পাঁচ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ১১ বছর বয়সী এক মেয়ের সঙ্গে ইনস্টাগ্রামে পরিচয় হয়েছিল ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর। দেখতে দেখতে পাঁচ বছর তারা যোগাযোগ রাখে। মেয়েটি ১৬ বছরে পা দিলে কৌশলে তার নগ্ন ছবি হাতিয়ে নেন ওই শিক্ষার্থী। এবার মেয়েটি বুঝতে পারে পর্নোগ্রাফিচক্রের পাল্লায় পড়েছে সে। মা-বাবাসহ স্বজনদের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করে ফেসবুকে বিষয়টি ঢাকার কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগকে জানিয়ে সহযোগিতা চায়।
ওই অভিযোগের ভিত্তিতে বোরহান উদ্দিন, আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও অভি হোসেন নামের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই তিন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে সিটিটিসি। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গত রবিবার তাঁরা তিনজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের ডিজিটাল ফরেনসিক বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার ইশতিয়াক আহমেদ। গতকাল মঙ্গলবার তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মেয়েটির অভিযোগের ভিত্তিতে আট মাস অনুসন্ধান চালিয়ে ভয়ংকর এই শিশু পর্নোগ্রাফিচক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) সহকারী অধ্যাপক তানভীর হাসান জোহা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একটি সংঘবদ্ধ আন্তর্জাতিকচক্রের পরিকল্পিত ফাঁদে পড়ে ‘ডার্ক নেটে চাইল্ড পর্নো’র মতো বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে দেশের শিক্ষার্থীরা। এ জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে আরো তৎপর হতে হবে। ডার্ক নেট নিয়মিত মনিটর করা প্রয়োজন।’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, মূলত ডার্ক বা ডিপ ওয়েবে পাসওয়ার্ড প্রটেকটেড সার্ভিসের মাধ্যমে এই অপকর্ম হয়। ডার্ক নেটে অপরাধীরা ই-কমার্স ব্যবহার করছে। গ্রেপ্তার হওয়া তিন শিক্ষার্থী কাদের কাছে ছবি ও ভিডিও সরবরাহ করতেন তাঁদের শনাক্ত করতে প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা- ইন্টারপোলের সহযোগিতা নিয়ে চক্রের সব সদস্যকে খুঁজে বের করতে হবে।
গ্রেপ্তার বোরহানের তথ্যের বরাত দিয়ে সিটিটিসি সূত্র জানায়, বোরহানের ব্যবহৃত কম্পিউটার থেকে একটি ফোল্ডার উদ্ধার করা হয়েছে, যেখানে ৪৫টি দেশি-বিদেশি কিশোরীর নগ্ন ছবি পাওয়া যায়। যার মধ্যে তিন হাজার ৩১৬টি ফাইল ছিল। এর মধ্যে মার্কিন ওই কিশোরীর নামেও একটি ফোল্ডার ছিল। আন্তর্জাতিক অপরাধীচক্রের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগসহ কোনো আর্থিক লেনদেন ছিল কি না তার তদন্ত চলছে।
মন্তব্য