ঢাকার বাইরে পৌর এলাকাগুলোতে এডিস মশার উপস্থিতি বেশি পাওয়া যাচ্ছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) সম্প্রতি চারটি পৌর এলাকায় জরিপ করে চারটিতে এডিস মশার ঘনত্ব বেশি পেয়েছে। এই চার পৌর এলাকা হলো ঝিনাইদহ, মাগুরা, পিরোজপুর ও পটুয়াখালী।
গতকাল বুধবার বিকেলে আইইডিসিআর অডিটরিয়ামে আয়োজিত ‘ডেঙ্গুর বাহকের কীটতাত্ত্বিক জরিপ ২০২৪-২৫ অবহিতকরণ সভায়’ এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সভায় জানানো হয়, এডিস মশার উপস্থিতি জানতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম; মার্চে বরিশাল এবং বাকি এলাকাগুলোতে জরিপ পরিচালিত হয়েছে মে মাসে। কীটতত্ত্ববিদদের নেতৃত্বে এ জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
সভায় জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন। তিনি বলেন, এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের স্বীকৃত পদ্ধতি হলো ‘ব্রুটো ইনডেক্স (বিআই)’।
এই মানদণ্ডে লার্ভার ঘনত্ব ২০ শতাংশের বেশি হওয়া মানে সেখানে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিশ্চিতভাবে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হয়। এ ছাড়া হাউস ইনডেক্স ১০-এর বেশি হলে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়।
জরিপে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ পৌর এলাকায় ব্রুটো ইনডেক্স ৬০ শতাংশ। এরপর মাগুরায় ৫৫.৫৬ শতাংশ, পিরোজপুরে ২০ শতাংশ ও পটুয়াখালীতে ১৯.২৬ শতাংশ, কৃষ্টিয়ায় ৭.৮৭ শতাংশ।
তিন সিটি করোরেশন এলাকার মধ্যে চট্টগ্রামে ৫.৬২ শতাংশ, রাজশাহীতে ৪.৭৯ শতাংশ ও বরিশালে ২.৫ শতাংশ।
পাঁচ পৌর এলাকার মধ্যে হাউস ইনডেক্স সবচেয়ে বেশি মাগুরায়। এই পৌর এলাকায় গড় হাউস ইনডেক্স ৩৫.৫৬ শতাংশ। এরপর ঝিনাইদহ পৌর এলাকায় ৩২.৯৬ শতাংশ। পটুয়াখালীতে ১৮.১৫ শতাংশ, পিরোজপুরে ১৪.৪৪ শতাংশ ও কুষ্টিয়ায় ৭.২৯ শতাংশ।
জরিপের কার্যক্রম পরিচালিত হয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার ৪০টি ওয়ার্ডের ৮০০ বাড়ি, বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকার ৩০টি ওয়ার্ডের ৪৮০টি বাড়ি, রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকার ৩২টি ওয়ার্ডের ৪৮০টি বাড়িতে। পাঁচ পৌর এলাকার মধ্যে কুষ্টিয়ায় ২৫টি ওয়ার্ডের ৩৪৩ বাড়িতে। এ ছাড়া পিরোজপুরে, পটুয়াখালী, ঝিনাইদহ ও মাগুরা পৌরসভায় ৯ ওয়ার্ডের ২৭০টি বাড়িতে এ জরিপ চালানো হয়।
অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, সিটি করপোরেশন এলাকায় এডিস ইজিপ্টি বেশি, তবে এটি পৌর এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। মাগুরা ও পিরোজপুরে ১০০ শতাংশ নমুনায় এডিস অ্যালবোপিক্টাস প্রজাতির মশা পাওয়া গেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্লাস্টিক ড্রাম, বাস্কেট ও দইয়ের খালি পাত্রে লার্ভার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি।
তিনি বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় বহুতল ভবনে লার্ভার উপস্থিতি বেশি পাওয়া গেছে। তবে সিটি করপোরেশন ও পৌর এলাকাগুলোতে একক বাসবভনে এডিসের লার্ভা বেশি পাওয়া গেছে।
ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু প্রতিরোধে আগাম প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, ‘প্রকোপ শুরুর আগে থেকে স্থানীয় সরকারকে ব্যবস্থা নিতে মূলত এসব জরিপ চালানো হয়। কিন্তু স্থানীয় সরকারের কিছু দুর্বলতা আমরা দেখছি।’
তিনি বলেন, ‘এ বছর ঢাকার পাশাপাশি ঢাকার বাইরে বিশেষ করে দক্ষিণের জেলা বরগুনায় প্রকোপ বেশি দেখা যাচ্ছে। সেখানে গবেষণা জরিপ চলমান রয়েছে। ফলাফল পেলে অবস্থা সম্পর্কে জানা যাবে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, বাসাবাড়িতে বেশি পানি জমে রাখার আধিক্য এবং জেলাটিতে তুলনামূলক ডোবানালা বেশি হওয়ায় সংক্রমণের হার বেশি। সেখানে স্থানীয় সরকারের দুর্বলতা প্রকট।
ঢাকার ডেঙ্গু পরিস্থিতি : জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার ছয়টি ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভা ২০ শতাংশের বেশি ছিল। এর মধ্যে ১২ নম্বর ওয়ার্ডে ২৬.৬৭ শতাংশ; ২, ৮ ও ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে ২৩.৩৩ শতাংশ এবং ১৩ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডে ২০ শতাংশ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার ৩১ ও ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে ২৬.৬৭ শতাংশ; ৩, ৪৬ ও ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে ২৩.৩৩ শতাংশ এবং ৪ ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে ২০ শতাংশ এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পরিচালিত জরিপে সবচেয়ে বেশি এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে ফুলের টব ও ট্রেতে জমে থাকা পানিতে। জরিপে পাওয়া মোট লার্ভার ২৭ শতাংশই থাকে এসব পানিতে।
অর্থের অভাবে মৃত্যুর কারণ পর্যালোচনা হচ্ছে না : অর্থের অভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া রোগীদের মৃত্যুর কারণ পর্যালোচনা (ডেথ রিভিউ) করতে পারছে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. আবু হোসেন মো. মইনুল আহসান এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নিজের পকেট থেকে টাকা খরচ করে বেশি দিন মৃত্যুর কারণ পর্যালোচনা করা সম্ভব নয়। তাই থেমে যেতে হয়েছে।’