আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট হবে সাশ্রয়ী। এই বাজেটে কৃচ্ছ্রসাধন অব্যাহত থাকলেও তিন খাতে নতুন বরাদ্দ রাখছে অন্তর্বর্তী সরকার। জুলাই অভ্যুত্থানের যোদ্ধাদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে, যাতে অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতরা সম্মানি পায়। এ ছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের মহার্ঘ ভাতা দিতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।
তিন খাতে থাকছে নতুন বরাদ্দ
- জুলাই যোদ্ধাদের জন্য ৫৯৩ কোটি টাকা
- মহার্ঘ ভাতায় বরাদ্দ ৭ হাজার কোটি টাকা
- মৃত্যুর মিছিল ঠেকাতে সড়কের নিরাপত্তায় আলাদা বরাদ্দ
মিরাজ শামস

যদিও অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আসন্ন বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ প্রথম অগ্রাধিকারে থাকছে। বিশেষ করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা ও ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। নতুন করে ভাতার আওতায় যুক্ত হবেন জুলাই যোদ্ধারা।
আসন্ন বাজেটে (২০২৫-২৬) জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতদের মাসিক সম্মানি ভাতা এবং এককালীন সহায়তার অনুদান বাবদ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ৫৯৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। চলতি অর্থবছরে এ খাতে কোনো বরাদ্দ নেই।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আসন্ন বাজেটে শহীদ পরিবার ও আহতদের মাসিক সম্মানি ভাতা বাবদ ব্যয় হবে ২০৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা। আর ৩৮৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা শহীদ পরিবার ও আহতদের এককালীন অনুদান হিসেবে ব্যয় করা হবে।
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় শহীদ পরিবার ও গুরুতর আহতরা ‘এ’ ক্যাটাগরিতে মাসে ২০ হাজার টাকা সম্মানি ভাতা পাবে। ‘বি’ ক্যাটাগরির আহতরা মাসে ১৫ হাজার টাকা এবং ‘সি’ ক্যাটাগরির আহতরা জনপ্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা সম্মানি ভাতা পাবেন। চলতি অর্থবছরে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতরা কোনো মাসিক সম্মানি পাননি।
জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের আগামী অর্থবছর থেকে মাসিক সম্মানি ভাতা দেওয়ার কথা গত ফেব্রুয়ারিতে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে ঘোষণা দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।
অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারের জন্য এককালীন ৩০ লাখ টাকা করে মোট ২৪৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আহতদের দেশে-বিদেশে পর্যাপ্ত চিকিৎসা অনুদান ও পুনর্বাসনের জন্য মোট ৩৯০ কোটি টাকাসহ চলতি অর্থবছরের বাজেট থেকে মোট ৬৩৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়েছিল মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
গত ডিসেম্বরে চলতি অর্থবছরের বাজেট থেকে ২৩২ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে বাকি অর্থ আগামী অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে নির্দেশনা দেওয়া হয়, এই অর্থ শহীদ পরিবার ও আহতদের এককালীন অনুদান হিসেবে ব্যয় করতে হবে। পরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় শহীদ ও আহতদের এককালীন অনুদানের পাশাপাশি নগদ সামাজিক সহায়তা সুবিধার আওতায় মাসিক সম্মানি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
কর্মকর্তারা জানান, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গেজেটভুক্ত শহীদ পরিবারের সংখ্যা ৮৩৪। গেজেটভুক্ত প্রত্যেক শহীদ পরিবারকে বাড়তি ২০ লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে। গণ-অভ্যুত্থানে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত আহতদের মধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে রয়েছেন ৪৯৩ জন, ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ৯০৮ জন এবং ‘সি’ ক্যাটাগরিতে ১০ হাজার ৬৪২ জন। এ ছাড়া ‘ডি’ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত ছাত্র-জনতার সংখ্যা সাত হাজার জন। এর বাইরে দুই হাজার ৪১৬ জন আহত ছাত্র-জনতার ক্যাটাগরিভিত্তিক তালিকা পায়নি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
