‘পায়ে নয়, তাঁর স্যান্ডেল দুটি হাতে। জন্ম থেকেই অপূর্ণাঙ্গ ছোট ছোট পা দুটি বেঁকে পেছন দিকে চলে গেছে বলে হাতে ভর দিয়েই কলেজ অধ্যক্ষের কার্যালয়ে প্রবেশ করল সে। ডান হাতের বগলে তার একটি প্লাস্টিকের ফাইল। দরজায় এমন এক কিশোরকে নজরে পড়তেই অধ্যক্ষ জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি কি ভর্তি হতে এসেছ? ছেলেটি বলল, ‘জি, স্যার, আমি ভর্তি হব।
মায়ের ইচ্ছায় কলেজে গেল অদম্য রাহাত
- মা চাননি তাঁর পঙ্গু ছেলেটা দুয়ারে দুয়ারে ঘুরুক
দিলীপ কুমার মণ্ডল, নারায়ণগঞ্জ

ঘটনাস্থল নারায়ণগঞ্জ জেলা শহরের অন্যতম বিদ্যাপীঠ নারায়ণগঞ্জ কলেজ।
দুটি হাতে ভর করে চলা এই রাহাতকে তার পঙ্গুত্ব বেঁধে রাখতে পারেনি। হাতে ভর দিয়ে চলতে চলতে পিএসসি, জেএসসি ও এসএসসি পাস করে আজ কলেজ প্রাঙ্গণে চলে এসেছে এই অদম্য কিশোর।
কথা হয় রাহাতের সঙ্গে।
ছয় বছর বয়সেই নানা বাধা-বিপত্তি প্রতিরোধ করে পঙ্গু রাহাতকে ফতুল্লার শেহারচর প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি করে দেন তাঁর মা খালেদা। সেখানে রাহাতের পাশে দাঁড়ান উপজেলা প্রতিবন্ধী সংস্থায় চাকরিরত রাহাতের এলাকার মামা লিটন। নানাজনের সহায়তায় পিএসসিতে ৪.২২ পেয়ে পাস করে সে। উত্তীর্ণ হয়ে হাই স্কুলে ভর্তি হতে গিয়ে শুরু হয় বিপত্তি। ফতুল্লা পাইলট স্কুলে ভর্তি হতে গেলে সেখানকার কর্তৃপক্ষ পঙ্গু বলে তাকে ভর্তি নিতে অস্বীকৃতি জানায়। উপায়ান্তর না পেয়ে নানা লোকের হাত ধরে রাহাত দেখা পায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমানের। তাকে সে জানায়, পঙ্গু বলে তাকে ভর্তি নিচ্ছে না স্কুল কর্তৃপক্ষ। এরপর এমপি শামীম ওসমানের হস্তক্ষেপে রাহাত ভর্তি ওই স্কুলে। মাধ্যমে রাহাতের পাশে দাঁড়ান তার আপন ফুফাতো বোন নিপা। তিনি ফতুল্লাহ পাইলট স্কুলের শিক্ষিকা। তিনি রাহাতকে বিনা বেতনে প্রাইভেট পড়াতেন। এর মধ্যে রাহাতের পেটের মধ্যে টিউমার দেখা দেয়। অসুস্থতার কারণে জেএসসিতে সে ২.৬ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। পরে এসএসসিতে ৩.১১ পেয়ে উত্তীর্ণ হয় সে।
নিজের পরিবারের কথা জানিয়ে রাহাত জানায়, বড় ভাই মো. রিফাত মালদ্বীপ প্রবাসী। সে পড়াশোনায় যথেষ্ট সহায়তা করেছে। বড় বোন সায়মা বিয়ে হয়ে গেছে। সেও শিক্ষা জীবনে পাশে দাঁড়িয়েছেন। বাবা এমদাদ উল্লাহ থান কাপড়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন। কিন্তু ১০ বছর আগে চক্ষুরোগে অন্ধ হয়ে যান তিনি।
রাহাতের জীবনের সবচেয়ে বড় কষ্টের কথা উল্লেখ করে জানায়, গত বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি মা খালেদা বেগম মারা যান কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে। একদিকে বাবা অন্ধ অন্যদিকে মা নেই। বড় ভাই রিফাতকে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। মায়ের সেই কথা রাহাত কখনো ভুলতে পারে না। মা বলত, ‘আমি মরে গেলে তোকে কে দেখব। তুই দুয়ারে দুয়ারে ঘুরবি তা হতে দেব না। আমার যত কষ্ট হোক তোকে পড়াশোনা করাব। আজ মা থাকলে কতই না খুশি হতো যে আমি কলেজে ভর্তি হচ্ছি।’
রাহাত সমাজের প্রতিবন্ধী লোকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা যারা জন্ম প্রতিবন্ধী বা কোনো কারণে অঙ্গহানি ঘটেছে, তারা যেন কারো মুখাপেক্ষী না হই। চেষ্টা করতে হবে নিজের পায়ে দাঁড়াতে। এটাই হচ্ছে আমার চাওয়া। আমাকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করলে কাউকে কোনো জায়গায় ছোট হতে হবে না।’
নারায়ণগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ রুমন রেজা বলেন, আজকাল অনেক সুস্থ মানুষ নানা অজুহাতে হাত পেতে চলে। কিন্তু রাহাতের মতো ছেলেরা সমাজ ও রাষ্ট্রের উদাহরণ। ওদের মূল্যায়ন করতে হবে। রাহাত যদি চায় এই কলেজ থেকে পড়াশোনা করেই এই কলেজে প্রতিবন্ধী কোটায় তার চাকরির ব্যবস্থা করব।’
সম্পর্কিত খবর

