বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের (সিএএবি) ১৪ শ কর্মচারী কর্মজীবন পার করে দিয়েছেন প্রায়। মাস্টার রোলের এই কর্মচারীদের চাকরির বয়স কারো ২৫, কারো ২৮, কারো বা ৩০ বছর পার হয়েছে। কিন্তু চাকরিটাই স্থায়ী হলো না আজও।
সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন অতিক্রান্ত হওয়ায় চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য একাধিক রিট পিটিশন দায়ের করেছেন তাঁরা।
এসবের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত তাঁদের চাকরি স্থায়ী না করে নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু না করার আদেশ দেন। কিন্তু তাতে কান না দিয়ে সিএএবি নতুন করে পাঁচ হাজার ১১ জন কর্মচারী নিয়োগের প্রস্তাব তৈরি করেছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সে প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে।
সিএএবির একাধিক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে সংস্থার জনবল তিন হাজার ৭৬১ জন।
এ জনবল দিয়ে বিমানবন্দরগুলোর পরিচালনা দুরূহ হয়ে উঠেছে। আবার সম্প্রতি সরকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ এবং কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তর করার উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমান লোকবল দিয়ে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এ কারণেই নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়া হাতে নেওয়া হয়েছে।
সিএএবির উপপরিচালক (প্রশাসন) ক্যাপ্টেন (অব.) একরামউল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, সিএএবির অধিকাংশ পদ কারিগরি ধরনের। কিছুদিন আগে জনবল বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যথাযথভাবে গড়ে তোলা যায়। অদক্ষ জনবল দিয়ে তো আর সিএএবির মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান চালানো যাবে না। এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। অচিরেই সেটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।
জানা গেছে, শুধু লোকবল বৃদ্ধিই নয়, এবার সিএএবিকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে সংস্থাটি অত্যাধুনিক হয়ে উঠবে। তৈরি প্রতিবেদনে সেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে সিএএবির নিরাপত্তাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে। শাহজালাল বিমানবন্দরের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য সম্পূর্ণ পৃথক একটি বিভাগ সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পুরনো মাস্টার রোলের কর্মচারীদের স্থায়ী না করে নতুন কর্মচারী নিয়োগ দিতে গেলে সিএএবিকে সমস্যায় পড়তে হবে। ইতিমধ্যে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ২০১০ সালে ৪০০ নতুন কর্মচারী নিয়োগ দিতে গেলে তাঁরা রিট করেন। হাইকোর্ট ২০১২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মাস্টার রোলের কর্মচারীদের পক্ষে রায় দেন। ফলে সেই নিয়োগপ্রক্রিয়া আর সম্পন্ন হয়নি। নতুন করে পাঁচ হাজার ১১ জনকে নিয়োগ দিতে গেলেও পুরনো সমস্যাটি সামনে আসতে পারে।
মাস্টার রোলের কয়েকজন কর্মচারী জানান, সিএএবি নিয়োগের যে চেষ্টা করছে সেটা রীতিমতো আদালত অবমাননার শামিল। এ ব্যাপারে মামলা করতে প্রস্তুত তাঁরা।
সিভিল এভিয়েশন দৈনিকভিত্তিক কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা ২৫ থেকে ৩০ বছর ধরে দৈনিক ভিত্তিতে চাকরি করেও স্থায়ী হতে পারছি না। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। প্রতিদিন ২৭০ টাকা হারে বেতন পাই, যা দিয়ে এক বেলাও খাওয়া সম্ভব নয়। বর্তমানে একজন রিকশাওয়ালা প্রতিদিন ৫০০ টাকা রোজগার করে থাকে।' তিনি বলেন, 'আমাদের বাদ দিয়ে বারবার নতুন লোক নিয়োগের চেষ্টা করা হচ্ছে। এবারও তা সফল হবে না। কারণ এ বিষয়ে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে।'
সিএএবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, মাস্টার রোলের এক হাজার ৪০০ কর্মচারীর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। মূলত হাইকোর্টের নির্দেশনা মতেই ২৫ জুন থেকে পর্যায়ক্রমে তাঁদের চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে। মন্ত্রণালয় থেকে ৮৯টি ক্যাটাগরিতে এক হাজার ২৭৭টি পদে জনবল স্থায়ীকরণের ছাড়পত্র পাওয়া গেছে। এ প্রক্রিয়া শেষ করেই নতুন পাঁচ হাজার ১১টি পদে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করা হবে। ঈদুল ফিতরের আগেই মাস্টার রোলের কর্মচারী সম্পর্কিত সমস্যার সমাধান হবে।
এ আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে মাস্টার রোলের কর্মচারীদের প্রতীকী কর্মবিরতির কর্মসূচি (গতকাল ১ জুলাই হওয়ার কথা ছিল) স্থগিত করা হয়। মো. শহীদুল্লাহ বলেন, 'সিএএবির চেয়ারম্যান বলেছেন, ঈদের আগেই আমাদের সমস্যার সমাধান করবেন। এমনকি ঈদ বোনাসের ব্যবস্থাও তিনি করবেন। এ আশ্বাসেই কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।'
ওই কর্মচারীদের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়েছে, ২৫ থেকে ৩০ বছর মাস্টার রোলে চাকরি করার পর নতুন করে স্থায়ীকরণের সাক্ষাৎকার নেওয়ার প্রয়োজন নেই। কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে এক চিঠিতেই সবার চাকরি স্থায়ী করতে পারে। সাক্ষাৎকার নেওয়ার নামে তারা নতুন করে ফন্দি আঁটছে।