চলতি অর্থবছরে ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ ও ‘ডি’ ক্যাটাগরিভুক্তদের চিকিৎসা সহায়তা বাবদ বরাদ্দ রয়েছে ১২৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া আহতদের দেশে-বিদেশে চিকিৎসা বাবদ চলতি অর্থবছরে ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে আহতদের অনুদান বাবদ ১৩৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেবে অর্থ মন্ত্রণালয়।
মহার্ঘ ভাতা পাবেন সরকারি চাকরিজীবীরা
আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন হারে মহার্ঘ ভাতা পাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বাজেট ঘোষণা উপলক্ষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রথম থেকে নবম গ্রেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পাবেন ১৫ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা, আর দশম থেকে বিংশ গ্রেডের কর্মীরা পাবেন ২০ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এই হার চূড়ান্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদও বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, আসন্ন বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য মহার্ঘ ভাতার প্রস্তাব সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় আছে।
২০১৫ সাল থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট পেয়ে আসছেন। তবে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের পাশাপাশি অতিরিক্ত ৫ শতাংশ হারে বিশেষ প্রণোদনাও চালু করে আওয়ামী লীগ সরকার। মহার্ঘ ভাতা কার্যকরের সঙ্গে সঙ্গে বিশেষ প্রণোদনা সুবিধা বাতিল হয়ে যাবে। অর্থাৎ আগামী জুলাই থেকে ৫ শতাংশ বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে মহার্ঘ ভাতা পাবেন চাকরিজীবীরা। এতে সরকারের প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
সড়কের নিরাপত্তায় নজর দেবে সরকার
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সড়ক অবকাঠামোর পাশাপাশি সড়কের নিরাপত্তা খাতেও সমান গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মঈনুদ্দিন। গত শনিবার এক জাতীয় সংলাপে তিনি এ কথা জানান।
শেখ মঈনুদ্দিন বলেন, আগামী অর্থবছরে সড়ক নিরাপত্তা জোরদারে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) অধীনে একটি বিশেষ সড়ক নিরাপত্তা ইউনিট গঠনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ ইউনিট দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাগুলো (ব্ল্যাক স্পট) চিহ্নিত করবে এবং সড়কে গতিসীমা বোর্ডের কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করবে। এ জন্য আলাদা বাজেট বরাদ্দ রাখা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, সড়কের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সরকার বিশেষভাবে নজর দিচ্ছে। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগ যথাযথ বাস্তবায়নে অর্থ বরাদ্দ রাখা হবে। এখন বাস্তবায়নে কতটা ব্যয় হবে তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভর করবে। তবে তিনি বরাদ্দের পরিমাণ সুনির্দিষ্ট করে বলেননি।
এ ছাড়া ঋণনির্ভরতা কমিয়ে আনার প্রচেষ্টা আসন্ন বাজেট থেকে শুরু হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, এবারের বাজেট হবে ঋণের দুষ্টচক্র ভাঙার। এ ক্ষেত্রে দেশীয় ঋণ কম নেওয়ার চেষ্টা থাকবে। তবে এক বাজেট দিয়ে তো আর পুরোপুরি সফল হওয়া সম্ভব নয়। আগামী অর্থবছরের বাজেট দিয়ে এই কাজটা শুরু হবে।
তিনি আরো বলেন, বাজেট হবে দারিদ্র্য কমিয়ে আনা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মূল্যস্ফীতি সহ্য করার সক্ষমতা তৈরি এবং বাস্তবভিত্তিক। কোনো বিলাসী ব্যয় রাখা হবে না বাজেটে। এই বাজেট সমতাভিত্তিক ও কল্যাণমুখী হবে।
সম্পর্কিত খবর

মার্কিন শুল্ক সংকট
ভার্চুয়াল বৈঠকের আগেও আসতে পারে সুখবর
