দীর্ঘদিন দস্যুমুক্ত থাকার পর বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে আবারও নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে পাঁচটি দস্যু বাহিনী। বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ম্যানগ্রোভসংলগ্ন বিভিন্ন স্থানে জেলেরা জিম্মি রয়েছেন দস্যুদের কাছে। এসব বাহিনীর সদস্যরা জেলেদের অপহরণ করে মুক্তিপণ চাইছে। না হলে হত্যার হুমকি দিচ্ছে।
সুন্দরবন ৫ দস্যু বাহিনীর কবজায়
- ছয় মাসে গ্রেপ্তার ৩০ দস্যু
- জেলেদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়
- নৌকাপ্রতি চাঁদা আদায় করা হচ্ছে ৩৫ হাজার টাকা
- বাহিনীর হাতবদল হয়েছে অর্থের বিনিময়ে
মামুন আহমেদ, বাগেরহাট

কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন সূত্রে জানা গেছে, দস্যু বাহিনীর সদস্যরা দেশি-বিদেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে গোটা সুন্দরবন।
কোস্ট গার্ড সূত্রে আরো জানা যায়, গত ৫ আগস্টের পর থেকে এসব বাহিনী সুন্দরবনে নতুন করে আত্মপ্রকাশ করেছে। এসব বাহিনীর প্রতিটিতে ১০ থেকে ১৫ জন করে সদস্য রয়েছে। সুন্দরবনের চকপাড়া বাজার, মল্লাখালী, পুরাতন ঝাপসি, শিবসা নদীর আড় বাওয়ানী খাল, মুচিরদোয়ানি, কামারখোলা, আদাচাই, আদাছগিসহ সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় এসব বাহিনী আস্তানা গেড়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বছরের ৫ আগস্ট দেশের বিভিন্ন থানা, ফাঁড়ি ও কারাগারে হামলার ঘটনা ঘটে। ওই সময় কারবন্দি অনেক দস্যু পালিয়ে যায়। সেই সঙ্গে র্যাব-পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়ে নতুন ও পুরনো কিছু সদস্য নিয়ে সুন্দরবনকেন্দ্রিক দস্যু বাহিনী সক্রিয় হয়েছে। সুন্দরবনে অভিযান চালিয়ে দস্যু বাহিনীর সদস্যদের আটক করা কষ্টসাধ্য। কারণ দুর্গম সুন্দরবনে স্বাভাবিকভাবে চলাচল সম্ভব নয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পর্যাপ্ত গোয়েন্দা তথ্যসহ অভিযান চালানোর মতো উপকরণের ঘাটতি রয়েছে। এসব কারণে সুন্দরবন পুরোপুরি দস্যুমুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।
সরকারের কাছে আত্মসমর্পণকারী দস্যুদের অনেকে ফিরে এসেছে পুরনো পেশায়। যোগ দিয়েছে বাহিনীতে। দস্যুদের পাঁচ বাহিনীর একটি হচ্ছে দয়াল বাহিনী। এই বাহিনীর সদস্য প্রায় ১০ জন। সুন্দরবনের যে অংশে মজনু বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ছিল তা গত এপ্রিলে দয়াল বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। সূত্র জানায়, এ জন্য মজনু ও দয়াল বাহিনীর মধ্যে প্রায় ৬০ লাখ টাকায় চুক্তি হয়েছে। বিনিময়ে ছয় মাস সুন্দরবনের নিয়ন্ত্রণ থাকবে দয়াল বাহিনীর কাছে। মজনু এরই মধ্যে ২০ লাখের বেশি টাকা পেয়েছে। বাকি অর্থ পাওয়ার আশাও করছে। মজনু তার বাহিনীর অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ দয়াল বাহিনীর কাছে দিয়ে দেশ থেকে পালিয়েছে। জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, মুন্সীগঞ্জ, রমজাননগর, কৈখালী ও ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে দয়াল বাহিনীর দাপট রয়েছে। দয়াল বাহিনী ছাড়াও বিভিন্ন বাহিনী এখন বিভিন্ন স্থানে ছয় মাসের জন্য জেলেদের নৌকাপ্রতি ৩৫ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করছে। এ চাঁদা না দিলেই দস্যুরা নির্যাতন করে জেলেদের। করিম শরীফ বাহিনী জেলেদের ওপর নির্যাতন চালালেও তাদের সদস্যরা ধরা পড়ছে কম। গত ৯ এপ্রিল রাতে সুন্দরবনের করকরি নদীর মল্লাখালী থেকে মুক্তিপণের দাবিতে এই বাহিনীর হাতে জিম্মি ১৬টি নৌকাসহ ৩৩ জেলেকে উদ্ধার করে কোস্ট গার্ড। বাকি অন্যান্য বাহিনীও তৎপরতা চালাচ্ছে সুন্দরবনের বিভিন্ন অংশে।
জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির মোংলা উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. জালাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, সুন্দরবন দীর্ঘদিন ধরে বনদস্যু-জলদস্যুমুক্ত ছিল। জেলেরা শান্তিতেই ছিলেন। এ বছর নতুন করে দস্যু বাহিনীর আবির্ভাব হয়েছে। এদের কারণে সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকার জেলেরা আতঙ্কে আছেন। সম্প্রতি চাঁদপাই ইউনিয়নের দক্ষিণ কাইনমাড়িতে নাথন নামের এক জেলেকে গভীর সমুদ্র থেকে অপহরণ করে দস্যু বাহিনীর সদস্যরা। পরে দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে পরিবার নাথনকে ছাড়িয়ে আনে। এর পর থেকে পরিবারটি পথে বসেছে। তারা এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে। মোংলার চিলা ইউনিয়নের চিলা বাজারের বাসিন্দা জেলে চিত্ত মণ্ডল বলেন, ‘সুন্দরবনের দুবলার চরে মাছ ধরতে গিয়েছিলাম কয়েক দিন আগে। সেখানে আমাদের কয়েকজন জেলেকে দস্যুরা ধরে নিয়ে যায় ও মুক্তিপণ আদায় করে। এরপর যে কয়েক দিন দুবলার চরে ছিলাম ততদিন চরম আতঙ্কেই ছিলাম। দস্যুদের কারণে শত শত জেলে পরিবার আতঙ্কে আছে।’
