প্রায় ৩১ ঘণ্টা চেষ্টার পর সুন্দরবনে লাগা আগুন নেভানো সম্ভব হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় আগুন নেভানো কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করেন ফায়ার ব্রিগেড কর্মকর্তারা।
গত সোমবার সকাল ৯টার দিকে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের ২৪ নম্বর কম্পার্টমেন্টের দাসের ভারাণী টহল ফাঁড়ি সংলগ্ন বনে ওই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় এবং কাছাকাছি পানির উৎস না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পাইপলাইন বসাতে এই দীর্ঘ সময় লেগে যায়।
প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে মরা ভোলা নদীতে পাইপ বসিয়ে সেখান থেকে পানি নিতে হয়েছে। ফায়ার ব্রিগেড বাগেরহাট, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলার তিনটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে। ড্রোনের মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ড এলাকা পর্যবেক্ষণ করে আগুন নেভাতে সহযোগিতা করেছে বন বিভাগ। এরই মধ্যে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কাজ শুরু করেছে বন বিভাগের গঠিত তদন্ত কমিটি।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য মিলেছে। ঘটনার প্রথম দিন (সোমবার) দুই একর বনভূমির লতাগুল্ম পোড়ার কথা জানায় বন বিভাগ। অথচ পুরো এক রাত আগুন জ্বলার পর গতকাল এসে তারা বলেছে, এক একর বনের কিছু লতাপাতা পুড়েছে। আর শরণখোলা ফায়ার স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুস সাত্তার গতকাল দুপুরে জানান, আগুনে ১০ একরেরও বেশি বনভূমির ছোট গাছপালা, লতাগুল্ম পুড়ে গেছে।
ঝরা পাতার স্তর অনেক গভীরে থাকায় আগুন মাটির নিচ থেকে ছড়িয়ে পড়েছে, যে কারণে আগুন ওপরের দিকে না উঠে সমতল থেকে বিস্তৃত হয়। ফলে অগ্নিকাণ্ড এলাকায় বড় গাছপালা থাকলেও সেগুলোর তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।
আগুন নেভানোর কাজে নিয়োজিত দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের আফজাল চাররাসির মতে, আগুনে ছয়-সাত একর বনের ছোট গাছপালা পুড়ে গেছে। বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে শতাধিক গ্রামবাসী আগুন নেভানোর কাজে সহযোগিতা করেছে।
বন বিভাগের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, এক থেকে দেড় একর বনভূমির লতাপাতা পুড়েছে।
ফায়ার সার্ভিস ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় আগুন সম্পূর্ণ নেভানো সম্ভব হয়েছে। আগুনে কোনো বন্য প্রাণী বা বড় কোনো গাছপালার ক্ষতি হয়নি। ড্রোনের মাধ্যমে আগুন শনাক্ত করে সেখানে পানি ঢালা হয়েছে। আগুন নিভে গেলেও ঘটনাস্থল বন বিভাগের নজরদারিতে রয়েছে।
বাগেরহাট ফায়ার ব্রিগেডের উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) গোলাম সরোয়ার বলেন, গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ফায়ার ব্রিগেডের তিনটি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন সম্পূর্ণ নেভানো সম্ভব হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। দুই দফা বৃষ্টিতে আগুনের ভয়াবহতা কমে আসায় আগুন নেভাতে অনেকটা সহজ হয়।
পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি। অল্প পরিমাণ বনের ছোট গাছপালা, লতাগুল্ম পুড়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে। সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানা সম্ভব হবে।