- ৩৫% থেকে শুল্ক কমে ১৮-২০% হওয়ার প্রত্যাশা
নিজস্ব প্রতিবেদক

শুল্ক নিয়ে পুনরায় বৈঠকের সময় চেয়ে দফায় দফায় চিঠি দেওয়া হয়েছে মার্কিন প্রশাসনকে। ওয়াশিংটনে গিয়ে সরাসরি বৈঠকের আহ্বান জানানো না হলেও আগামী ২৯ জুলাই বাংলাদেশের সঙ্গে ভর্চুয়ালি বৈঠক করবেন মার্কিন প্রতিনিধিরা। তবে প্রত্যাশা করা হচ্ছে, ওই ভার্চুয়াল বেঠকের আগেই শুল্ক বিষয়ে ওয়াশিংটন থেকে বাংলাদেশের জন্য আসতে পারে কোনো সুখবর। এর আগের টানা তিন দিনের বৈঠকের পর থেকে এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়গুলো জানিয়ে যেসব ডকুমেন্ট দেওয়া হয়েছে, তার আলোকেই বাংলাদেশের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে পারে মার্কিন প্রশাসন।
গতকাল শুক্রবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সূত্রে আরো জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ২৯ জুলাই ভার্চুয়ালি বৈঠক করা হবে এবং ওই বৈঠকেই শুল্ক বিষয়ে আলোচনা হবে। এরপর এখন পর্যন্ত নতুন করে মার্কিন প্রশাসন থেকে আর কিছু জানানো হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করছি, আগামী ২৯ জুলাইয়ের ভার্চুয়াল বৈঠকের আগেও শুল্কের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার নতুন করে কোনো ঘোষণা দিতে পারে।
বাংলাদেশের তরফ থেকে দেওয়া ডকুমেন্টগুলোতে কী ধরনের তথ্য দেওয়া হয়েছে এবং বাংলাদেশ আসলে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে, সে বিষয়ে বাণিজ্যসচিব বলেন, ‘আমরা তো তাদের সঙ্গে যে চুক্তি করব, তার ওপরই প্রস্তুতি নিচ্ছি। চুক্তির খসড়ার ওপর এবং তাদের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মূলত আমরা তথ্যাদি এবং আমাদের মতামত তুলে ধরেছি।
তিনি বলেন, ‘মার্কিন প্রশাসন ইন্দোনেশিয়ার বিষয়ে জানিয়েছে—তাদের ওপর ১৯ শতাংশ শুল্ক ধার্য করবে। এ ছাড়া ভারতের সঙ্গে ২০ শতাংশ শুল্কের বিষয় উল্লেখ করে চুক্তি হতে পারে। আমরাও প্রত্যাশা করছি, ৩৫ শতাংশ থেকে কমে ১৮ থেকে ২০ শতাংশের মতো শুল্ক নির্ধারণ করা হতে পারে বা এর চেয়ে কমও হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এখন আগামী ২৯ জুলাইয়ের ভার্চুয়াল মিটিংয়ের জন্যই অপেক্ষা করছি। সেই সঙ্গে আমরা আশা করছি, ২৯ জুলাইয়ের ভার্চুয়াল মিটিংয়ের পরিবর্তে মার্কিন প্রশাসন থেকে প্রস্তাব আসতে পারে সেখানে গিয়ে সরাসরি বৈঠকের। এই কয় দিনের মধ্যে সে রকম প্রস্তাব আসতে পারে—এমন প্রত্যাশাও রয়েছে আমাদের।’

সরেজমিন
আ. লীগের কার্যালয়ের সামনে নতুন ব্যানার করা হচ্ছে পরিষ্কার
তৌফিক হাসান

রাজধানীর গুলিস্তানের শহীদ আবরার ফাহাদ এভিনিউয়ে (সাবেক বঙ্গবন্ধু এভিনিউ) কার্যক্রম নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ভবনটিকে আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট হিসেবে তৈরি করা হবে। আর এই ইনস্টিটিউটেই ফ্যাসিবাদের উত্থান, কার্যকলাপ ও পতন নিয়ে পড়াশোনা ও গবেষণা করা হবে।
গতকাল শুক্রবার ওই কার্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে এবং সেখানে উপস্থিত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
দেখা যায়, ভবনটির দেয়ালে দুটি লাল রঙের ব্যানার লাগানো। উভয় ব্যানারেই লেখা, ‘আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট’। ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা যায়, নিচতলায় পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলছে। ভেতরে জমে থাকা ময়লা পানি ওয়াসার স্যুয়ারেজের গাড়ি দিয়ে নিষ্কাশন করা হচ্ছে।
শ্রমিকদের একজন হাফিজুর রহমান জানান, বুধবার থেকে তাঁরা এই কাজ করছেন। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘আমরা দৈনিক হিসেবে কাজ করতাছি।
