<p>সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে তরল বর্জ্য শোধনে অব্যবস্থার কারণে ভূগর্ভস্থ পানি এবং আশপাশের নদ-নদী ও জলাশয় মারাত্মক দূষণের মুখে রয়েছে। কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের (সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট—সিইটিপি) পরিশোধনের ক্ষমতা দৈনিক ২৫ হাজার ঘনমিটার তরল বর্জ্য। সাভার শিল্পনগরীর সব ট্যানারির উৎপাদন শুরু হলে সেখানকার তরল বর্জ্যের পরিমাণ হবে দৈনিক ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার ঘনমিটার। এ ক্ষেত্রে বর্তমান সিইটিপি দ্বারা সম্পূর্ণরূপে তরল বর্জ্য পরিশোধন সম্ভব হবে না। সাভার চামড়া শিল্পনগরীর বর্তমান সমস্যা এবং তা থেকে উত্তরণে সুপারিশ জানিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে এ হিসাব উল্লেখ করা হয়েছে।   </p> <p>প্রতিবেদনে বর্তমান পরিস্থিতি উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সিইটিপির কমন ক্রোম রিকভারি ইউনিট প্রায় সময়ই বন্ধ পাওয়া যায়। এতে ক্রোম রিকভারি না করেই সরাসরি পাম্পের মাধ্যমে সিইটিপিতে পাঠানো হচ্ছে তরল বর্জ্য। প্রতিটি ইফ্লুয়েন্ট পাম্পিং স্টেশনে (ইপিএস) ফাইন স্ক্রিন রয়েছে। এর মাধ্যমে কঠিন বর্জ্য স্ক্রিনিং করে আলাদা করা হচ্ছে। প্রতিদিন এ ধরনের কঠিন বর্জ্য প্রকল্প এলাকায় স্তূপাকারে অন্যান্য কঠিন বর্জ্যের সঙ্গে রাখা হচ্ছে।</p> <p>প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে ডাম্পিং ইয়ার্ডের তরল বর্জ্য সরাসরি ধলেশ্বরী নদীতে নির্গমন হচ্ছে না। তবে ক্রোমিয়াম মিশ্রিত চামড়া ও তরল বর্জ্য হতে সংগৃহীত বিষাক্ত ক্রোম কেক খোলা জায়গায় সংরক্ষণের ফলে ভূগর্ভস্থ পানি দূষণের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ডাম্পিং ইয়ার্ডে গো-মহিষাদির বিভিন্ন পচনশীল অংশ ফেলে দেওয়ার ফলে দুর্গন্ধ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এর ওপর প্রচুর মশা, মাছি ও অন্যান্য পোকা-মাকড় জমা হওয়ায় এখানকার পরিবেশ অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছে। চামড়া শিল্পনগরীর ট্যানারিতে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে সৃষ্ট কঠিন বর্জ্য (তরল বর্জ্যের সঙ্গে ক্রোম ও অন্যান্য কেমিক্যাল মিশ্রিত স্ল্যাজ, ঝিল্লি, চর্বি, চামড়ার কাঁচা টুকরা, শিং, পশম, হাড়ের টুকরা, চামড়ায় মিশ্রিত বালু ইত্যাদি) পরিবেশসম্মতভাবে ব্যবস্থাপনার জন্য প্রকল্প কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ, অনুমোদন বা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ফলে কঠিন বর্জ্য অপরিকল্পিত উপায়ে সংগ্রহ করে তা পার্শ্ববর্তী সলিড ওয়াস্ট ডাম্পিং ইয়ার্ডের চারপাশে স্তূপাকারে ফেলে রাখা হচ্ছে।</p> <p>এতে আরো বলা হয়েছে, কঠিন বর্জ্যের সঙ্গে ক্রোমিয়াম ও অন্যান্য কেমিক্যাল মিশ্রিত তরল বর্জ্য দীর্ঘদিন জমে থাকার ফলে দূষিত তরল বর্জ্যে ভূগর্ভস্থ পানিসহ পার্শ্ববর্তী নদী দূষণের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ট্যানারি কারখানা হতে সৃষ্ট কোনো বর্জ্য প্রকল্প এলাকার বাইরে যাতে না যায়, সে জন্য বিসিক চামড়া শিল্পনগরীর প্রকল্প পরিচালক প্রতিটি ট্যানারি শিল্প কারখানাকে চিঠিও দিয়েছেন।</p> <p>প্রতিবেদনে বিরাজমান সমস্যা সমাধানের সুপারিশে বলা হয়েছে, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি ট্যানারিতে স্থায়ীভাবে তিন ধরনের স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি ট্যানারি থেকে সৃষ্ট ক্রোম ও সাধারণ তরল বর্জ্য সিইটিপিতে নির্গমনের জন্য পৃথক পাইপ বা ড্রেন লাইন নির্মাণ ও বাস্তবায়নের জন্য বিসিককে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রতিটি ট্যানারিতে সৃষ্ট  তরল বর্জ্য অন্তত ৪৮ ঘণ্টা সংরক্ষণ করার ক্ষমতাসম্পন্ন ট্যাংক নির্মাণ করতে হবে। বিসিক এলাকায় বৃষ্টির পানি অপসারণের জন্য তৈরি ড্রেনেজ লাইনে কোনোভাবেই ট্যানারির সৃষ্ট তরল বর্জ্য প্রবেশ করানো যাবে না। এ ছাড়া ওভার ফ্লো হয়ে এক ধরনের তরল বর্জ্যের সঙ্গে অন্য কোনো তরল বর্জ্যের মিশ্রণ যাতে না ঘটে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। ট্যানারিতে সৃষ্ট কঠিন বর্জ্য পরিবেশবান্ধবভাবে ব্যবস্থাপনার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।</p> <p>এসব বিষয়ে শিল্পসচিব আব্দুল হালিম বলেন, ট্যানারির অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। কোনো কাজ করতে গেলে ছোটখাটো সমস্যা থাকে। সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করা হচ্ছে।</p> <p>পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. এ কে এম রফিক আহাম্মদ বলেন, ‘সাভার শিল্পনগরী আমরা নিয়মিত সরেজমিন পরিদর্শন করছি। সমস্যা চিহ্নিত করছি। এ বিষয়ে আমাদের মতামত দিচ্ছি। আগের চেয়ে পরিস্থিতির উন্নয়ন হচ্ছে।’  </p>