৪০. [ইবরাহিম (আ.) তাঁর দোয়ায় বলেছেন] হে আমাদের প্রতিপালক, আমাকে ও আমার বংশধরদের মধ্য থেকে যথাযথ নামাজ আদায়কারী বানাও। হে আমাদের প্রতিপালক, আমার প্রার্থনা কবুল করো। (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৪০)
তাফসির : আলোচ্য আয়াতে হজরত ইবরাহিম (আ.) নিজের ও সন্তানের জন্য দোয়া করেছেন, যাতে তাঁরা যথাযথ নামাজ আদায়ের তাওফিকপ্রাপ্ত হন।
সন্তানের জন্য সবচেয়ে বড় আদর্শ তার মা-বাবা।
শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। তারা সব সময় তাদের মা-বাবাকে আদর্শরূপে ভাবে এবং তাদের মতো হতে চায়। এ কারণে মা-বাবাকে বেশি সতর্ক থাকতে হয়। সন্তানের সুন্দর আগামীর জন্য মা-বাবার কর্তব্য হলো, তাদের সামনে নিজেদের আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করা। এ জন্যই আলোচ্য আয়াতে হজরত ইবরাহিম (আ.) প্রথমে নিজে নামাজি হতে চেয়েছেন। পরে সন্তানের ধার্মিকতা ও নামাজে একাগ্রতার জন্য দোয়া করেছেন। এতে জানা যায়, নেক সন্তান ও সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য দোয়া করা নবীদের সুন্নত।
সন্তান আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত।
বহু মানুষ আছে, কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা আর বৃহদাকায় অট্টালিকা আছে তাদের; কিন্তু তারা নিঃসন্তান। অজস্র অর্থ ব্যয় করেও সেসব দম্পতি মা-বাবা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পারেনি। তাদের কাছে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থের চেয়েও একটি সন্তান অধিক মূল্যবান। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নিঃসন্তান মা-বাবাকে এ দোয়া শিখিয়েছেন, ‘রব্বি লা-তাযারনি ফারদাঁও ওয়া আন্তা খাইরুল ওয়ারিছিন। অর্থাৎ হে আমার রব, আমাকে একা রেখো না। তুমি তো সর্বোত্তম উত্তরাধিকারী।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৮৯)
উল্লিখিত দোয়া সর্বপ্রথম উচ্চারণ করেছেন হজরত জাকারিয়া (আ.)। মহান আল্লাহ এ দোয়া এতই পছন্দ করেছেন যে তিনি তা কোরআনে উল্লেখ করেছেন।
সন্তান আল্লাহ তাআলার দান। মানুষের যত চাহিদা ও আকর্ষণ রয়েছে, তার মধ্যে সন্তানের আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি। সুতরাং প্রত্যেক মানুষের উচিত আল্লাহ তাআলার কাছে নেক সন্তান কামনা করা। আর যাদের সন্তান হয় না, তাদের উচিত আল্লাহর শেখানো ভাষায় তাঁর দরবারে দোয়া করা। হজরত জাকারিয়া (আ.) বার্ধক্য পর্যন্ত নিঃসন্তান ছিলেন। অন্যদিকে হজরত মরিয়ম (আ.) বায়তুল মোকাদ্দাসে তার তত্ত্বাবধানে ছিলেন। একদিন তিনি দেখতে পেলেন আল্লাহ তাআলা ফলের মৌসুম ছাড়াই হজরত মরিয়ম (আ.)-কে ফল দিয়ে রিজিকের ব্যবস্থা করেছেন। তখন তাঁর মনে সন্তানের জন্য সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা জেগে ওঠে। তাই তিনি আল্লাহর দরবারে বিশেষ দোয়া করেন। তিনি বলেন, ‘রাব্বি হাবলি মিল্লাদুনকা যুরিরয়্যাতান ত্বাইয়্যিবাহ, ইন্নাকা সামিউদ দুআ। অর্থাৎ হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার পক্ষ থেকে আমাকে পূতপবিত্র সন্তান দান করুন। নিশ্চয় আপনি প্রার্থনা কবুলকারী।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৩৮)
হজরত ইবরাহিম (আ.) একসময় নিঃসন্তান ছিলেন। তিনি আল্লাহর কাছে এ মর্মে দোয়া করেছেন, ‘রব্বি হাবলি মিনাস সলেহিন, অর্থাৎ হে আমার প্রভু! আমাকে সৎকর্মশীল সন্তান দান করো।’ (সুরা : সাফফাত, আয়াত : ১০০)
সুতরাং কোনো মানুষের কাছে সন্তান কামনা করা যাবে না। সন্তান লাভের জন্য অবৈধ ও অনৈসলামিক উপায় অবলম্বন করা যাবে না। নিঃসন্তান দম্পতির উচিত, আল্লাহর ওপর ভরসা করে উল্লিখিত দোয়া পাঠ করা।
আল্লাহর খাঁটি বান্দাদের পরিচয় দিয়ে কোরআনে বলা হয়েছে, তাঁরা পুণ্যবান স্ত্রী ও সন্তানের জন্য দোয়া করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘রব্বানা-হাবলানা-মিন্ আয্ওয়াজ্বিনা ওয়া যুররিয়্যা-তিনা-কুর্রতা আ’ইয়ুন, ওয়া জা’আল্না-লিল মুত্তাকিনা ইমামা। অর্থাৎ হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের আমাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর করো এবং আমাদের সংযমীদের আদর্শস্বরূপ করো।’ (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ৭৪)
গ্রন্থনা : মাওলানা কাসেম শরীফ