আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের ‘সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এর ফলে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর তাঁরা তাঁদের সরকারি কর্মসূচির সঙ্গে নির্বাচনী কর্মসূচি বা কর্মকাণ্ড যোগ করতে পারবেন না। কোনো ধরনের নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারবেন না। এ ছাড়া নির্বাচনী প্রচারে দেশে এই প্রথমবারের মতো পোস্টার ব্যবহার নিষিদ্ধ হচ্ছে।
আচরণবিধির খসড়া চূড়ান্ত
নির্বাচনে পোস্টার ব্যবহার নিষিদ্ধ হচ্ছে
- বিধিভঙ্গের জরিমানা পাঁচ হাজার থেকে বাড়িয়ে দেড় লাখ টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক

এসব বিধি-বিধান যুক্ত করে নির্বাচন কমিশন গতকাল বৃহস্পতিবার ‘রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০২৫-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে। কমিশনের সপ্তম সভায় এই খসড়া চূড়ান্ত করা হয়।
সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের আলোচ্যসূচিতে ছিল রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা চূড়ান্ত করা এবং জাতীয় সংসদের আসনগুলোর সীমানা নির্ধারণ। আমরা প্রথম এজেন্ডাটি সম্পন্ন করতে পেরেছি। সময়ের অভাবে এবং আমাদের জিআইএসের (জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম) কিছু উপাত্ত এখনো বাকি থাকায় সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ বিষয়ক আলোচনাটা এগিয়ে নেওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে আরপিওর ধারা ৯১-তে কোনো প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করার পক্ষে নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার রয়েছে। এটা আচরণবিধিতে সন্নিবেশ করা হচ্ছে। বিদ্যমান আগের আচরণবিধিতে এটা নেই। আচরণবিধিতে নির্বাচনী প্রচারে বিলবোর্ডের ব্যবহারের পক্ষে বিধি ছিল না, এটা যুক্ত করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ‘সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যদেরও যুক্ত করা হয়েছে। ফলে তাঁরা নির্বাচনী প্রচারে থাকতে পারবেন না। বিভিন্ন সরকারি সুবিধা, যেমন—সার্কিট হাউস, ডাকবাংলো ও রেস্ট হাউস ব্যবহারের ওপরে কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। প্রচার-প্রচারণায় পরিবেশবান্ধব সামগ্রীর ব্যবহারের ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়েছে। ভোটার স্লিপ ইনট্রোডিউস করার ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। টি-শার্ট, জ্যাকেট ইত্যাদি ব্যবহারে যে বিধিনিষেধ ছিল, সে বিষয়ে একটু শিথিল মনোভাব পোষণ করা হয়েছে। অস্ত্রের সংজ্ঞার মধ্যে দেশীয় অস্ত্র যোগ করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের বিষয়টি বিশদভাবে যোগ করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে কোনো ধরনের ফরেন ইনভেস্টমেন্ট বিষয়ে না করা হয়েছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, খসড়ায় বলা আছে, ‘কোন প্রার্থী বা তাঁহার নির্বাচনী এজেন্ট বা অন্য কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করিয়া নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা পরিচালনা করিতে পারিবেন, তবে উক্ত ক্ষেত্রে প্রার্থী বা তাঁহার নির্বাচনী এজেন্ট বা উক্ত ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নাম, অ্যাকাউন্ট আইডি, ই-মেইল আইডিসহ অন্যান্য শনাক্তকরণ তথ্যাদি উক্তরূপে প্রচার-প্রচারণা শুরুর পূর্বে রিটার্নিং অফিসারের নিকট দাখিল করিতে হইবে। ডিজিটাল বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণাকালে কাঁহারও ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করিয়া কোন বক্তব্য বা বিবৃতি, কোন ধরনের তিক্ত বা উসকানিমূলক বা মানহানিকর কিংবা লিঙ্গ, সাম্প্রদায়িকতা বা ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে—এইরূপ কোন বক্তব্য বা বিবৃতি প্রদান, কনটেন্ট বানানো ও প্রচার করা যাইবে না।’
