ঢাকা, বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫
১ শ্রাবণ ১৪৩২, ২০ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫
১ শ্রাবণ ১৪৩২, ২০ মহররম ১৪৪৭

নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে কষ্টে সেন্ট মার্টিনবাসী

তোফায়েল আহমদ, কক্সবাজার ও জাকারিয়া আলফাজ, টেকনাফ
তোফায়েল আহমদ, কক্সবাজার ও জাকারিয়া আলফাজ, টেকনাফ
শেয়ার
নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে কষ্টে সেন্ট মার্টিনবাসী

সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জেটিঘাট বাজারে গতকাল মঙ্গলবার বিক্রির জন্য আনা হয়েছিল ১৭টি গরু। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ক্রেতা পাওয়া গেছে তিনজন। তবে তাঁদের দুজনই বাকিতে গরু কিনেছেন। বাজারে বিক্রেতাই ছিলেন বেশি, ক্রেতা ছিলেন না বললেই চলে।

স্থানীয়রা জানিয়েছে, ঈদুল আজহা সামনে রেখে পশু বিক্রির এই অবস্থা আগের বছরগুলোর তুলনায় খুবই খারাপ। তার কারণ, পর্যটন ব্যবসা ও মাছ সংগ্রহের ওপর নির্ভরশীল দ্বীপবাসীর রোজগারে দুই নিষেধাজ্ঞা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পর্যটক ভ্রমণে ৯ মাসের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে আগেই। সেই সঙ্গে এখন চলছে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা।
বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা না রেখে দুই নিষেধাজ্ঞার জেরে তাদের রোজগারের আগের উৎস নেই। আর তাই পাল্টে গেছে তাদের জীবনযাপনও। 

স্থানীয়রা বলছে, পরিবর্তিত অবস্থায় তাদের পকেটের অবস্থা খারাপ। ফলে এবার দ্বীপে আগের বছরগুলোর মতো জমছে না কোরবানির পশুর হাট।

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নুরুল আলম পরিস্থিতি তুলে ধরে বললেন,  প্রতিবছর দ্বীপে দেড় শ থেকে দুই শ গরু কোরবানি করা হতো। কিন্তু এবার সেই কোরবানির গরু ২০-৩০টিতে নামতে পারে। তিনি গেল বছর সাড়ে তিন লাখ টাকা দিয়ে একটি মহিষ কোরবানি দিয়েছিলেন। কিন্তু এবার হাতে কোনো টাকাই নেই। জানালেন, এখানে অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার কোরবানির মাংসের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
স্থানীয়রা জানায়, দ্বীপের মানুষের বড় অংশ জীবিকা নির্বাহ করে সাগরের মাছ সংগ্রহ ও পর্যটন সেবার ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে। আগে বছরের ছয় মাস পর্যটন ব্যবসা করতে পারত তারা। এবার ব্যবসা হয়েছে দুই মাস। তা-ও আবার দৈনিক দুই হাজার পর্যটক যাতায়াতসহ রাত্রি যাপনে বাধা-নিষেধ ছিল। ফলে ভ্রমণকারী অস্বাভাবিক হারে কমে যায়। আগে দৈনিক পাঁচ হাজার ভ্রমণকারী দ্বীপে যাতায়াত করতে পারতেন বছরের ছয় মাস পর্যন্ত। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার দরুন তিন মাসের জন্য দৈনিক দুই হাজার করে ভ্রমণকারীর ভ্রমণের অনুমতি রয়েছে।  প্রসঙ্গত সেন্ট মার্টিনে ভ্রমণে যাওয়া পর্যটক নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় গত বছরের ২৮ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে। এতে বলা হয়, নভেম্বর মাসে দ্বীপে পর্যটক গেলেও দিনেই ফিরে আসবেন। রাত যাপন করতে পারবেন না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে পর্যটকরা সেন্ট মার্টিনে গিয়ে রাত যাপন করতে পারবেন। কিন্তু পর্যটকের সংখ্যা প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারের বেশি হবে না। তা ছাড়া দ্বীপে রাতের বেলায় আলো জ্বালানো যাবে না, শব্দদূষণ সৃষ্টি ও বারবিকিউ পার্টি করা যাবে না।

