প্রায় প্রতিদিনই সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মানুষ ঠেলে দিচ্ছে (পুশ ইন) ভারত। এটি বন্ধের জন্য গত মাসে বাংলাদেশ চিঠি পাঠালেও ভারত পুশ ইন বন্ধ করেনি। এমন প্রেক্ষাপটে পুশ ইন বন্ধের আহবান জানিয়ে ভারতকে আবারও চিঠি পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
পুশ ইন বন্ধে দিল্লিকে ফের চিঠি দিচ্ছে ঢাকা
- শেখ হাসিনাকে ফেরানোর চিঠির জবাব এখনো মেলেনি
নিজস্ব প্রতিবেদক

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ভারতের সঙ্গে কনসুলার বৈঠকের মাধ্যমে পুশ ইন সমস্যা সমাধানের চিন্তা-ভাবনা চলছে। পুশ ইন ঠেকানো সম্ভব নয় বলে স্বীকার করেন তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, এটা যেন সঠিক পদ্ধতি অনুযায়ী হয়।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘দুই পক্ষেরই বক্তব্য থাকতে পারে এখানে। আমরা চেষ্টা করছি কনসুলার ইস্যু নিয়ে একটা মেকানিজম আছে, সেটা ব্যবহার করে এই জিনিসটাকে একটা নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসার।
এদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে গত ২৩ ডিসেম্বর ভারতের কাছে চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ। কিন্তু ভারত কোনো জবাব পাঠায়নি। বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এখনো দ্বিতীয় কোনো পত্র দিইনি।
সীমান্তে হত্যার প্রতিবাদ জানাতে বাংলাদেশ এখন নমনীয় কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা নিয়ে নমনীয়তা দেখানো সম্ভব নয়। আমরা এটার প্রতিবাদ করছি এবং এই প্রক্রিয়া চালু আছে এবং অবশ্যই এ ব্যাপারে খুব শক্তভাবে প্রতিবাদ করব। এই ফ্যাক্টরটাকে কখনো মেনে নেওয়া হবে না যে গুলি করে সীমান্তে মানুষ মেরে ফেলা হবে। এটা পৃথিবীর আর কোনো সীমান্তে নেই।’
এদিকে ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল ইস্যুতে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা একটা শাপে বর হয়েছে আমাদের। তাদের ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা কমেছে। আমাদের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না এবং একটা কাঠামো দাঁড়িয়ে গেছে। দিল্লির পরিবর্তে সিলেট থেকে রপ্তানি হচ্ছে।’
তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের কেন সবকিছুর জন্য অন্য দেশ থেকে ট্রানজিট করতে হবে? যেহেতু এখান থেকে সরাসরি ফ্লাইট যাচ্ছে, এখন স্পেনে যাচ্ছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরাও আমাদের একটা প্রয়োজনীয় সুবিধা বাতিল করেছি। সুতা আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তারা যেটা করেছে, তাদের প্রয়োজনের জন্য করেছে কি না আমরা জানি না।’
অন্যদিকে বিভিন্ন দেশে যেতে বাংলাদেশিদের ভিসা সমস্যা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এই পরিস্থিতির জন্য এ দেশের লোকজনই দায়ী। উপদেষ্টা ইঙ্গিত দেন, এ ক্ষেত্রে আগে ঘর গোছাতে হবে।
সম্পর্কিত খবর

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে পাট চাষ

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে করা হয়েছে পাট চাষ। সেই পাট কেটে মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পানিতে জাগ দেওয়ার জন্য। গতকাল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের চর বাঘমারা থেকে তোলা। ছবি : মো. আসাদুজ্জামান
।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকার আড়াই বছর বয়সী নূরজাহান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল তোলা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম
।
২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের
নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দলটির আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দলটি আগামী জাতীয় সংসদে নিম্নকক্ষে আংশিক আনুপাতিক ও উচ্চকক্ষে পূর্ণ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক দ্বিকক্ষীয় সাংবিধানিক কাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দলের নেতারা বলেন, একদলীয় শাসনব্যবস্থা জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া আত্মঘাতী। এতে ফ্যাসিবাদের দোসররা আরো উৎসাহী হচ্ছে। আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, তবে ফ্যাসিবাদ ফের মাথা চাড়া দেবে।
গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী শৈথিল্য দেখালেও পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে দুষ্কৃতকারীরা দ্রুত প্রতিহত হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন—দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মূসা, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা ফয়সাল আহমদ। এ ছাড়া ছিলেন মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা হারুনুর রশীদ, মাওলানা রুহুল আমীন খান, মাওলানা হাসান জুনাইদ, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন ও মাওলানা মুহসিন বেলালী।

রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা
রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী

পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার ওয়াহেদুজ্জামান (৭১) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পরিবারের সদস্যরা গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে পাঠানো হয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে (মেডিসিন ওয়ার্ড)। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করে নেন।
পরের দিন ১৫ জুলাই সকালের দিকে রোগী কিছুটা সুস্থ বোধ করলে তাঁকে ছুটি দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই রোগী আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। চিকিৎসকসংকটে দিনের প্রায় ১৮ ঘণ্টাই ইন্টার্ন চিকিৎসকনির্ভরতার মাধ্যমে চলছে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা।
খুব জরুরি প্রয়োজনে ফোনে পরামর্শ নেওয়া হয় অভিজ্ঞ ডাক্তারদের। এর বাইরে এফসিপিএস ডিগ্রিধারী বা এফসিপিএস করছেন এমন মধ্যম মানের চিকিৎসকরা থাকেন ভর্তির দিন ধার্য থাকা ওয়ার্ডগুলোতে। এ ছাড়া দিনের ২৪ ঘণ্টা প্রতিটি ওয়ার্ডেই চার থেকে ছয়জন করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে হয় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই ইন্টার্নদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
পাবনার ঈশ্বদীর রোগী ওয়াহেদুজ্জামানের ছেলে হামিম আবেদীন বলেন, ‘রামেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিনে একবার করে আসার কারণে আমার বাবার সমস্যাগুলো জটিল হয়ে গিয়েছিল, যা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুঝে উঠতে পারেননি।’
ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি রোগীর সেবা দেওয়ার। কিন্তু যে পরিমাণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়, সে পরিমাণ ইন্টার্ন চিকিৎসকও নেই।’
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বলেন, ‘হাসপাতালে পর্যাপ্ত আনসার সদস্যও নেই। অন্যদিকে যেসংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে, সেসংখ্যক অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাসামগ্রী ও ওষুধপথ্যও আমরা দিতে পারছি না। কারণ সব কিছু বরাদ্দ হচ্ছে ৫০০ শয্যার বিপরীতে। কিন্তু এখানে শয্যাই আছে এক হাজার ২০০টি। এর বাইরেও অতিরিক্ত আরো দুই থেকে আড়াই হাজার রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের নানাভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’