ঢাকা, সোমবার ০৭ জুলাই ২০২৫
২৩ আষাঢ় ১৪৩২, ১১ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, সোমবার ০৭ জুলাই ২০২৫
২৩ আষাঢ় ১৪৩২, ১১ মহররম ১৪৪৭
পবিত্র কোরআনের আলো

ইসলামে জানাজার নামাজের গুরুত্ব

notdefined
notdefined
শেয়ার
ইসলামে জানাজার নামাজের গুরুত্ব

৮৪. (মুনাফিকদের জানাজা না পড়ার কারণ হলো) তারা তো আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে অস্বীকার করেছে এবং পাপাচারী অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। [সুরা : তাওবা, আয়াত : ৮৪ (শেষাংশ)]

তাফসির : আলোচ্য আয়াতের তাফসির প্রসঙ্গে প্রখ্যাত তাফসিরবিদ আল্লামা ইবনে কাছির (রহ.) লিখেছেন, ‘এই আয়াতে মুনাফিকদের জানাজার নামাজ পড়তে এবং তাদের কবরের কাছে দাঁড়িয়ে তাদের জন্য ইস্তিগফার করতে নবী করিম (সা.) ও মুসলমানদের নিষেধ করা হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয়, কোনো মুসলমান মারা গেলে তার জানাজার নামাজ পড়া এবং তার কবর জিয়ারত করা সওয়াবের কাজ।’ (ইবনে কাছির) এমনকি পাপাচারী মুসলমান মৃত্যুবরণ করলেও তার জানাজা পড়তে হবে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলমানের ওপর (জানাজার) নামাজ পড়া ওয়াজিব, চাই সে নেককার হোক বা বদকার, যদিও সে কবিরা গুনাহ করে।’ (আবু দাউদ : ১/৩৫০)

ইসলামে জানাজার নামাজের গুরুত্ব

ইসলামী শরিয়তে জানাজা, কাফন-দাফন ইত্যাদি জীবিত মুসলমানদের ওপর মৃতদের অধিকার এবং অবশ্য পালনীয় ফরজ নির্দেশ। কোনো মুসলমান মারা গেলে তার জানাজার নামাজ আদায় করা ফরজে কিফায়া। অর্থাত্ কিছুসংখ্যক মুসলমান এ দায়িত্ব পালন করলে অন্যরা দায়িত্বমুক্ত হবে; যদিও এলাকার সব লোক ও আত্মীয়স্বজনের দায়িত্ব (সুন্নাত) হচ্ছে মৃতের জানাজা ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করা এবং তার স্বজনদের সান্ত্বনা দেওয়া।

সিহাহ সিত্তাসহ (হাদিসের প্রসিদ্ধ ছয়টি গ্রন্থ) বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি কোনো মৃত ব্যক্তির জানাজার নামাজ আদায় করে, সে এক ‘কিরাত’ পরিমাণ নেকি লাভ করে আর যে ব্যক্তি কোনো মৃত ব্যক্তির জানাজার নামাজ আদায় করে এবং তার দাফনের কাজে অংশগ্রহণ করে, সে দুই ‘কিরাত’ পরিমাণ সওয়াব লাভ করে।” কোনো এক সাহাবি প্রশ্ন করল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! দুই কিরাত কী?’ নবী করিম (সা.) বললেন, ‘দুই কিরাতের ক্ষুদ্রতম কিরাত ওহুদ পাহাড়ের সমান।’ (ইবনে কাছির)

হজরত উসমান (রা.) বর্ণনা করেন, “নবী করিম (সা.) যখন কোনো মৃত ব্যক্তির দাফনকাজ শেষ করতেন তখন তার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে সাহাবিদের বলতেন, ‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করো, তিনি যেন তাকে ইমানের ওপর দৃঢ় ও অবিচল রাখেন। এখনই তার কাছে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

’” (আবু দাউদ : হা. ৩২২১)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, “একজন মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমানের ছয়টি অধিকার রয়েছে। এক. যখন কোনো মুসলমানের সঙ্গে দেখা হয় তখন সালাম দেবে। দুই. কোনো মুসলমান ডাকলে সাড়া দেবে। তিন. সে তোমার কাছে সত্ পরামর্শ চাইলে তুমি তাকে সত্ পরামর্শ দেবে। চার. কোনো মুসলমানের হাঁচি এলে হাঁচিদাতা ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বললে জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলবে।

পাঁচ. কোনো মুসলমান অসুস্থ হলে তার সেবা-শুশ্রূষা করবে। ছয়. কোনো মুসলমান মৃত্যুবরণ করলে তার জানাজায় শরিক হবে।” (মুসলিম : হা. ২১৬২)

পাপাচারী মুসলমানের জানাজা

উল্লিখিত হাদিসগুলো থেকে স্পষ্টভাবে জানা যায়, ইসলাম মৃত মানুষের মর্যাদাও সমুন্নত রেখেছে। হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল দিয়ে, শুভ্র-সুন্দর পোশাক পরিধান করিয়ে, আতর-গোলাপ মাখিয়ে তাকে কবরস্থ করার নির্দেশ দিয়েছে। জানাজায় অংশগ্রহণ করে তার সপক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার আদেশ দিয়েছে। এমনকি পাপাচারী মুসলমান মৃত্যুবরণ করলেও তার জানাজা পড়তে হবে। তাই বেনামাজি, ঋণগ্রস্ত, আত্মহত্যাকারীর জানাজাও আদায় করতে হবে। তবে নেতৃস্থানীয়রা চাইলে পাপাচারীদের জানাজায় অংশগ্রহণ না করার সুযোগ রয়েছে। (ফতোয়া মাহমুদিয়া, খ. ৮, পৃ. ৬১১-৬২৫)

গ্রন্থনা : মাওলানা কাসেম শরীফ

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