যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সদা প্রস্তুত থাকতে সেনা কমান্ডোদের নির্দেশ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। গতকাল বুধবার রাজশাহী সেনানিবাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নকে জাতীয় পতাকা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় আপনাদের সদা প্রস্তুত থাকতে হবে।’
দেশের যোগ্য, অভিজ্ঞ ও বিশ্বমানের প্যারা কমান্ডো ইউনিট এখন প্রয়োজন উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন, দেশ ও জনগণের জরুরি সময়ে সেনাবাহিনীর ১ প্যারা কমান্ডোর মতো বিশেষ ব্রিগেড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, কমান্ডোরা দেশের চৌকস, সুশৃঙ্খল ও দুঃসাহসী সেনানী।
মাতৃভূমির সার্বভৌমত্বকে সমুন্নত রাখতে তারা জীবন বাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের সেবায় আত্মোৎসর্গ করার সংকল্পে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
রাষ্ট্রপতি ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক সশস্ত্র বাহিনীকে দেশের আস্থা ও গর্বের প্রতীক হিসেবে অভিহিত করে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করতে তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
২৫ বছর আগে ১৯৯২ সালে গঠিত ১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নের কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেন রাষ্ট্রপতি।
সামপ্রতিক দুটি জঙ্গিবিরোধী অভিযানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সফল জিম্মি উদ্ধার অভিযান ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ পরিচালনা করে নিজেদের কোনো প্রকার ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই ১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন ১৩ জন দেশি-বিদেশি নাগরিককে উদ্ধার করে দেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করে। পরবর্তী সময়ে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় আতিয়া মহলে ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ সাহসিকতার সঙ্গে পরিচালনা করে।”
আবদুল হামিদ বলেন, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ আজ আর কোনো একটি দেশ বা জাতির সমস্যা নয়। ধনী-গরিব, উন্নত-অনুন্নত নির্বিশেষে বিশ্বের সব দেশের জন্যই সমস্যা।
এ জন্য প্যারা কমান্ডো ইউনিটের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বর্তমান সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার হচ্ছে—একটি আধুনিক, যুগোপযোগী ও শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠন। এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নে রূপকল্প ২০২১-এর ধারাবাহিকতায় এবং ফোর্সেস গোল ২০৩০-এর আলোকে সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো বিন্যাস ও পরিবর্তনের পাশাপাশি আধুনিকায়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, সামরিক জীবনে প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই।
প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জিত এবং নৈপুণ্য নিশ্চিত হয়। সঠিক প্রশিক্ষণ পেশাগত মান বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। প্রশিক্ষণের এই ধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তিনি।
রাষ্ট্রপতি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন মিশনে আত্মত্যাগ, কর্তব্যনিষ্ঠা ও পেশাদারির মাধ্যমে দেশের জন্য সম্মান ও মর্যাদা বয়ে আনার জন্য সেনাবাহিনীর প্রশংসা করেন। একই সঙ্গে তিনি প্রাকৃতিক এবং বন্যা ও ভূমিধসের মতো মানবসৃষ্ট দুর্যোগ এবং ব্যাপক হারে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে সৃষ্ট সংকট মোকাবেলায় সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেন।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী, সিনিয়র রাজনৈতিক নেতা, তিন বাহিনীর প্রধান, সংসদ সদস্য, বগুড়া আঞ্চলিক কমান্ডার, রাষ্ট্রপতির সংশ্লিষ্ট সচিব এবং সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সূত্র : বাসস।