পর্যটন খাতের ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনার জন্য মাস্টারপ্ল্যান প্রয়োজন। তবে মাস্টারপ্ল্যান না থাকলে কাজ করা যাবে না—এমন কোনো কথা নেই। ১৯৯৩ সালে পর্যটন করপোরেশন থেকেও একটি মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। সেই প্ল্যান আমলে নিয়ে কেউ কাজ করেনি।
পর্যটন খাতের ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনার জন্য মাস্টারপ্ল্যান প্রয়োজন। তবে মাস্টারপ্ল্যান না থাকলে কাজ করা যাবে না—এমন কোনো কথা নেই। ১৯৯৩ সালে পর্যটন করপোরেশন থেকেও একটি মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। সেই প্ল্যান আমলে নিয়ে কেউ কাজ করেনি।
বাজেট সহয়তা না থাকলে বা বাজেটের অর্থ খরচ করার সক্ষমতা যদি বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের না থাকে, তাহলে কাজ এগোবে না।
দীর্ঘদিন ধরেই মাস্টারপ্ল্যান হওয়ার কথা শুনছি। এটার কাজ কবে শেষ হবে, তা এখনো অনিশ্চিত।
কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন পর্যটন গন্তব্যে আগে যেসব অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে, তা ভেঙে নতুন করে সাজানোর সুযোগ নেই। তবে মাস্টারপ্ল্যান থাকলে পরিকল্পনা করে এগোনো যায়। চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, কক্সবাজার, সিলেট—সব জায়গায়ই পর্যটকদের জন্য অবকাঠামো তৈরি করা আছে।
আমাদের ওভারট্যুরিজমেরও সমস্যা আছে। পুরো বিশ্বেই এর বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। ওভারট্যুরিজমের ফলে পরিবেশের পাশাপাশি প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। তাই যা করতে হবে, পরিকল্পনামাফিক করা ভালো। বিদেশিরা দেশে আসতে চায় না। এ ছাড়া বাংলাদেশে আসার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ বিভিন্ন দেশ ট্রাভেল অ্যালার্ট জারি করেছে। ফলে যারা আসতে আগ্রহী, তারাও আসতে পারছে না। কী করে ট্রাভেল অ্যালার্ট তোলা যায়, সেটা নিয়ে সরকার ও ট্যুরিজম বোর্ডের আলোচনা করা উচিত। আমাদের দেশে বিদেশি ট্যুরিস্টদের কখনোই ক্ষতি হয়নি। এই তথ্য পত্রপত্রিকায় প্রচার করা উচিত।
এই উদ্যোগ ট্যুরিজম বোর্ডকে নিতে হবে। এই তথ্য প্রচার করার দায়িত্ব পালন করতে হবে। মাস্টারপ্ল্যান হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে, তা নয়। রাজনৈতিক বা সামাজিক যে কারণেই ট্রাভেল অ্যালার্ট জারি করা হোক না কেন, সেটাকে অ্যাড্রেস করে সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। বাংলাদেশ বিদেশি ট্যুরিস্টদের জন্য নিরাপদ, সেটা প্রচার করতে ট্যুরিজম বোর্ডকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করতে হবে। শুধু তাত্ত্বিক বিষয়ে কথা বলে কোনো ফল আসবে না। যা আছে, সেটা আগে কাজে লাগাতে হবে।
ট্রাভেল অ্যালার্ট তুলে নিলে কিছুসংখ্যক টুরিস্ট আমরা পেতাম। এটা তুলে নেওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে না। এই খাত নিয়ে নতুন সরকারকেও কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন এখন পর্যন্ত পর্যটন খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কোনো বৈঠক করেননি। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপিপি বলে একটা কথা আছে। কিন্তু এখানে প্রাইভেট পার্টনারদের সঙ্গে নীতিনির্ধারকরা আলোচনা করছেন না।
আমলারা মনে করেন, তাঁরাই সবকিছু ভালোভাবে বোঝেন। যাঁরা প্রাইভেট সেক্টরে আছেন, তাঁদের কথা শুনতে হবে। কোনটা করলে ভালো হবে, কোনটা করলে খারাপ হবে, সেটা না শুনলে যে সরকারই থাকুক না কেন, লাভ হবে না। পর্যটন খাত নিয়ে সরকারের আগ্রহ থাকলে তারা সেই বার্তা দিত। আগের তুলনায় বাজেট এবার অর্ধেক কমে গেছে। সরকারের কোনো সদিচ্ছা দৃশ্যমান নয়। প্রাইভেট সেক্টরকে গুরুত্ব দিয়ে এগোতে হবে।
সরকারকেই নীতি নির্ধারণ করতে হবে, তা না হলে এই সেক্টর এগোবে না। প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কার ট্যুরিজম অনেক এগিয়ে গেছে। গত এক মাসে ১০ লাখ পর্যটক এনেছে দেশটি। তারা পারছে, কারণ সেখানকার ট্যুরিজম চলছে পেশাদার মানুষ দিয়ে। তাদের বোর্ডে ১১ জন আছে। ১১ জনই প্রাইভেট সেক্টরের। আমাদের এখানে ৭৫-৮০ শতাংশ সরকারি আমলা। বাকি দু-তিনজন প্রাইভেট সেক্টরের। যাঁরা পর্যটন খাতকে ধারণ করেন, এটা নিয়ে চিন্তা করেন, তাঁদের ট্যুরিজম বোর্ডে দেখা যায় না। এই বোর্ডের সক্ষমতা বাড়াতে হলে প্রাইভেট সেক্টরের মানুষদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। তাঁদের কথা শুনে পলিসি নির্ধারণ করতে হবে।