স্থানীয়রা জানায়, সাগরে মাছ ধরায় এখন নিষেধাজ্ঞা চলছে। পর্যটন ব্যবসায় জড়িতদের দুই মাসের আয় দিয়ে সারা বছর চলতে হচ্ছে। জেলেদের বসে থাকতে হচ্ছে দুই মাস। দ্বীপবাসীর বেশির ভাগ তাই অর্থকষ্টে আছে। কয়েক দিন আগে দ্বীপের ৮০০ জেলে ৫৪ কেজি করে সরকারি চাল পেয়েছেন। হতদরিদ্র পরিবারের কিছু ইউনিয়ন পরিষদের ভিজিডির চাল হাতে পেয়ে বেঁচেবর্তে আছে কোনো রকমে। দ্বীপের বিএনপি নেতা নুরুল আলম বলেন, সরকার কেন, কী উদ্দেশ্যে নিষেধাজ্ঞা দিল আর এভাবে দ্বীপে অবরুদ্ধ অবস্থা তৈরি করল, তা আমরা বুঝতে পারছি না। দ্বীপের পরিবেশ রক্ষাই যদি একমাত্র কারণ হতো তাহলে প্রতি বাসিন্দাকে পরিবেশ সহায়ক যেকোনো ধরনের কাজ বাধ্যতামূলকভাবে করার নির্দেশনা দিতে পারত। কেননা সরকারি প্রজ্ঞাপনে দ্বীপের বাইরের যেকোনো লোককে আইডি কার্ড সহকারে সরকারি অনুমতি নিয়ে আসা-যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর পর থেকে দেশের নানা প্রান্তে থাকা দ্বীপবাসীর আত্মীয়-স্বজন পর্যন্ত  সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছেন। দ্বীপের বাসিন্দা হাবিবুল্লাহ মেম্বার কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা এমন দুর্ভোগে আগে পড়িনি।  দ্বীপ ভ্রমণকে কেন্দ্র করে সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারির পর থেকে আমরা যেন পর হয়ে গেছি। তিনি জানান, দ্বীপের একমাত্র হাসপাতালটি চিকিৎসকবিহীন। বেসরকারি সংস্থার একজন চিকিৎসাকর্মী থাকলেও তাঁর বেতন নেই তিন মাস ধরে। তাই তিনিও চলে যাবেন। চিকিৎসাসেবার অভাবে গেল সপ্তাহে স্থানীয় দুটি শিশু মারা গেছে। অসুস্থ লোকজনকে টেকনাফ সদরেও যখন তখন নেওয়া যাচ্ছে না। কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি ও পরিবেশবাদী আ ন ম হেলাল উদ্দিন কালের কণ্ঠকে জানান, দ্বীপে প্রায় ১২ হাজার লোক বসবাস করে। এখানে তারা আগের মতো অবস্থায় নেই।