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ আরো বলেন, নির্বাচনী প্রচারে শব্দের মাত্রার ওপরে কোনো সীমা ছিল না। সেটাকে ৬০ ডেসিবল পর্যন্ত সীমায়িত করা হয়েছে। প্রচারের সময় তিন সপ্তাহই থাকবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেসব প্রার্থী সভাপতি বা সদস্য হিসেবে পরিচালনা পর্ষদে থাকবেন বা মনোনীত হয়েছেন বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাঁদের প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পরে সেখান থেকে পদত্যাগ করতে হবে। কমনভাবে একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে সব প্রার্থী যাতে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করতে পারেন বা করেন, সেই বিধান রাখা হয়েছে। বিভিন্ন টিভি মিডিয়ার ডায়লগে প্রার্থীদের অংশগ্রহণের বিষয়ে সম্মতি দেওয়া হয়েছে। বিধিমালা লঙ্ঘনে সাধারণ শাস্তি ছিল ছয় মাস কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, সেটিকে ছয় মাস কারাদণ্ড এবং দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই বিধিমালা মেনে চলার ব্যাপারে অঙ্গীকারনামা দেওয়ার বিধান নতুনভাবে সংযোজিত করা হয়েছে। এটি দল ও প্রার্থী উভয়ের জন্য আচরণ বিধিমালার চূড়ান্ত খসড়া। তবে আচরণ বিধিমালার অনেক পরিবর্তন বা সংশোধন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিওর) ওপর নির্ভরশীল। চূড়ান্ত এই খসড়া নির্বাচনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে এবং তাতে লেখা থাকবে ‘আরপিও সংশোধন সাপেক্ষে’।
আরপিও সংস্কারের আগেই আচরণ বিধি সংশোধনের সিদ্ধান্ত কেন—এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি তো বলে দিলাম ‘সাপেক্ষে’, এটা হতেই পারে। কারণ আমাদের কিছু জিনিস অবহিতকরণ প্রয়োজন এবং এটার সঙ্গে আবার মতামতের বিষয় আছে। এটা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা হবে, আমরা চাই সে আলোচনাগুলো হোক।”
পোস্টার কি একবারে থাকবে না—এমন প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘পোস্টার আমরা রাখছি না। প্রার্থীরা পোস্টারে প্রচার চালাতে পারবেন না। ব্যানার আছে, ফেস্টুন আছে, বিলবোর্ড নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়া আছে, লিফলেট-হ্যান্ডবিল আছে; এগুলো সব আছে, শুধু পোস্টার নাই।’
অন্য এক প্রশ্নে তিনি বলেন, রিটার্নিং অফিসাররা সংশ্লিষ্ট আসনের সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে একটি প্লাটফর্ম থেকে এক দিনে তাঁদের ইশতেহার বা ঘোষণাপত্রগুলো পাঠ করার ব্যবস্থা করবেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা আচরণবিধি সংশোধনের খসড়া অনুমোদন করেছি। এটার ওপরে যে আরপিও সংশোধনের বিষয় আছে, আবার রাজনৈতিক কনসেন্সাসের ভিত্তিতে যদি কিছু পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়, সেটাও করতে হতে পারে। সুতরাং এটি খসড়া আকারেই নীতিগত অনুমোদন দিয়ে আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে পোস্ট করে দেব। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত প্রয়োজন হতে পারে। ডিসকাশন তো একটা চলমান প্রক্রিয়া।’
সম্পর্কিত খবর

মার্কিন শুল্ক সংকট
ভার্চুয়াল বৈঠকের আগেও আসতে পারে সুখবর
- ৩৫% থেকে শুল্ক কমে ১৮-২০% হওয়ার প্রত্যাশা
নিজস্ব প্রতিবেদক

শুল্ক নিয়ে পুনরায় বৈঠকের সময় চেয়ে দফায় দফায় চিঠি দেওয়া হয়েছে মার্কিন প্রশাসনকে। ওয়াশিংটনে গিয়ে সরাসরি বৈঠকের আহ্বান জানানো না হলেও আগামী ২৯ জুলাই বাংলাদেশের সঙ্গে ভর্চুয়ালি বৈঠক করবেন মার্কিন প্রতিনিধিরা। তবে প্রত্যাশা করা হচ্ছে, ওই ভার্চুয়াল বেঠকের আগেই শুল্ক বিষয়ে ওয়াশিংটন থেকে বাংলাদেশের জন্য আসতে পারে কোনো সুখবর। এর আগের টানা তিন দিনের বৈঠকের পর থেকে এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়গুলো জানিয়ে যেসব ডকুমেন্ট দেওয়া হয়েছে, তার আলোকেই বাংলাদেশের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে পারে মার্কিন প্রশাসন।