বন বিভাগ ও পুলিশ সূত্র জানায়, সুন্দরবনে রাজত্ব ছিল জল-বন দস্যুদের। তাদের দাপটে জেলে, বাওয়ালি, মৌয়াল এমনকি বনরক্ষীরাও আতঙ্কে থাকতেন। এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে অভিযান চালাতে ২০১২ সালে র্যাবের নেতৃত্বে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। ২০১২ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ২২৩টি অভিযানে নিহত হয় ১৩৫ দস্যু। একই সময়ে গ্রেপ্তার করা হয় পাঁচ শতাধিক দস্যুকে। ২০১৬ সালের ৩১ মে মাস্টার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সুন্দরবনে শুরু হয় আনুষ্ঠানিক দস্যুমুক্তকরণ কার্যক্রম। এরপর ৩২টি বাহিনীর ৩২৪ জন সদস্য আত্মসমর্পণ করে। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সরকার সুন্দরবনকে ‘দস্যুমুক্ত’ ঘোষণা করে। আত্মসমর্পণকারী দস্যুদের অনেকে ফিরছে তাদের পুরনো পেশায়।
সুন্দরবনের জলসীমার অধিকতর সুরক্ষায় সম্প্রতি বয়াসিং এলাকায় ভাসমান বর্ডার অবজারভেশন পোস্ট (বিওপি) উদ্বোধন করা হয়েছে। বিজিবির এই বিওপি ছাড়াও সুন্দরবন ও জেলেদের রক্ষায় র্যাব, পুলিশ, নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড ও বন বিভাগের লোকজনকে আরো তৎপর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর পরও দস্যুদের তৎপরতা কমছে না।
কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের অপারেশন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. আশিকুর রহমান বলেন, এই মুহূর্তে সুন্দরবনে পাঁচটি দস্যু বাহিনী সক্রিয় রয়েছে। এসব বাহিনীর তৎপরতা রুখে দেওয়ার পাশাপাশি দস্যু নির্মূলে কোস্ট গার্ড নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। এসব অভিযানে মুক্তিপণের দাবিতে অপহৃত জেলে-বাওয়ালিদের উদ্ধারসহ বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন রক্ষায় কোস্ট গার্ড অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বিতভাবে অভিযান পরিচালনা করছে।
বাগেরহাটের সহকারী পুলিশ সুপার (মোংলা সার্কেল) মুশফিকুর রহমান তুষার বলেন, ‘গত ৫ আগস্টের পর সুন্দরবন ও সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকাগুলোতে নতুন করে কিছু দস্যুর তৎপরতা লক্ষ করা গেছে। আমরা গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করেছি। দস্যু দমনে অভিযান চালাতে পুলিশ প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
সম্পর্কিত খবর

শোভাযাত্রা

রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মরণে জুলাই কন্যারা রিকশা শোভাযাত্রার আয়োজন করেন। ছবি : কালের কণ্ঠ
।
রাতে ফেসবুক পোস্ট ভোরে মিলল ঢাবি শিক্ষার্থীর মরদেহ
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নবনির্মিত রবীন্দ্র ভবনের নিচ থেকে সঞ্জু বারাইক (২৩) নামের এক শিক্ষার্থীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে।
পুলিশ ও হল সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার ভোর পৌনে ৬টার দিকে রবীন্দ্র ভবনের নিচ থেকে সঞ্জু বারাইককে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
জগন্নাথ হলের স্টাফ মানিক কুমার দাস বলেন, ‘ভোরবেলা দেখি ভবনের নিচে একজন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। পরে অন্য স্টাফদের সহযোগিতায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাঁকে মৃত বলে জানান।’
শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মুনসুর বলেন, ‘রবীন্দ্র ভবনের পাশে থাকা সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছি।