ভবনটির বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সদস্য এস এম শাহ আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখানে আমরা ফ্যাসিবাদের উত্থান-পতন নিয়ে স্টাডি করব। একই সঙ্গে ফ্যাসিজম রোধে আমরা কী করতে পারি তা নিয়েও বিস্তর স্টাডি করব। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এটা নিয়ে সচেতন করব।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা চিন্তা করেছি যে গুলিস্তানের মতো ব্যবসায়ী অঞ্চলে একটা ভবন আমরা কিভাবে ব্যবহার না করে ফেলে রাখি। এটাকে ঠিকঠাক করতে পারলে আশপাশের জনগণ উপকৃত হবে। এটা হয়েছিল গণশৌচাগার। গুলিস্তানের মতো একটা জায়গায় এত দুর্গন্ধ সহনীয় নয়। তাই আমরা নিজস্ব উদ্যোগে এটা পরিষ্কারের কার্যক্রম শুরু করেছি।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যাত্রাবাড়ী থানার সংগঠক মুজাইদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত ১৭ বছর এখান থেকে যে ফ্যাসিজম চালানো হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এই ভবনে। এটিকে সরকারিভাবে দেশের স্বার্থে কিভাবে কাজে লাগানো যায় সে চিন্তাই আমরা করছি। কবে নাগাদ এই কার্যক্রম শেষ হবে তা এখনো বলা যাচ্ছে না।’
এর আগে গত ১৭ মে ভবনটিতে টাঙানো হয়েছিল ‘জুলাই যোদ্ধাদের প্রধান কার্যালয়’ লেখা ব্যানার। তবে কে বা কারা এটি টাঙিয়েছিল সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভবনটিতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে ভবনটিকে গণশৌচাগার হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়। প্রায় এক বছর ধরে মলমূত্র জমে থাকার কারণে উৎকট গন্ধও তৈরি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গুলিস্তানে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ১০ তলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি ২০১৮ সালের ২৩ জুন উদ্বোধন করেছিলেন দলের সভাপতি ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে সেখানে দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল।

জামায়াত আমির
দল নিয়ন্ত্রণ করেছি দেশও নিয়ন্ত্রণ করতে পারব
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘জামায়াতে ইসলামী দল নিয়ন্ত্রণ করেছে, দেশও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। যারা নিজেদের দলই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তারা দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারবে না।’
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ শাখার রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের বেগমপাড়া কিংবা পিসিপাড়া নেই উল্লেখ করে দলটির আমির বলেন, জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতা কখনোই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাননি এবং যাবেনও না।
জামায়াত আমির বলেন, বিগত ৫৪ বছরে জামায়াতে ইসলামী দেশের একজন নাগরিকের প্রতিও অবিচার করেনি, জুলুম করেনি। জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতাকর্মী চাঁদাবাজি কিংবা সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত হননি, হবেও না। জামায়াত দল নিয়ন্ত্রণ করেছে, দেশও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দেশের সংকটকালে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জামায়াতে ইসলামীর নেতারা বিদেশ থেকে দেশে এসে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আধিপত্যবাদের দোসর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। যে কারণে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় বিচারিক হত্যা করা হয়েছে।
পৃথিবীর একমাত্র অসামপ্রদায়িক ধর্ম ইসলাম উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, মাদক কারবারি, ধর্ষক, খুনি, লুটেরাদের ভয় আছে—এ জন্য তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে।
আমিরে জামায়াত বলেন, সব ধর্মের নারী-পুরুষই রাষ্ট্রের কাছে সমান। রাষ্ট্র ধর্ম বা লিঙ্গের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য করতে পারে না। ইনসাফভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে সবার সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, ইসলাম ও দেশপ্রেমিক সবাইকে সঙ্গে নিয়ে পথ চলতে চায় জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতের রাজনীতি হবে কেবলই মানুষ ও মানবতার কল্যাণে।
জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ প্রমুখ।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জামায়াতে ইসলামী আগামীতে রাষ্ট্র পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মানুষের কল্যাণ সাধনের জন্যই জামায়াতে ইসলামী ব্যাপকভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। জামায়াতে ইসলামীকে কোনো ষড়যন্ত্রই অগ্রযাত্রা থেকে থামাতে পারেনি, পারবেও না। একটি বৈষম্যহীন, সুখী-সমৃদ্ধ, আধুনিক, কল্যাণ ও মানবিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে এগিয়ে আসার জন্য তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

নীলক্ষেতে প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে এইচএসসির ব্যাবহারিক খাতা
- অঙ্কনসহ পূর্ণ খাতা কিনে নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা
শিক্ষার মান ও নৈতিক অবক্ষয়ের অভিযোগ
মানজুর হোছাঈন মাহি

এইচএসসি পরীক্ষার ব্যাবহারিক খাতা শিক্ষার্থীদের নিজ হাতে লেখার কথা। কারণ এতে কেবল তথ্য নয়, শেখার প্রক্রিয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে ঠিক উল্টো। রাজধানীর নীলক্ষেত এলাকায় এখন একটি সরল হিসাব—টাকা দিলেই মিলবে পুরো লেখা ও অঙ্কনসহ খাতা।
রাজধানীর খিলগাঁও মডেল কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শরীফ আহমেদ (ছদ্মনাম) চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। সে এখনো কোনো ব্যাবহারিক খাতা লেখেনি। কারণ জানতে চাইলে বলে, ‘সব খাতা নীলক্ষেত থেকে কিনে নেব।
শুধু শরীফ নয়, রাজধানীর বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই প্রবণতা ব্যাপক। তারা ২০০ থেকে ৪০০ টাকায় নীলক্ষেত থেকে কেনে অঙ্কন ও লেখা সম্পন্ন ব্যাবহারিক খাতা—যেন একটি অবাধ বাণিজ্য এবং চলছে প্রকাশ্যেই।
নীলক্ষেতের দোকানে সরেজমিন : ‘লিখে দিচ্ছে আমাদের লোক’
শিক্ষার্থী পরিচয়ে ঢাকার নীলক্ষেতের ইসলামিয়া মার্কেটে সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, ব্যাবহারিক খাতার এই ‘বাজার’ বেশ সুসংগঠিত।
১৩৮ নম্বর দোকান ‘হ্যাপি বুক হাউজ’-এ গিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের খাতা চাইলে দোকানদার বলেন, ‘পেয়ে যাবেন, আজকেই দেওয়া যাবে। একদম আপডেট খাতা।
৯৪ নম্বর দোকান ‘সালমা বই ঘর’-এ গেলে পুরো বিজ্ঞান বিভাগের এক সেট খাতা দেখানো হয়। রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, উচ্চতর গণিত ও আইসিটি—সব বিষয়ের খাতা অঙ্কনসহ প্রস্তুত। দোকানদার জানান, প্রতিটি খাতা ৩০০ টাকা, আইসিটির জন্য ২০০ টাকা—মোট দাম তিন হাজার ৪০০ টাকা।
১০৩ নম্বর দোকান ‘ইব্রাহীম মেডিকেল বুক হাউজ’-এও একই চিত্র। প্রশ্ন করলে দোকানি বলেন, ‘আমাদের লোক আছে, তারাই লিখে দেয়।’ আবার ‘হ্যাপি বুক হাউজ’-এর একজন বলেন, ‘নার্সিং ইনস্টিটিউটের ছাত্রীরা এগুলো লেখেন ও আঁকেন।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রবণতা শিক্ষাব্যবস্থার ভয়াবহ এক অনিয়ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিনুর রশীদ বলেন, “ব্যাবহারিক খাতার কেনাবেচা এখন এক ধরনের ‘স্টার্টআপ বিজনেস’-এ পরিণত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা শিখছে না, বরং শিখছে কিভাবে অর্থের বিনিময়ে পাস করা যায়।”
তিনি আরো বলেন, ‘এই সংস্কৃতি শিক্ষক, প্রিন্সিপাল ও প্রশাসনের জেনেও চোখ বন্ধ রাখার ফল। ওপেন সিক্রেট এই দুর্নীতি শুধু শিক্ষার মান নয়, একটি জাতির ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছে।’
শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের আরেক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, ‘এটি একাডেমিক ফ্রডের সবচেয়ে বড় উদাহরণ। টার্ম পেপার, থিসিস, ব্যাবহারিক—সবই টাকা দিয়ে কেনা যাচ্ছে। এখনই না থামালে ভবিষ্যতে আমরা আত্মপ্রবঞ্চনার মধ্যে ডুবে যাব।’
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহসানুল কবির বলেন, ‘ব্যাবহারিক খাতার কেনাবেচা গুরুতর সমস্যা। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের খাতা নিজেরা লেখায় না, তারা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের উচিত কেনা খাতা গ্রহণ না করা। প্রয়োজনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যায়ে কড়া মনিটরিং ও অডিট চালু করতে হবে।’