জানা গেছে, সেন্ট মার্টিনে হোটেল-রেস্টুরেন্ট ব্যবসা বন্ধ। দ্বীপে ৫০টির বেশি রেস্টুরেন্ট ছিল। প্রায় দেড় হাজার কর্মচারী কাজ করতেন। এখন তাঁদের সবাই বেকার। খালি রেস্টুরেন্টগুলোয় ক্রেতা নেই বলে বেকার যুবকরা সেখানে ক্যারম খেলেন। রেস্টুরেন্টের চেয়ার-টেবিল সরিয়ে ক্যারম বোর্ড বসিয়ে আয়ের চেষ্টা করছেন কেউ কেউ।  মাছ সংগ্রহকারীরা জানান, আগে তাঁরা ব্যবসা করতেন, এখন নিষেধাজ্ঞাকালীন ছাড়া বাকি সময় বড়শি নিয়ে সাগরে গিয়ে মাছ সংগ্রহ করেন। কিন্তু সামর্থ্যবান ক্রেতাও মেলে না। সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দা হাবিব উল্লাহ বলেন, দ্বীপের মানুষের আয়-রোজগারের বিকল্প পথ তৈরি না করে পর্যটক ভ্রমণে বিধি-নিষেধ আরোপ করায় অবস্থা খারাপ হয়েছে। আলী আহমদ বলেন, স্থানীয় বাসিন্দারা খুবই কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। গত মৌসুমে সীমিত পর্যটক যাতায়াত করেছেন। সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা আর্থিকভাবে লাভবান হননি। তা ছাড়া দ্বীপে কৃষিজমি বলতে এত বেশি জমিজমা নেই। সাগরে ৫৮ দিনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞাও চলছে। বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় নিম্ন আয়ের মানুষের দিন যাপনে সীমাহীন কষ্ট পোহাতে হচ্ছে।

জানা গেছে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে টানা ১২ দিন দ্বীপের সঙ্গে নৌযান চলাচল বন্ধ ছিল। গতকাল অবশ্য নৌযান চলাচল শুরু হয়েছে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

তৃতীয় জয়

শেয়ার
তৃতীয় জয়

শান্তি মার্দির (জার্সি নং-২০) হ্যাটট্রিকে গতকাল অনূর্ধ্ব-২০ সাফে ভুটানকে ৪-১ গোলে হারিয়েছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। আসরে স্বাগতিকদের এটি টানা তৃতীয় জয়। ছবি : বাফুফে

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

বদলির আদেশ ছিঁড়ে ফেলায় এনবিআরের ১৪ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বদলির আদেশ ছিঁড়ে ফেলায় এনবিআরের ১৪ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত

বদলির আদেশ প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ১৪ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯ জন আয়কর ও পাঁচজন কাস্টমস বিভাগের কর্মকর্তা। এনবিআরের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান গতকাল মঙ্গলবার এ বিষয়ে পৃথক আদেশ জারি করেন।

আদেশে বলা হয়েছে, গত ২২ জুন জারি করা বদলির আদেশ প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন।

বিষয়টি তদন্ত করে দোষ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁদের এনবিআরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ সময়ে তাঁরা বিধি অনুযায়ী খোরপোশ ভাতা পাবেন।

সাময়িক বরখাস্ত হওয়া আয়কর কর্মকর্তারা হলেন মির্জা আশিক রানা, অতিরিক্ত কর কমিশনার, কর অঞ্চল-৮, ঢাকা; মাসুমা খাতুন, যুগ্ম কর কমিশনার, কর অঞ্চল-২; মুরাদ আহমেদ, যুগ্ম কর কমিশনার, কর অঞ্চল-১৫; মোরশেদ উদ্দীন খান, যুগ্ম কর কমিশনার, কুষ্টিয়া; মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা, যুগ্ম কর কমিশনার, নোয়াখালী; আশরাফুল আলম প্রধান, যুগ্ম কর কমিশনার, কক্সবাজার; শিহাবুল ইসলাম, উপকর কমিশনার, খুলনা; নুশরাত জাহান, উপকর কমিশনার, রংপুর এবং ইমাম তৌহিদ হাসান, উপকর কমিশনার, কুমিল্লা।

কাস্টমস বিভাগ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার, অতিরিক্ত কমিশনার, নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর; সিফাত-ই-মরিয়ম, অতিরিক্ত কমিশনার; মো. শাহাদাত জামিল, দ্বিতীয় সচিব, এনবিআর; শফিউল বশর, রাজস্ব কর্মকর্তা এবং সবুজ মিয়া, রাজস্ব কর্মকর্তা।

গত জুন মাসে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাজস্ব খাতে যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। ২৮ ও ২৯ জুন তাঁরা সারা দেশে কর্মবিরতি পালন করেন। পরে ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যস্থতায় আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়। আন্দোলনের পর শুরু হয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।