গতকাল শুক্রবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সূত্রে আরো জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ২৯ জুলাই ভার্চুয়ালি বৈঠক করা হবে এবং ওই বৈঠকেই শুল্ক বিষয়ে আলোচনা হবে। এরপর এখন পর্যন্ত নতুন করে মার্কিন প্রশাসন থেকে আর কিছু জানানো হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করছি, আগামী ২৯ জুলাইয়ের ভার্চুয়াল বৈঠকের আগেও শুল্কের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার নতুন করে কোনো ঘোষণা দিতে পারে।
বাংলাদেশের তরফ থেকে দেওয়া ডকুমেন্টগুলোতে কী ধরনের তথ্য দেওয়া হয়েছে এবং বাংলাদেশ আসলে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে, সে বিষয়ে বাণিজ্যসচিব বলেন, ‘আমরা তো তাদের সঙ্গে যে চুক্তি করব, তার ওপরই প্রস্তুতি নিচ্ছি। চুক্তির খসড়ার ওপর এবং তাদের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মূলত আমরা তথ্যাদি এবং আমাদের মতামত তুলে ধরেছি।
তিনি বলেন, ‘মার্কিন প্রশাসন ইন্দোনেশিয়ার বিষয়ে জানিয়েছে—তাদের ওপর ১৯ শতাংশ শুল্ক ধার্য করবে। এ ছাড়া ভারতের সঙ্গে ২০ শতাংশ শুল্কের বিষয় উল্লেখ করে চুক্তি হতে পারে। আমরাও প্রত্যাশা করছি, ৩৫ শতাংশ থেকে কমে ১৮ থেকে ২০ শতাংশের মতো শুল্ক নির্ধারণ করা হতে পারে বা এর চেয়ে কমও হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এখন আগামী ২৯ জুলাইয়ের ভার্চুয়াল মিটিংয়ের জন্যই অপেক্ষা করছি। সেই সঙ্গে আমরা আশা করছি, ২৯ জুলাইয়ের ভার্চুয়াল মিটিংয়ের পরিবর্তে মার্কিন প্রশাসন থেকে প্রস্তাব আসতে পারে সেখানে গিয়ে সরাসরি বৈঠকের। এই কয় দিনের মধ্যে সে রকম প্রস্তাব আসতে পারে—এমন প্রত্যাশাও রয়েছে আমাদের।’

সরেজমিন
আ. লীগের কার্যালয়ের সামনে নতুন ব্যানার করা হচ্ছে পরিষ্কার
তৌফিক হাসান

রাজধানীর গুলিস্তানের শহীদ আবরার ফাহাদ এভিনিউয়ে (সাবেক বঙ্গবন্ধু এভিনিউ) কার্যক্রম নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ভবনটিকে আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট হিসেবে তৈরি করা হবে। আর এই ইনস্টিটিউটেই ফ্যাসিবাদের উত্থান, কার্যকলাপ ও পতন নিয়ে পড়াশোনা ও গবেষণা করা হবে।
গতকাল শুক্রবার ওই কার্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে এবং সেখানে উপস্থিত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
দেখা যায়, ভবনটির দেয়ালে দুটি লাল রঙের ব্যানার লাগানো। উভয় ব্যানারেই লেখা, ‘আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট’। ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা যায়, নিচতলায় পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলছে। ভেতরে জমে থাকা ময়লা পানি ওয়াসার স্যুয়ারেজের গাড়ি দিয়ে নিষ্কাশন করা হচ্ছে।
শ্রমিকদের একজন হাফিজুর রহমান জানান, বুধবার থেকে তাঁরা এই কাজ করছেন। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘আমরা দৈনিক হিসেবে কাজ করতাছি।
ভবনটির বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সদস্য এস এম শাহ আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখানে আমরা ফ্যাসিবাদের উত্থান-পতন নিয়ে স্টাডি করব। একই সঙ্গে ফ্যাসিজম রোধে আমরা কী করতে পারি তা নিয়েও বিস্তর স্টাডি করব। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এটা নিয়ে সচেতন করব।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা চিন্তা করেছি যে গুলিস্তানের মতো ব্যবসায়ী অঞ্চলে একটা ভবন আমরা কিভাবে ব্যবহার না করে ফেলে রাখি। এটাকে ঠিকঠাক করতে পারলে আশপাশের জনগণ উপকৃত হবে। এটা হয়েছিল গণশৌচাগার। গুলিস্তানের মতো একটা জায়গায় এত দুর্গন্ধ সহনীয় নয়। তাই আমরা নিজস্ব উদ্যোগে এটা পরিষ্কারের কার্যক্রম শুরু করেছি।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যাত্রাবাড়ী থানার সংগঠক মুজাইদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত ১৭ বছর এখান থেকে যে ফ্যাসিজম চালানো হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এই ভবনে। এটিকে সরকারিভাবে দেশের স্বার্থে কিভাবে কাজে লাগানো যায় সে চিন্তাই আমরা করছি। কবে নাগাদ এই কার্যক্রম শেষ হবে তা এখনো বলা যাচ্ছে না।’
