টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরই মধ্যে হবিগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও চট্টগ্রামের কিছু এলাকায় নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল, দেখা দিয়েছে বাঁধ ভাঙনের শঙ্কা। নদীতীরবর্তী মানুষের মধ্যে বেড়েছে উৎকণ্ঠা।
বর্ষণ ও ঢলে বিপৎসীমার ওপরে নদ-নদীর পানি
বাঁধ ঝুঁকিতে, ডুবছে ফসলি জমি
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

হবিগঞ্জে খোয়াই ও কালনী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে, শহরে জলাবদ্ধতা : হবিগঞ্জে খোয়াই, কালনী ও কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ছে। রবিবার দুপুরে খোয়াই নদীর পানি বাল্লা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কালনী নদীর পানি আজমিরীগঞ্জে ৪৪ সেন্টিমিটার ওপরে।
টানা বর্ষণে হবিগঞ্জ শহরের পুরান মুন্সেফী, শ্যামলী, মাহমুদাবাদ, শায়েস্তানগরসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। শহরের প্রধান সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে, চরম দুর্ভোগে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
সদর উপজেলার গোপায়া ইউনিয়নের পূর্ব ভাদৈ এলাকায় খোয়াই নদীর বাঁধের প্রায় ৪০০ মিটার অংশ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কয়েক দফা চেষ্টা করেও বাঁধের টেকসই সংস্কার করতে পারেনি।
পাউবো জানিয়েছে, বাঁধ রক্ষায় এবার ২৫০টি বড় জিও ব্যাগ ফেলা হবে।
কুড়িগ্রামে তিস্তার পানি দ্রুত বাড়ছে, ডুবে গেছে ফসলি জমি : কুড়িগ্রামে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমারসহ সব নদীর পানি বাড়ছে। গত শনিবার ভোর ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৯ ঘণ্টায় তিস্তার পানি বেড়েছে ৬০ সেন্টিমিটার।
রাজারহাট উপজেলার চরাঞ্চলে বাদাম, ভুট্টা ও অন্যান্য রবিশস্যের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।
মৌলভীবাজারে ঢলে জলাবদ্ধতা, পাহাড় ধসে যোগাযোগ বিঘ্নিত : মৌলভীবাজার শহরে মনু ও ধলাই নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। রবিবার বিকেলে চাঁদনীঘাট পয়েন্টে মনু নদীর পানি বিপৎসীমার ১১.৩০ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল।
পানিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ আবাসিক এলাকা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে। সীমান্তবর্তী বড়লেখা ও কুলাউড়ার অনেক নিচু এলাকায় পানি ঢুকেছে।
মনু নদীর ওপর কুলাউড়ার রাজারপুর এলাকার একটি ঝুঁকিপূর্ণ কালভার্ট দিয়ে চুইয়ে পানি প্রবেশ করছে।
রাজনগর-কুলাউড়া আঞ্চলিক সড়কের মাথিউড়া চা-বাগান এলাকায় শনিবার রাতে পাহাড় ধসে ঘণ্টাখানেক সড়ক বন্ধ থাকে। রাজনগর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মাটি সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করেন।
লালমনিরহাটে তিস্তার পানি ওঠানামা, ফসলের ক্ষতি
লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি শনিবার রাত থেকে ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছে। রবিবার সন্ধ্যায় পানি আবার বাড়তে শুরু করে।
জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাদাম, ভুট্টা, বোরো ধান ও আমন বীজতলার ক্ষতি হয়েছে।
তিস্তা ব্যারাজের সব জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। পাউবো বলছে, আগামী দুই দিন পানির উচ্চতা আবার বাড়তে পারে।
খাগড়াছড়িতে পাহাড় ধসে যান চলাচল বন্ধ
টানা বৃষ্টিতে চেঙ্গী ও মাইনী নদীর পানি বেড়েছে। দীঘিনালা-রাঙামাটি সড়কের ইয়রাংছড়ি এলাকায় পাহাড় ধসে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
মাইনী নদীর ঢলে মেরুং ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। মহালছড়ি উপজেলার কিছু সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে ছোটখাটো পাহাড়ধসের খবর পাওয়া গেছে।
প্রশাসন আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ ঘরবাড়ি থেকে লোকজনকে সরে যেতে বলা হয়েছে।
সীতাকুণ্ডে বৃষ্টিতে লাখো মানুষ পানিবন্দি
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ২৪ ঘণ্টায় ১৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নের অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।
ধোপাপাড়া, নামারবাজার, আলেকদিয়া ও জোড় আমতলাসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। রান্নাবান্না বন্ধ হয়ে গেছে, দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট।
অবৈধ দখল ও বেড়িবাঁধ না থাকায় জলাবদ্ধতা তীব্র হয়েছে। পাহাড়ধসের আশঙ্কায় প্রশাসন মাইকিং করে মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বললেও অনেকেই এখনো যায়নি।
সুনামগঞ্জে আপাতত বন্যার শঙ্কা নেই
ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টিপাত কমে আসায় সুনামগঞ্জে এখনো নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। সুরমা নদীর পানি গতকাল বিকেলে বিপৎসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
পাউবো জানিয়েছে, উজানে বৃষ্টি বাড়লে পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। হাওরে এখনো পানি ধারণের সক্ষমতা রয়েছে।
সম্পর্কিত খবর