মানববন্ধন


ডেঙ্গু রোগী


চট্টগ্রামে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিদর্শন করলেন নৌবাহিনী প্রধান
নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি দেশের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নৌ সদস্যদের সক্রিয় অংশগ্রহণ অব্যাহত রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বুধবার বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের কার্যক্রম সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করেছেন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।
আইএসপিআর জানায়, পরিদর্শনকালে নৌবাহিনী প্রধান এনসিটি-২ জেটি এলাকায় কনটেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম, এপ্রেইস পয়েন্টে কনটেইনার এক্সামিন কার্যক্রম এবং সিটিএমএস ভবনে টার্মিনাল অপারেশন সিস্টেম কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
আইএসপিআর আরো জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গত সোমবার চট্টগ্রাম ড্রাই ডক লিমিটেডের কাছে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব দেয়। চট্টগ্রাম ড্রাই ডক লিমিটেড এনসিটির দায়িত্ব নেওয়ার ফলে বন্দরের কর্মকাণ্ডে শৃঙ্খলা, সময়ানুবর্তিতা ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বন্দরের কার্যক্রমকে আরো বেগবান করবে বলে আশা ব্যক্ত করেছেন নৌবাহিনী প্রধান ।

ঢাবি ক্লাবে ‘ফ্যাসিবাদী’ আওয়ামী শিক্ষকদের পুনর্বাসনের প্রতিবাদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্লাবে আওয়ামী লীগপন্থী নীল দলের শিক্ষকদের পুনর্বাসনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাবি ক্লাব প্রাঙ্গণে এই বিক্ষোভ হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘স্বৈরাচারের গদিতে আগুন জ্বালাও একসাথে’, ‘সাদা-নীল ভাগাভাগি, এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ফ্যাসিবাদের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘আওয়ামী লীগের চামচারা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘গণহত্যার মদদদাতারা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘ঢাবি ক্লাবে হবে না, দালালদের ঠিকানা’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে ‘ফ্যাসিবাদী আওয়ামী দোসর’ নীল দলের শিক্ষকদের পুনর্বাসন করা হয়েছে।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর না পেরোতেই ঢাবি ক্লাবে খুনি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। ঢাবি ক্লাবের ১৫ সদস্যের কমিটির সাতজনই নীল দলের সদস্য, যা সাদা দলের শিক্ষকদের জন্য লজ্জাজনক।
অন্য শিক্ষার্থী আশিক খান বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্রলীগের দ্বারা সাধারণ শিক্ষার্থী নির্যাতনের বৈধতা দিয়েছিলেন নীল দলের শিক্ষকরা। গত বছরের ৫ আগস্টের পরও নীল দলের শিক্ষকরা ঢাবি ক্লাবে বিপ্লব বেহাত করতে ষড়যন্ত্র করেছিলেন।