এর আগে গত ১৭ মে ভবনটিতে টাঙানো হয়েছিল ‘জুলাই যোদ্ধাদের প্রধান কার্যালয়’ লেখা ব্যানার। তবে কে বা কারা এটি টাঙিয়েছিল সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভবনটিতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে ভবনটিকে গণশৌচাগার হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়। প্রায় এক বছর ধরে মলমূত্র জমে থাকার কারণে উৎকট গন্ধও তৈরি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গুলিস্তানে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ১০ তলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি ২০১৮ সালের ২৩ জুন উদ্বোধন করেছিলেন দলের সভাপতি ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে সেখানে দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল।

জামায়াত আমির
দল নিয়ন্ত্রণ করেছি দেশও নিয়ন্ত্রণ করতে পারব
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘জামায়াতে ইসলামী দল নিয়ন্ত্রণ করেছে, দেশও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। যারা নিজেদের দলই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তারা দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারবে না।’
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ শাখার রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের বেগমপাড়া কিংবা পিসিপাড়া নেই উল্লেখ করে দলটির আমির বলেন, জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতা কখনোই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাননি এবং যাবেনও না।
জামায়াত আমির বলেন, বিগত ৫৪ বছরে জামায়াতে ইসলামী দেশের একজন নাগরিকের প্রতিও অবিচার করেনি, জুলুম করেনি। জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতাকর্মী চাঁদাবাজি কিংবা সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত হননি, হবেও না। জামায়াত দল নিয়ন্ত্রণ করেছে, দেশও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দেশের সংকটকালে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জামায়াতে ইসলামীর নেতারা বিদেশ থেকে দেশে এসে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আধিপত্যবাদের দোসর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। যে কারণে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় বিচারিক হত্যা করা হয়েছে।
পৃথিবীর একমাত্র অসামপ্রদায়িক ধর্ম ইসলাম উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, মাদক কারবারি, ধর্ষক, খুনি, লুটেরাদের ভয় আছে—এ জন্য তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে।
আমিরে জামায়াত বলেন, সব ধর্মের নারী-পুরুষই রাষ্ট্রের কাছে সমান। রাষ্ট্র ধর্ম বা লিঙ্গের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য করতে পারে না। ইনসাফভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে সবার সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, ইসলাম ও দেশপ্রেমিক সবাইকে সঙ্গে নিয়ে পথ চলতে চায় জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতের রাজনীতি হবে কেবলই মানুষ ও মানবতার কল্যাণে।
জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ প্রমুখ।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জামায়াতে ইসলামী আগামীতে রাষ্ট্র পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মানুষের কল্যাণ সাধনের জন্যই জামায়াতে ইসলামী ব্যাপকভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। জামায়াতে ইসলামীকে কোনো ষড়যন্ত্রই অগ্রযাত্রা থেকে থামাতে পারেনি, পারবেও না। একটি বৈষম্যহীন, সুখী-সমৃদ্ধ, আধুনিক, কল্যাণ ও মানবিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে এগিয়ে আসার জন্য তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