ট্যুরিজম সেক্টরে যে বিদেশি মুদ্রা আয় হয়, তা দেশেই থাকে। দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকে যে আয় হয়, সেটার অনেকটাই চলে যায় এলসি খুলে পণ্য আমদানি করতে। পর্যটন হলো কমিউনিটিভিত্তিক মাল্টি-ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেক্টর। এর সঙ্গে এভিয়েশন, হোটেল, ট্রান্সপোর্ট, স্যুভেনির শপ ও লোকাল ট্যুর অপারেটরের ব্যবসা জড়িত। একটা ট্যুরিস্ট এলে ২৭ থেকে ৩০টি প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করতে পারে। ফলে সামাজিক উন্নয়নে ট্যুরিজম সেক্টর বড় ভূমিকা পালন করে। এই গুরুত্বটা অনুধাবন করতে হবে।
লেখক : পর্যটন ও এভিয়েশন বিশ্লেষক, দ্য বাংলাদেশ মনিটরের সম্পাদক
অনুলিখন : মাসুদ রুমী
সম্পর্কিত খবর
তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে করা হয়েছে পাট চাষ। সেই পাট কেটে মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পানিতে জাগ দেওয়ার জন্য। গতকাল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের চর বাঘমারা থেকে তোলা। ছবি : মো. আসাদুজ্জামান
।খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকার আড়াই বছর বয়সী নূরজাহান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল তোলা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম
।আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দলটির আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দলটি আগামী জাতীয় সংসদে নিম্নকক্ষে আংশিক আনুপাতিক ও উচ্চকক্ষে পূর্ণ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক দ্বিকক্ষীয় সাংবিধানিক কাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দলের নেতারা বলেন, একদলীয় শাসনব্যবস্থা জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া আত্মঘাতী। এতে ফ্যাসিবাদের দোসররা আরো উৎসাহী হচ্ছে। আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, তবে ফ্যাসিবাদ ফের মাথা চাড়া দেবে।
গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী শৈথিল্য দেখালেও পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে দুষ্কৃতকারীরা দ্রুত প্রতিহত হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন—দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মূসা, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা ফয়সাল আহমদ। এ ছাড়া ছিলেন মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা হারুনুর রশীদ, মাওলানা রুহুল আমীন খান, মাওলানা হাসান জুনাইদ, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন ও মাওলানা মুহসিন বেলালী।
পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার ওয়াহেদুজ্জামান (৭১) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পরিবারের সদস্যরা গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে পাঠানো হয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে (মেডিসিন ওয়ার্ড)। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করে নেন।
পরের দিন ১৫ জুলাই সকালের দিকে রোগী কিছুটা সুস্থ বোধ করলে তাঁকে ছুটি দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই রোগী আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। চিকিৎসকসংকটে দিনের প্রায় ১৮ ঘণ্টাই ইন্টার্ন চিকিৎসকনির্ভরতার মাধ্যমে চলছে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা।
খুব জরুরি প্রয়োজনে ফোনে পরামর্শ নেওয়া হয় অভিজ্ঞ ডাক্তারদের। এর বাইরে এফসিপিএস ডিগ্রিধারী বা এফসিপিএস করছেন এমন মধ্যম মানের চিকিৎসকরা থাকেন ভর্তির দিন ধার্য থাকা ওয়ার্ডগুলোতে। এ ছাড়া দিনের ২৪ ঘণ্টা প্রতিটি ওয়ার্ডেই চার থেকে ছয়জন করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে হয় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই ইন্টার্নদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
পাবনার ঈশ্বদীর রোগী ওয়াহেদুজ্জামানের ছেলে হামিম আবেদীন বলেন, ‘রামেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিনে একবার করে আসার কারণে আমার বাবার সমস্যাগুলো জটিল হয়ে গিয়েছিল, যা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুঝে উঠতে পারেননি।’
ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি রোগীর সেবা দেওয়ার। কিন্তু যে পরিমাণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়, সে পরিমাণ ইন্টার্ন চিকিৎসকও নেই।’
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বলেন, ‘হাসপাতালে পর্যাপ্ত আনসার সদস্যও নেই। অন্যদিকে যেসংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে, সেসংখ্যক অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাসামগ্রী ও ওষুধপথ্যও আমরা দিতে পারছি না। কারণ সব কিছু বরাদ্দ হচ্ছে ৫০০ শয্যার বিপরীতে। কিন্তু এখানে শয্যাই আছে এক হাজার ২০০টি। এর বাইরেও অতিরিক্ত আরো দুই থেকে আড়াই হাজার রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের নানাভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’