মাদক সেবন, বিক্রি ও সরবরাহের মতো ঘটনায় সম্পৃক্ততার দায়ে গত তিন বছরে অন্তত ১৭ জন কারারক্ষীকে গ্রেপ্তার ও চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। দেশের প্রতিটি কারাগারে রক্ষীদের ভেতরে প্রবেশের সময় দেহ তল্লাশি করা হচ্ছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার কাশিমপুর-১ কারাগারে মাদক ইয়াবা নিয়ে প্রবেশের সময় এক কারারক্ষীকে আটক করা হয়েছে। তার পরও কারাগারগুলোতে মাদক-সংশ্লিষ্ট এই অপরাধ কমছে না।
১৭ কারারক্ষী চাকরিচ্যুত গ্রেপ্তার তিন বছরে
ওমর ফারুক

জানা গেছে, অনেক কারারক্ষী মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বন্দিদের কাছে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক সরবরাহ করছেন। এসব কারারক্ষীর অনেকেই আবার মাদকাসক্ত। বিভিন্ন বাহিনীতে চাকরিরত সন্দেহভাজনদের ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা করা হলেও এখন পর্যন্ত কারাগারে সেই ব্যবস্থা চালু করা যায়নি। কারাগারগুলো কেবল নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা করছে।
কারা সূত্রে জানা গেছে, মাদক বিক্রি, সরবরাহ ও সেবনের মতো অপরাধে জড়িত কারা কর্মচারীদের মধ্যে প্রায়ই কেউ না কেউ আটক হওয়ার ঘটনা ঘটে। তাঁদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।
কারাগারে মাদকের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিভাগের ডিআইজি প্রিজনস তৌহিদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা মাদকের ব্যাপারে খুবই কঠোর। মাদক-সংশ্লিষ্টতা পেলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা হয়।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার পিন্টু মিয়া নামের এক কারারক্ষীকে গাজীপুরের কাশিমপুর-১ বিশেষায়িত কারাগার থেকে ইয়াবাসহ আটক করা হয়েছে। এর আগে গত ৩১ মার্চ কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক করা হয় রোমান ভূইয়া নামের এক কারারক্ষীকে। শরীয়তপুর জেলা কারাগারে ইয়াবা সেবনের দায়ে ২০১৯ সালে সালাউদ্দিন, ফারুক ও পলাশ নামের তিন কারারক্ষীকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এ ছাড়া গত তিন বছরে শুধু কাশিমপুর কারাগার থেকেই ১০ কারারক্ষীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে কারা কর্তৃপক্ষ। একই সময়ে দুই কারারক্ষীকে দুটি জেলা থেকে মাদকসহ গ্রেপ্তার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা জেলার ধামরাই থানার গাড়াইল গ্রামের পিন্টু মিয়া কাশিমপুর ১ নম্বর কারাগারের রক্ষী। বেশ কিছুদিন ধরেই তাঁর গতিবিধি কারা কর্তৃপক্ষের কাছে সন্দেহজনক বলে মনে হচ্ছিল। অবশেষে গত বৃহস্পতিবার রাতে আরপি গেটে ইয়াবা নিয়ে ধরা পড়েন তিনি।
রাত পৌনে ৮টার দিকে কারা এলাকার বাইরে থেকে আসার সময় কারা ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে তল্লাশির সময় ৩২৮ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয় পিন্টুর কাছ থেকে। পরে তাঁকে গাজীপুরের কোনাবাড়ী থানার পুলিশে সোপর্দ করা হয়। পিন্টুকে থানার পুলিশে হস্তান্তরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কোনাবাড়ী থানার ওসি আবু সিদ্দিক।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-১-এর জেলার রীতেশ চাকমা জানান, এর আগে কাশিমপুরের হাই সিকিউরিটি কারাগারে দায়িত্ব পালনকালে পিন্টু মিয়া গাঁজা সরবরাহের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন। চাকরি ফিরে পেয়ে তিনি আবারও জড়িয়ে পড়েন মাদকের সঙ্গে।
সম্পর্কিত খবর