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে পাট চাষ

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে করা হয়েছে পাট চাষ। সেই পাট কেটে মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পানিতে জাগ দেওয়ার জন্য। গতকাল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের চর বাঘমারা থেকে তোলা। ছবি : মো. আসাদুজ্জামান
।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকার আড়াই বছর বয়সী নূরজাহান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল তোলা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম
।
২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের
নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দলটির আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দলটি আগামী জাতীয় সংসদে নিম্নকক্ষে আংশিক আনুপাতিক ও উচ্চকক্ষে পূর্ণ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক দ্বিকক্ষীয় সাংবিধানিক কাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দলের নেতারা বলেন, একদলীয় শাসনব্যবস্থা জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া আত্মঘাতী। এতে ফ্যাসিবাদের দোসররা আরো উৎসাহী হচ্ছে। আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, তবে ফ্যাসিবাদ ফের মাথা চাড়া দেবে।
গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী শৈথিল্য দেখালেও পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে দুষ্কৃতকারীরা দ্রুত প্রতিহত হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন—দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মূসা, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা ফয়সাল আহমদ। এ ছাড়া ছিলেন মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা হারুনুর রশীদ, মাওলানা রুহুল আমীন খান, মাওলানা হাসান জুনাইদ, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন ও মাওলানা মুহসিন বেলালী।

রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা
রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী

পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার ওয়াহেদুজ্জামান (৭১) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পরিবারের সদস্যরা গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে পাঠানো হয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে (মেডিসিন ওয়ার্ড)। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করে নেন।
পরের দিন ১৫ জুলাই সকালের দিকে রোগী কিছুটা সুস্থ বোধ করলে তাঁকে ছুটি দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই রোগী আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। চিকিৎসকসংকটে দিনের প্রায় ১৮ ঘণ্টাই ইন্টার্ন চিকিৎসকনির্ভরতার মাধ্যমে চলছে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা।
খুব জরুরি প্রয়োজনে ফোনে পরামর্শ নেওয়া হয় অভিজ্ঞ ডাক্তারদের। এর বাইরে এফসিপিএস ডিগ্রিধারী বা এফসিপিএস করছেন এমন মধ্যম মানের চিকিৎসকরা থাকেন ভর্তির দিন ধার্য থাকা ওয়ার্ডগুলোতে। এ ছাড়া দিনের ২৪ ঘণ্টা প্রতিটি ওয়ার্ডেই চার থেকে ছয়জন করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে হয় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই ইন্টার্নদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
পাবনার ঈশ্বদীর রোগী ওয়াহেদুজ্জামানের ছেলে হামিম আবেদীন বলেন, ‘রামেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিনে একবার করে আসার কারণে আমার বাবার সমস্যাগুলো জটিল হয়ে গিয়েছিল, যা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুঝে উঠতে পারেননি।’
ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি রোগীর সেবা দেওয়ার। কিন্তু যে পরিমাণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়, সে পরিমাণ ইন্টার্ন চিকিৎসকও নেই।’
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বলেন, ‘হাসপাতালে পর্যাপ্ত আনসার সদস্যও নেই। অন্যদিকে যেসংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে, সেসংখ্যক অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাসামগ্রী ও ওষুধপথ্যও আমরা দিতে পারছি না। কারণ সব কিছু বরাদ্দ হচ্ছে ৫০০ শয্যার বিপরীতে। কিন্তু এখানে শয্যাই আছে এক হাজার ২০০টি। এর বাইরেও অতিরিক্ত আরো দুই থেকে আড়াই হাজার রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের নানাভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’