গত শুক্রবার রাতে ময়মনসিংহের ফুলপুর-হালুয়াঘাট সড়কে বাস ও মাহিন্দ্রার সংঘর্ষে নিহত আটজনের পরিবারেই চলছে শোকের মাতম। নিহত ব্যক্তিদের সবাই ছিলেন মাহিন্দ্রার যাত্রী। মারা গেছেন মাহিন্দ্রার চালকও। সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, নিহত সবার লাশ তাঁদের স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
ময়মনসিংহে সড়ক দুর্ঘটনা
যানের বেপরোয়া গতিতেই ঝরেছে আট জীবন
নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ ফুলপুর ও হালুয়াঘাট প্রতিনিধি

ফুলপুর থেকে এক কিলোমিটার দূরে কাজিয়াকান্দায় ওই দুর্ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, উভয় গাড়িই বেপরোয়াভাবে চালানো হচ্ছিল। বৃষ্টিভেজা সড়ক ছিল পিচ্ছিল। দুর্ঘটনাস্থল ছিল ঘুটঘুটে অন্ধকার।
বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনায় জড়িত বাসটির ফিটনেস সনদ হালনাগাদ ছিল। তবে মাহিন্দ্রাটির ব্যাপারে সংস্থাটির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তথ্য দিতে পারেননি। বাসটি চালক নাকি তাঁর সহকারী চালাচ্ছিলেন—এ ব্যাপারেও প্রশাসন নিশ্চিত তথ্য দিতে পারেনি। বাসের চালকের সহকারী ও চালক পলাতক রয়েছেন।
নিহত ব্যক্তিদের সবার পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্দা থানার কাজিম উদ্দিন (২৮), ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার রুবেল (৩০), শামসুদ্দিন (৬৫) ও হাছিনা খাতুন (৫০)। নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা থানার লাল মিয়া (৩৩), ময়মনসিংহের ফুলপুরের ফরিদ মিয়া (৩৮), জাহের আলী (৭০) ও নয়ন মিয়া (৪০)। হালুয়াঘাটের কয়রাহাটি গ্রামে গেলে নিহত শামছুদ্দিনের ভাই আলাউদ্দিন বলেন, শামছুদ্দিন বাজারে সবজি বিক্রি করে সংসার চালাতেন। তাঁর দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। তারাকান্দা থেকে বিয়ের দাওয়াত খেয়ে দুর্ঘটনাকবলিত মাহিন্দ্রা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। হাসিনা খাতুন সাত বছরের মেয়ে মার্জিয়াকে নিয়ে ফুলপুর বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় নিহত হন। তাঁর মেয়ে মার্জিয়া ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হালুয়াঘাট উপজেলার জুগলী ইউনিয়নের জয়রামকুরা গ্রামের আফাজ উদ্দিনের ছেলে মাহিন্দ্রাচালক মো. রুবেল মিয়া (৩০) ঘটনাস্থলেই নিহত হন। তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি দুই পুত্রসন্তান, স্ত্রী ও বৃদ্ধ মা-বাবা রেখে গেছেন। রুবেল ছিলেন অতি দরিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে পরিবারটি চরম মানবিক সংকটে পড়েছে। নিহতের বৃদ্ধ বাবা আফাজ উদ্দিন বলেন, ‘মাহিন্দ্রা চালিয়ে আমার ছেলে ছয়জনের পরিবার চালাত। তার উপার্জনে আমরা দুই বেলা খেতে পারতাম। এক মাস আগে সে ৯৫ হাজার টাকা ঋণ করে মাহিন্দ্রা কিনেছিল। এখনো সেই টাকা শোধ করেনি। তার মৃত্যুতে এখন আমরাও বেঁচে থেকে মরে গেছি।’ নিহত নেত্রকোনার পূর্বধলার লাল মিয়ার (৩৫) খালাতো ভাই ইদ্রিস আলী বলেন, তাঁর ভাই দিনমজুর ছিলেন। কাজ করে বাড়ি যাওয়ার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, নিহতের পরিবারে স্ত্রীসহ তিন শিশু আছে। নিহত জাহের আলীর ছেলে ইয়াসিন বলেন, সন্ধ্যার পর বাবার সঙ্গে মোবাইলে শেষবারের মতো কথা হয়েছে।
ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার-উল-আলম বলেন, বাসটি চালক নাকি তাঁর সহকারী চালাচ্ছিলেন, তা তদন্তে বের হবে। বাসটি জব্দ করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে গতকাল সকালে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম।
সম্পর্কিত খবর