এরই মধ্যে তিনজন এনবিআর সদস্য ও একজন কমিশনারকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তৎকালীন কমিশনারকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া এনবিআরের আরো দুই সদস্যসহ ১৬ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত শুরু করেছে।

দুদক সূত্র জানায়, আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকার কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে।

মন্তব্য
ছাত্রদলের আলোচনাসভায় বক্তারা

গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্রদলের স্পষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান খাটো করার চেষ্টা হচ্ছে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
শেয়ার
গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্রদলের স্পষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান খাটো করার চেষ্টা হচ্ছে

ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটরিয়ামে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের উদ্যোগে গণ-অভ্যুত্থানের বাঁক বদলের দিন শীর্ষক এক আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বক্তারা অভিযোগ করেন, ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্রদলের স্পষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ অবদানকে খাটো করার অপচেষ্টা চলছে।

ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় ছাত্রদল, ডান-বাম ছাত্রসংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্ল্যাটফর্মের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

আলোচনাসভার প্রধান অতিথি বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আন্দোলনের মূলে ছিল ছাত্রসমাজের চেতনা।

আজ সেই চেতনাকে বিকৃত করার চেষ্টা হচ্ছে, যা আত্মত্যাগের অবমূল্যায়ন। তিনি আরো বলেন, যে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের জন্য ১৯৭১ সালে লাখো শহীদ জীবন দিয়েছিলেন, তা ভুলে গিয়ে শেখ মুজিব চার বছরের মাথায় গণতন্ত্রকেই ভ্যানিশ করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করেন। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানকে ফ্যাসিস্ট আখ্যা দিয়ে বলেন, তাঁর কন্যা (শেখ হাসিনা) তো ডাবল ফ্যাসিস্ট হয়েছেন। তিনি মন্তব্য করেন, বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ কখনো প্রত্যাবর্তন করুক, তা বাংলাদেশের মানুষ চায় না।

সালাহউদ্দিন আহমদ আরো উল্লেখ করেন, বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে আন্দোলনকারীদের রক্তদানকে যারা কলঙ্কিত করার চেষ্টা করছে, গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর মধ্যে ফাটল ধরাতে চাইছে এবং বিএনপিসহ অন্যান্য দলের নেতৃস্থানীয় নেতাদের নামে কুৎসা রটানোর চেষ্টা করছে, তারা ফ্যাসিবাদের আগমনকে স্বাগত জানায়। তিনি বলেন, বিগত ১৭ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে, কেননা মাত্র ৩৬ দিনের আন্দোলনে একটি ফ্যাসিবাদী সরকারকে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব ছিল না।

ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব তাঁর বক্তব্যে বলেন, মিটফোর্ডের ঘটনার জেরে একটি গুপ্ত সংগঠন রাজনৈতিক ইন্ধন দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা বুয়েট ও চুয়েটে আমাদের সর্বোচ্চ নেতাদের নিয়ে নোংরা স্লোগান দিয়েছে।

তিনি আরো অভিযোগ করেন, জামায়াতের এক নায়েবে আমিরের ভাগ্নি জামাইয়ের নেতৃত্বে তারেক রহমানবিরোধী অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা সমালোচনা গ্রহণ করি, তবে মনে রাখা উচিতআমাদেরও সহ্যের সীমা আছে। একাত্তর ও চব্বিশের পরাজিত শক্তি ছাড়া বাকি সবার সঙ্গে আমাদের ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা রয়েছে।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, জুলাই গণহত্যার বিচার নিয়ে শহীদ পরিবারের মধ্যে উদ্বেগ বিরাজ করছে। অথচ আমরা বিচার নিশ্চিত না করে বিভাজনের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ছি।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের নেত্রী মুক্তা বাড়ই বলেন, আজ রাজাকারদের পুনর্বাসন ও নরমালাইজেশন শুরু হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দিয়ে গোটা দেশে মবতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা চলছে।

গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহবায়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ছাত্রদলের সহযোদ্ধারা প্রথম দিন থেকেই আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে ছিলেন। ১৫ জুলাই একাত্তর হলে প্রথম হামলায়ও ছাত্রদলের ভাইয়েরা আহত হয়েছিলেন। এখানে এককভাবে কোনো সংগঠনের কৃতিত্ব দাবি গ্রহণযোগ্য নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহি বলেন, এই অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব শহীদদের, কোনো রাজনৈতিক দলের নয়। আমাদের গণতান্ত্রিক সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।

আলোচনাসভায় ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আহসান, ইসলামী ছাত্র মজলিসের দপ্তর সম্পাদক নূর মোহাম্মদ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুভাশিষ চাকমা, ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি সাইদুল হক নিশান, ছাত্র ইউনিয়নের মেঘমল্লার বসু ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহবায়ক আবু বাকের মজুমদারসবাই ছাত্ররাজনীতির মধ্যে বিভাজন অপপ্রচারের রাজনীতি বন্ধ করার আহবান জানান।

মন্তব্য

বিমানবন্দর থেকেই ৯৬ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল মালয়েশিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বিমানবন্দর থেকেই ৯৬ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৯৬ জন বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের ১৩১ জনকে আটকে দিয়ে ফেরত পাঠিয়েছে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ। মূলত শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় কারণ দেখিয়ে তাঁদের ফেরত পাঠানো হয়।

দেশটির ইংরেজি সংবাদমাধ্যম দ্য স্টার জানিয়েছে, ওই ১৩১ জনকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৯৬ জন বাংলাদেশের নাগরিক।

গত শুক্রবার কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ১ নম্বর টার্মিনালে মালয়েশিয়ার বর্ডার কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রটেকশন এজেন্সির অভিযানে তাঁদের আটকে দেওয়া হয়।

দ্য স্টারের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ৩০০ জনের বেশি যাত্রীর কাগজপত্র যাচাই করে ১৩১ জনকে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

বর্ডার কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রটেকশন এজেন্সির এক বিবৃতিতে বলা হয়, ৯৬ জন বাংলাদেশি পুরুষ, ৩০ জন পাকিস্তানি পুরুষ ও পাঁচজন ইন্দোনেশীয় নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে নির্ধারিত শর্ত পূরণে ঘাটতি পাওয়া গেছে।

শর্ত পূরণ না হওয়া বলতে সন্দেহজনক হোটেল বুকিং, ইমিগ্রেশন কাউন্টারে হাজির না হওয়া এবং পর্যাপ্ত অর্থ সঙ্গে না রাখার মতো কারণ দেখানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, পর্যাপ্ত অর্থ না থাকা সাধারণত ভ্রমণকারীর প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্দেহ তৈরি করে। কেউ যদি বলে যে সে এক মাস থাকবে, কিন্তু সঙ্গে মাত্র ৫০০ রিঙ্গিত আনে, তাহলে তার বক্তব্যে সন্দেহ তৈরি হওয়াটা স্বাভাবিক।

মালয়েশিয়ায় প্রবেশের জন্য যেসব শর্ত রয়েছে, সেগুলো পূরণ করেই যেন আগ্রহীরা ভ্রমণের প্রস্তুতি নেয়, বিবৃতিতে সে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।

বর্ডার কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রটেকশন এজেন্সি বলছে, মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে ইচ্ছুক যেকোনো ব্যক্তিকে অবশ্যই বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা, আর্থিক সামর্থ্য এবং থাকা-খাওয়ার নির্ভরযোগ্য পরিকল্পনার প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে।

এদিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দায়িত্বরত ইমিগ্রেশন পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, যাঁদের ফেরত পাঠানো হয়েছে, নিশ্চয়ই তাঁদের ট্যুরিস্ট হিসেবে নির্দিষ্ট শর্ত পূরণে ব্যর্থ মনে করেছে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