দুধ, দই ও পশুখাদ্যে ভেজাল মেশানোর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা দাখিল না করায় হাইকোর্ট ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা আদালতে দাখিল করতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১৫ মে পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল বুধবার এ আদেশ দেন।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের দেওয়া একটি প্রতিবেদন দেখে আদালত উল্লিখিত আদেশ দেন। আদালতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার ফরিদুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
এদিকে হাইকোর্টের নির্দেশের পর কাঁচা তরল ও পাস্তুরিত দুধ, দই ও পশুখাদ্যের নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা করা, উৎপাদনব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং যথাযথ সুপারিশ প্রণয়নের জন্য ১৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. মাহবুব কবিরকে আহ্বায়ক করে এ কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির তালিকা গতকাল আদালতে দাখিল করা হয়েছে। ওই কমিটির কর্ম পরিকল্পনার তথ্যও আদালতে দাখিল করা হয়েছে।
কর্ম পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে (১) চার সপ্তাহের (২৪ এপ্রিল থেকে ২২ মে, ২০১৯) মধ্যে কাঁচা তরল ও পাস্তুরিত দুধের নমুনা সংগ্রহ, গবেষণাগারে পরীক্ষা ও কমিটি কর্তৃক ফলাফল পর্যালোচনা; (২) চার সপ্তাহের মধ্যে (২৩ মে থেকে ২২ জুন) পশুখাদ্যের নমুনা সংগ্রহ এবং গবেষণাগারে পরীক্ষা ও কমিটি কর্তৃক ফলাফল পর্যালোচনা এবং (৩) চার সপ্তাহের মধ্যে (২৩ মে থেকে ২২ জুলাই) প্রাথমিক উৎপাদন ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ, ফলাফলসমূহের তুলনামূলক বিশ্লেষণ এবং কমিটি কর্তৃক যথাযথ সুপারিশ প্রণয়ন।
দুধ, দই ও গোখাদ্যে কীটনাশক, ব্যাকটেরিয়া, অ্যান্টিবায়োটিক, সিসাসহ মানবদেহের জন্য বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি নিয়ে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে কালের কণ্ঠসহ একাধিক জাতীয় দৈনিকে গত ১১ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে এ আদেশ দেন আদালত। সরকারের জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ‘গরুর দুধেও বিশেষ ভয়’ শিরোনামে কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আদালত এই প্রতিবেদন দেখে ওই দিন স্বপ্রণোদিত হয়ে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা দেন ও রুল জারি করেন। আদেশে দুধ, দই ও গোখাদ্যে ভেজাল মেশানোর ঘটনা তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে দুদককে নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গাভির দুধ ও বিভিন্ন প্যাকেটজাত দুধ, দই ও গোখাদ্যের নমুনা সংগ্রহ করে তাতে কী পরিমাণ কীটনাশক, ব্যাকটেরিয়া, অ্যান্টিবায়োটিক, রাসায়নিক, সিসাসহ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে তা নিরূপণ করতে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এই নির্দেশের পর নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ১৬ সদস্যের কমিটি গঠন করে।