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে পাট চাষ

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে করা হয়েছে পাট চাষ। সেই পাট কেটে মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পানিতে জাগ দেওয়ার জন্য। গতকাল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের চর বাঘমারা থেকে তোলা। ছবি : মো. আসাদুজ্জামান
।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকার আড়াই বছর বয়সী নূরজাহান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল তোলা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম
।
২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের
নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দলটির আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দলটি আগামী জাতীয় সংসদে নিম্নকক্ষে আংশিক আনুপাতিক ও উচ্চকক্ষে পূর্ণ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক দ্বিকক্ষীয় সাংবিধানিক কাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দলের নেতারা বলেন, একদলীয় শাসনব্যবস্থা জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া আত্মঘাতী। এতে ফ্যাসিবাদের দোসররা আরো উৎসাহী হচ্ছে। আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, তবে ফ্যাসিবাদ ফের মাথা চাড়া দেবে।
গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী শৈথিল্য দেখালেও পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে দুষ্কৃতকারীরা দ্রুত প্রতিহত হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন—দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মূসা, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা ফয়সাল আহমদ। এ ছাড়া ছিলেন মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা হারুনুর রশীদ, মাওলানা রুহুল আমীন খান, মাওলানা হাসান জুনাইদ, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন ও মাওলানা মুহসিন বেলালী।

রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা
রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী

পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার ওয়াহেদুজ্জামান (৭১) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পরিবারের সদস্যরা গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে পাঠানো হয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে (মেডিসিন ওয়ার্ড)। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করে নেন।
পরের দিন ১৫ জুলাই সকালের দিকে রোগী কিছুটা সুস্থ বোধ করলে তাঁকে ছুটি দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই রোগী আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। চিকিৎসকসংকটে দিনের প্রায় ১৮ ঘণ্টাই ইন্টার্ন চিকিৎসকনির্ভরতার মাধ্যমে চলছে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা।
খুব জরুরি প্রয়োজনে ফোনে পরামর্শ নেওয়া হয় অভিজ্ঞ ডাক্তারদের। এর বাইরে এফসিপিএস ডিগ্রিধারী বা এফসিপিএস করছেন এমন মধ্যম মানের চিকিৎসকরা থাকেন ভর্তির দিন ধার্য থাকা ওয়ার্ডগুলোতে। এ ছাড়া দিনের ২৪ ঘণ্টা প্রতিটি ওয়ার্ডেই চার থেকে ছয়জন করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে হয় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই ইন্টার্নদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
পাবনার ঈশ্বদীর রোগী ওয়াহেদুজ্জামানের ছেলে হামিম আবেদীন বলেন, ‘রামেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিনে একবার করে আসার কারণে আমার বাবার সমস্যাগুলো জটিল হয়ে গিয়েছিল, যা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুঝে উঠতে পারেননি।’
ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি রোগীর সেবা দেওয়ার। কিন্তু যে পরিমাণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়, সে পরিমাণ ইন্টার্ন চিকিৎসকও নেই।’
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বলেন, ‘হাসপাতালে পর্যাপ্ত আনসার সদস্যও নেই। অন্যদিকে যেসংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে, সেসংখ্যক অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাসামগ্রী ও ওষুধপথ্যও আমরা দিতে পারছি না। কারণ সব কিছু বরাদ্দ হচ্ছে ৫০০ শয্যার বিপরীতে। কিন্তু এখানে শয্যাই আছে এক হাজার ২০০টি। এর বাইরেও অতিরিক্ত আরো দুই থেকে আড়াই হাজার রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের নানাভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’