ওসি আরো বলেন, ‘এ ঘটনায় আপাতত অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে রাত আড়াইটার দিকে সঞ্জুর নিজ ফেসবুক আইডি থেকে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। সেখানে লেখা ছিল, ‘আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি, আমি দিনের পর দিন কাউকে ডিস্টার্ব করে গেছি, উল্টো মানুষকে দোষারোপ করা আমার একদম ঠিক হয়নি, আমি সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি দিনের পর দিন অন্যায় করেছি, নিজের দোষ ঢেকে অন্যজনকে দোষ দেওয়া আমার ঠিক হয়নি। আমি সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আমার কারণে কারো কোনো ক্ষতি হলে সেই দায় একান্তই আমার, আমি ক্ষমা চাচ্ছি।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ দেবাশীষ পাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সঞ্জু মানসিকভাবে কিছুটা অস্থিরতায় ভুগছিলেন বলে সহপাঠীরা জানিয়েছে। দুই দিন ধরে সে হলে ছিল না। রবিবার ভোর ৪টার দিকে হলে ফিরে আসে, তবে কিছুক্ষণ পরই ছাদের দিকে চলে যায়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফরা তাকে ভবনের নিচ থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেন।’

ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে বিকল্প প্রস্তাব
৭৬ আসনের উচ্চকক্ষ ও সরাসরি ভোট, এক-তৃতীয়াংশ নারী প্রার্থী
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের স্বার্থে জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন নিয়ে নতুন প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে বলা হয়েছে, উচ্চকক্ষের আসনসংখ্যা হতে পারে ৭৬ এবং এসব আসনের সদস্যরা নির্বাচিত হবেন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে। একই সঙ্গে সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোটের প্রশ্নে দলগুলোর মধ্যে বিরোধ থাকায় সেখানেও বিকল্প প্রস্তাব আনা হয়েছে। সেখানে সংরক্ষিত নারী আসন বাদ দিয়ে বিদ্যমান সংসদীয় আসনের নির্বাচনে দলগুলোকে এক-তৃতীয়াংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
গতকাল সোমবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার সংলাপের ১৩তম দিনে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। তবে দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। আজ মঙ্গলবার আবারও আলোচনা চলবে। ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংলাপে উপস্থিত ছিলেন ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া।
কমিশন সূত্র জানায়, সংসদের উচ্চকক্ষের নতুন প্রস্তাবের বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রতিটি জেলা ও প্রতিটি সিটি করপোরেশন এলাকা উচ্চকক্ষের একেকটি একেক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকা হিসেবে বিবেচিত বা চিহ্নিত হবে এবং প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকা থেকে সাধারণ ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে একজন করে উচ্চকক্ষের প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন। বর্তমানে দেশে ৬৪টি প্রশাসনিক জেলা ও ১২টি সিটি করপোরেশন রয়েছে বিধায় উচ্চকক্ষের আসনসংখ্যা হবে ৭৬। জাতীয় সংসদ (নিম্নকক্ষ) এবং উচ্চকক্ষের নির্বাচন একই সময়ে অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের উচ্চকক্ষের নাম প্রস্তাব করা হয় সিনেট। রাজনৈতিক দলগুলোর অধিকাংশই দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিষয়ে একমত হলেও উচ্চকক্ষের সদস্য নির্বাচনের বিষয়ে মতভেদ দেখা দেয়। যে কারণে নতুন এই প্রস্তাব আনা হয়েছে।
সংলাপ শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সমাজের বিরাজমান বৈচিত্র্যকে প্রতিনিধিত্ব করতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু কী পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন হবে সে ব্যাপারে ঐকমত্য হওয়া যাচ্ছে না।
সংসদে নারীদের জন্য স্থায়ীভাবে ১০০ আসন করার ব্যাপারে সবাই একমত হয়েছেন উল্লেখ করে কমিশনের সহসভাপতি বলেন, এ ক্ষেত্রেও পদ্ধতিগত প্রশ্ন এখনো রয়েছে। এ পদ্ধতি নির্ধারণে আমরা এখনো একমতের জায়গায় পৌঁছাতে পারিনি।
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও নারী আসন বৃদ্ধির প্রশ্নে বিএনপি আগের অবস্থানে রয়েছে বলে জানান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, সংসদে নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করার প্রস্তাবে বিএনপি একমত। তবে ওই আসনগুলোতে নির্বাচন বিদ্যমান পদ্ধতিতে হতে হবে।
জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, আমরা উচ্চকক্ষের বিষয়ে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) ব্যবস্থা চালুর পক্ষে। অধিকাংশ দল এ বিষয়ে একমত। নারী আসনের বিষয়েও আমরা ১০০ আসনে পিআর পদ্ধতির পক্ষে।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, সংরক্ষিত নারী আসন বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করেছে কমিশন। আমরা এর বিরোধী। নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন হতে হবে। কমিশন এক-তৃতীয়াংশ আসনে নারীদের মনোনয়ন বাধ্যবাধকতার কথা বলেছে। আমরা এটি সমর্থন করি। তবে এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। এ জন্য আরো সময় প্রয়োজন।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, কমিশনের কর্মকাণ্ড সংগত মনে হচ্ছে না। রাজনৈতিক দলগুলো যেখানে দলের অভ্যন্তরে ৩০ শতাংশ নারীকে কমিটিতে রাখতে পারছে না, সেখানে ৩০ শতাংশ আসনে মনোনয়ন দেওয়ার সামর্থ্য আছে বলে মনে করি না।
এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, বর্তমান ৬৫ অনুচ্ছেদে সংরক্ষিত আসন চায় না কমিশন। আমরা বলেছি, সংরক্ষিত আসন ১০০ করতে। আর বর্তমান বাস্তবতায় ৩০ শতাংশ আসনে নারীদের মনোনয়ন দেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য কঠিন বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, আমরা বলেছি এবার ৫ শতাংশ দেওয়া যেতে পারে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, কমিশন নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী সংরক্ষিত নারী আসন বাতিল ও ৩৩ আসনে নারীদের মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যা এই মুহূর্তে অসম্ভব।
বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন সেলিম বলেন, সংরক্ষিত নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করার ক্ষেত্রে অধিকাংশ দল একমত।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, নারীদের সংরক্ষিত আসন দরকার নেই; বরং তাদের নির্বাচিত হয়েই সংসদে আসা উচিত।
বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীদের পিছিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। নারীদের আসনে সরাসরি নির্বাচন করতে হবে। তিনটি সাধারণ আসন মিলে একটি নারী আসনে ভোট হতে হবে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদউদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, নারীদের সরাসরি নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারলেই তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে।

খুলনায় যুবদল নেতা হত্যা
আরো একজন তথ্যদাতা গ্রেপ্তার, কিলিং মিশনের তিনজন এখনো অধরা
খুলনা অফিস

খুলনার দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান মোল্লা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আলাউদ্দিনকে (২২) গতকাল সোমবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
এর আগে রবিবার রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। মাহবুবের অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য খুনিদের কাছে সরবরাহের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
এদিকে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে কিলিং মিশনের যে তিনজনকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করছে, তাদের কেউ এখনো ধরা পড়েনি।
শনিবার রাতে প্রথমে গ্রেপ্তার করা সজল শেখ নামের চরমপন্থী সদস্য বর্তমানে পুলিশি রিমান্ডে রয়েছে। আজ মঙ্গলবার রিমান্ড শেষে তাঁকে আবার আদালতে তোলা হবে বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কেএমপির দৌলতপুর থানার ওসি মীর আতাহার আলী জানিয়েছেন।
যুবদল নেতা মাহবুবকে শুক্রবার দুপুরে দৌলতপুর থানাধীন মহেশ্বরপাশা পশ্চিম পাড়ার নিজ বাড়ির সামনে তিন অস্ত্রধারী প্রথমে একাধিক গুলি করে এবং পরে দুই পায়ের রগ কেটে হত্যা করে।
দৌলতপুর থানার ওসি জানান, ওই এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলামের ছেলে আলাউদ্দিনকে রবিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে পশ্চিম মহেশ্বরপাশা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সজলের দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা দুজনই নিহত মাহবুবের অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য খুনিদের কাছে সরবরাহের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁদের তথ্যের ভিত্তিতে খুনিরা এসে মাহবুব মোল্লাকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি করে।
কিলিং মিশনের তিন সদস্যকে দ্রুতই গ্রেপ্তর করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে পুলিশ।