নীলক্ষেতে প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে এইচএসসির ব্যাবহারিক খাতা
- অঙ্কনসহ পূর্ণ খাতা কিনে নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা
শিক্ষার মান ও নৈতিক অবক্ষয়ের অভিযোগ
মানজুর হোছাঈন মাহি

এইচএসসি পরীক্ষার ব্যাবহারিক খাতা শিক্ষার্থীদের নিজ হাতে লেখার কথা। কারণ এতে কেবল তথ্য নয়, শেখার প্রক্রিয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে ঠিক উল্টো। রাজধানীর নীলক্ষেত এলাকায় এখন একটি সরল হিসাব—টাকা দিলেই মিলবে পুরো লেখা ও অঙ্কনসহ খাতা।
রাজধানীর খিলগাঁও মডেল কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শরীফ আহমেদ (ছদ্মনাম) চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। সে এখনো কোনো ব্যাবহারিক খাতা লেখেনি। কারণ জানতে চাইলে বলে, ‘সব খাতা নীলক্ষেত থেকে কিনে নেব।
শুধু শরীফ নয়, রাজধানীর বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই প্রবণতা ব্যাপক। তারা ২০০ থেকে ৪০০ টাকায় নীলক্ষেত থেকে কেনে অঙ্কন ও লেখা সম্পন্ন ব্যাবহারিক খাতা—যেন একটি অবাধ বাণিজ্য এবং চলছে প্রকাশ্যেই।
নীলক্ষেতের দোকানে সরেজমিন : ‘লিখে দিচ্ছে আমাদের লোক’
শিক্ষার্থী পরিচয়ে ঢাকার নীলক্ষেতের ইসলামিয়া মার্কেটে সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, ব্যাবহারিক খাতার এই ‘বাজার’ বেশ সুসংগঠিত।
১৩৮ নম্বর দোকান ‘হ্যাপি বুক হাউজ’-এ গিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের খাতা চাইলে দোকানদার বলেন, ‘পেয়ে যাবেন, আজকেই দেওয়া যাবে। একদম আপডেট খাতা।
৯৪ নম্বর দোকান ‘সালমা বই ঘর’-এ গেলে পুরো বিজ্ঞান বিভাগের এক সেট খাতা দেখানো হয়। রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, উচ্চতর গণিত ও আইসিটি—সব বিষয়ের খাতা অঙ্কনসহ প্রস্তুত। দোকানদার জানান, প্রতিটি খাতা ৩০০ টাকা, আইসিটির জন্য ২০০ টাকা—মোট দাম তিন হাজার ৪০০ টাকা।
১০৩ নম্বর দোকান ‘ইব্রাহীম মেডিকেল বুক হাউজ’-এও একই চিত্র। প্রশ্ন করলে দোকানি বলেন, ‘আমাদের লোক আছে, তারাই লিখে দেয়।’ আবার ‘হ্যাপি বুক হাউজ’-এর একজন বলেন, ‘নার্সিং ইনস্টিটিউটের ছাত্রীরা এগুলো লেখেন ও আঁকেন।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রবণতা শিক্ষাব্যবস্থার ভয়াবহ এক অনিয়ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিনুর রশীদ বলেন, “ব্যাবহারিক খাতার কেনাবেচা এখন এক ধরনের ‘স্টার্টআপ বিজনেস’-এ পরিণত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা শিখছে না, বরং শিখছে কিভাবে অর্থের বিনিময়ে পাস করা যায়।”
তিনি আরো বলেন, ‘এই সংস্কৃতি শিক্ষক, প্রিন্সিপাল ও প্রশাসনের জেনেও চোখ বন্ধ রাখার ফল। ওপেন সিক্রেট এই দুর্নীতি শুধু শিক্ষার মান নয়, একটি জাতির ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছে।’
শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের আরেক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, ‘এটি একাডেমিক ফ্রডের সবচেয়ে বড় উদাহরণ। টার্ম পেপার, থিসিস, ব্যাবহারিক—সবই টাকা দিয়ে কেনা যাচ্ছে। এখনই না থামালে ভবিষ্যতে আমরা আত্মপ্রবঞ্চনার মধ্যে ডুবে যাব।’
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহসানুল কবির বলেন, ‘ব্যাবহারিক খাতার কেনাবেচা গুরুতর সমস্যা। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের খাতা নিজেরা লেখায় না, তারা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের উচিত কেনা খাতা গ্রহণ না করা। প্রয়োজনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যায়ে কড়া মনিটরিং ও অডিট চালু করতে হবে।’