মা বললেন ‘ও বাবা, আমার রায়েশা কই’
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিকেল ৩টা। চারদিকে হৈচৈ। একটির পর একটি অ্যাম্বুল্যান্স ঢুকছে আর বের হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ছাড়া কাউকেই ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।

দুর্ঘটনার খবর বিশ্ব গণমাধ্যমে
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত ২০ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের এ খবর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে বেশ গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করা হয়েছে।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের খবর জানিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি ‘ঢাকায় স্কুলে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত, নিহত ১৬’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার একটি স্কুল ক্যাম্পাসে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত ১৯, আহত হয়েছে শতাধিক। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বহরে থাকা চীনের তৈরি একটি এফ-৭ যুদ্ধবিমান প্রশিক্ষণ মহড়া চলাকালে বিধ্বস্ত হয়েছে।
মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম দ্য স্টার বলেছে, বাংলাদেশে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। ঢাকার একটি কলেজ ক্যাম্পাসে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইংরেজি দৈনিক গালফ নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার উত্তরে একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে কমপক্ষে ১৯ জন নিহত ও আরো বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
এ ছাড়া মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউজ উইক, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম সানডে এক্সপ্রেস, ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে বাংলাদেশের এই বিমান বিধ্বস্তের খবর গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করেছে। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর অভিমত
৭ শিশুর পরিচয় শনাক্তে লাগবে ডিএনএ পরীক্ষা
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১৭ জন নিহত হওয়ার তথ্য পেয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা) অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, যে ১৭ জন নিহত হওয়ার তথ্য পেয়েছেন, তারা সবাই শিশু। এর মধ্যে সাতজনের লাশ শনাক্ত করা যায়নি। তাদের পরিচয় শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষা লাগবে।
গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। সায়েদুর রহমান বলেন, তাঁদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ৮৮ জন হাসপাতালে ভর্তি আছে। প্রাথমিক মূল্যায়নে ২৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এ সময় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন বলেন, আজ তাদের রক্তের প্রয়োজন নেই। আগামীকাল (মঙ্গলবার) রক্তের প্রয়োজন হবে। তাই আজ আর কারো কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে না।
নাসির উদ্দীন বলেন, ইনফেকশন (সংক্রমণ) হলে মৃত্যুঝুঁকি বাড়তে পারে।

মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্ত
২০ জন শিক্ষার্থীকে বাঁচিয়ে চিরবিদায় নিলেন শিক্ষিকা মেহরিন
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় শিক্ষিকা মেহরিন চৌধুরীর বীরত্ব ও আত্মত্যাগ এখন দেশের মানুষের হৃদয়ে গভীর রেখাপাত করছে। প্রাণপণ চেষ্টা করে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থীকে মৃত্যুর মুখ থেকে রক্ষা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি তাঁর নিজের। তাঁর ভাই মানাফ এম চৌধুরী কালের কণ্ঠকে টেলিফোনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। গতকাল সোমবার দুপুরে মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২০ জন নিহত এবং শতাধিক শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
৪৬ বছর বয়সী মেহরিন চৌধুরী শতভাগ দগ্ধ অবস্থায় ওই ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বার্ন ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি, তাঁর মৃত্যুর খবর সামাজিক মাধ্যমে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুর্ঘটনার পরপরই ক্লাসরুম থেকে শিক্ষার্থীদের দ্রুত সরিয়ে ফেলেন মেহরিন। তাদের নিরাপদে বের করে দিতে গিয়ে নিজে আর সময়মতো বের হতে পারেননি। উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া এক সেনা সদস্য বলেন, ‘ম্যাডাম ভেতরে ঢুকে গিয়ে বাচ্চাগুলারে বের করে দিছেন, তারপর উনিই বের হতে পারেননি।’ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শিক্ষিকা মেহরিনের সাহসিকতায় অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থীর প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।