ঢাকা, শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫
১১ শ্রাবণ ১৪৩২, ৩০ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫
১১ শ্রাবণ ১৪৩২, ৩০ মহররম ১৪৪৭
এই সময়

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি অপসারিত হবেন?

  • তারেক শামসুর রেহমান
অন্যান্য
অন্যান্য
শেয়ার
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি অপসারিত হবেন?

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ বা প্রতিনিধি পরিষদে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিশংসিত হয়েছেন। নিম্নকক্ষের এই সিদ্ধান্ত কি উচ্চকক্ষ সিনেটেও অনুমোদিত হবে? উভয় কক্ষ যদি ট্রাম্পকে অভিশংসিত করে, একমাত্র তখনই তাঁকে তাঁর পদ থেকে অপসারণ করা যায়। কিন্তু তা আদৌ সম্ভব হবে কি না, সেটি বড় প্রশ্ন এখন। প্রতিনিধি পরিষদে তাঁকে দুই অভিযোগে অভিযুক্ত করে অভিশংসিত করা হয়েছে।

প্রথম অভিযোগটি ছিল ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দ্বিতীয়টি বিচারকাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি। ভোটাভুটিতে দেখা গেছে, ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রশ্নে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন ২৩০ জন আর পক্ষে ছিলেন ১৯৭ জন সদস্য। অন্যদিকে কংগ্রেসে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কারণে তাঁর বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন ২২৯ জন আর পক্ষে ১৯৮ জন। ৪৩৫ জন সদস্য নিয়ে প্রতিনিধিসভা গঠিত।
এর মধ্যে ডেমোক্রেটিক দলীয় সদস্যসংখ্যা ২৩৩ আর রিপাবলিকান দলীয় সদস্যসংখ্যা ১৯৭। একজন রয়েছেন নিরপেক্ষ আর চারটি আসন খালি রয়েছে। অন্যদিকে সিনেট সদস্য হচ্ছেন ১০০ জন। এর মধ্যে রিপাবলিকানদের সংখ্যা ৫৩ আর ডেমোক্র্যাটদের ৪৭।
এর অর্থ হচ্ছে, প্রতিনিধিসভায় যে ভোটাভুটি হয়েছে, তা হয়েছে অনেকটা পার্টি লাইনে। অর্থাৎ রিপাবলিকানরা চাইছেন ট্রাম্প যাতে অপসারিত না হন। আর সে কারণে তাঁদের অবস্থান ছিল ট্রাম্পের পক্ষে। আর ডেমোক্র্যাটরা যেহেতু ট্রাম্পের অভিশংসন চাচ্ছেন, সেহেতু তাঁরা অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ফলে মার্কিন রাজনীতি, বিশেষ করে ট্রাম্পকে অভিশংসনকে কেন্দ্র করে যে রাজনীতি, তাতে বিভক্ত হয়ে গেছে মার্কিন কংগ্রেস।
সিনেটের ভোটাভুটিতেও এর প্রতিফলন ঘটবে। অর্থাৎ রিপাবলিকানরা চাইবেন না ট্রাম্প অপসারিত হন। ফলে তাঁরা অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেবেন না। সুতরাং প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্প অভিশংসিত হলেও সিনেটে অভিশংসিত হওয়ার আশঙ্কা ক্ষীণ। এ মাসেই সিনেটে ভোটাভুটি হবে। সংবিধানে উভয় কক্ষকে অধিকার দেওয়া হয়েছে কিভাবে একজন প্রেসিডেন্টকে অভিশংসন করা যাবে। যেমন—আর্টিকল ১, সেকশন ২, ক্লজ ৫-এ বলা আছে,  'The House of Representatives...shall have the sole power of Impeachment.' আবার আর্টিকল ১, সেকশন ৩, ক্লজ ৬ ও ৭-এ বলা আছে, 'The senate shall have the sole power to try all Impeachment.' এখানে পার্থক্য হলো, যখন সিনেটে অভিশংসনের জন্য ভোটাভুটি হবে তখন প্রধান বিচারপতি সিনেটে সভাপতিত্ব করবেন। সংবিধানের আর্টিকল ২, সেকশন ৪-এ উল্লেখ আছে, একজন প্রেসিডেন্ট যদি রাষ্ট্রদ্রোহ বা বিশ্বাসঘাতকতার মতো কাজ করেন, যদি ঘুষ গ্রহণ করেন, যদি ঘোরতর কোনো অপরাধ, সংবিধান লঙ্ঘন কিংবা বিধিবহির্ভূত কাজ করে থাকেন, তাহলে তাঁকে ‘ইমপিচ’ বা অভিশংসন করা যাবে।

সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্পের অনেক কর্মকাণ্ড ট্রাম্পকে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে। তাঁর বিরুদ্ধে যখন নানা অভিযোগ আসতে থাকে এবং কংগ্রেস যখন এর অনুসন্ধান করতে শুরু করে তখন ট্রাম্প তদন্তপ্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানান। সাক্ষ্য দিতে তাঁর স্টাফদের বাধা দেন। তথ্য-প্রমাণ ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করেন বা দেন। এটি তাঁর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ, যে অভিযোগে প্রতিনিধিসভা তাঁকে অভিশংসিত করেছে। দ্বিতীয় আরেকটি অভিযোগ, তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলীয় প্রার্থী জো বাইডেন ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের একটি গ্যাস কম্পানির দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে ফোন করে চাপ দেওয়া। এই অভিযোগেও তিনি অভিশংসিত হয়েছেন প্রতিনিধিসভায়। মার্কিন মিডিয়ায় কয়েক মাস ধরে যেসব সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তাতে এই দুটি অভিযোগের পেছনে সত্যতা পাওয়া গেছে। ইউক্রেনে যিনি যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তিনিও স্বীকার করেছেন ট্রাম্প ‘বাইডেন ইস্যুতে’ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের ওপর প্রভাব খাটাতে চেষ্টা করেছিলেন। প্রাপ্ত তথ্য মতে, জো বাইডেন যখন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন (২০০৯-২০১৭) তখন তাঁর ছেলে হান্টার বাইডেন ইউক্রেনের একটি গ্যাস কম্পানি বুরিসমা হোল্ডিংয়ে মাসিক ৫০ হাজার ডলারে কর্মরত ছিলেন। এই কম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন মিকোলা জ্লোচেভিস্ক (Mykola Zlochevsky)  ২০০২ সালে। জ্লোচেভিস্ক ইউক্রেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানোকোভিচের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি মন্ত্রীও ছিলেন। কিন্তু ইয়ানোকোভিচের পতনের পর তাঁর সঙ্গে জ্লোচেভিস্কও দেশত্যাগ করেন। অর্থপাচারসহ নানা অভিযোগে এখন জ্লোচেভিস্কর বিরুদ্ধে ইউক্রেনে তদন্ত চলছে। হান্টার বাইডেন ওই প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন, যখন রাশিয়া ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করে নেয় (২০১৪)। অভিযোগ উঠেছে, হান্টার বাইডেনকে বুরিসমা রিক্রুট করেছিল, যাতে ওই সময়ের মার্কিন প্রশাসনের ওপর প্রভাব খাটানো যায়। ট্রাম্প নিজে স্বীকার করেছেন, তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনিস্ককে ফোন করে হান্টার বাইডেন ও তাঁর বাবা জো বাইডেনের ব্যাপারে তদন্ত করার অনুরোধ করেছিলেন। ফলে বিষয়টির সত্যতা পাওয়া গেছে। একজন প্রতিযোগী, যিনি ২০২০ সালের নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তাঁর বিরুদ্ধে অন্য একটি রাষ্ট্রের প্রধানকে তদন্ত করতে অনুরোধ করা শুধু অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়, বরং অনৈতিকও বটে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