ষর জাল করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভুয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। গতকাল শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এসব তথ্য জানিয়েছেন। বিজ্ঞপ্তিতে রিজভী বলেন, ‘আমি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী এই মর্মে দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, কোনো স্বার্থান্বেষী কুচক্রী মহল আমার স্বাক্ষর জাল করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি পোস্ট করেছে। কিন্তু ফেসবুকে পোস্ট করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা, বানোয়াট ও অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের স্থাপনা ভাঙায় দুঃখ প্রকাশ অর্থ উপদেষ্টার
নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯০ বছরের ঐহিত্যবাহী ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের পুরনো ভবন ভাঙায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, স্কুলের বিল্ডিং ভেঙে না ফেলে হেরিটেজ আকারে রাখা যেত। গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের ১৯০তম বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান। ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ভেঙে ফেলা হয়েছে, এখন আর কিছু করার নেই।

সংক্ষিপ্ত
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বদরুদ্দীন উমরের শারীরিক উন্নতি
নিজেস্ব প্রতিবেদক

বিশিষ্ট মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী রাজনীতিক ও তাত্ত্বিক বদরুদ্দীন উমর ঢাকার গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বর্তমানে তাঁর শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে রয়েছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম এ তথ্য জানান। ফয়জুল হাকিম বলেন, ‘গত ২২ জুলাই ভোর ৫টার দিকে শ্বাসকষ্ট ও নিম্ন রক্তচাপজনিত কারণে বদরুদ্দীন উমরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ন্যায্য মজুরি নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধন

ন্যায্য মজুরি নিশ্চিতের দাবিতে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতি। ছবি : কালের কণ্ঠ
।