পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’ (ঠেলে পাঠানো) করা ব্যক্তিদের ‘পুশব্যাক’ (ঠেলে ফেরত পাঠানো) করার বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না, জানা নেই। তবে যারা ভারতীয় নাগরিক হিসেবে প্রমাণিত, তাদের অবশ্যই ফেরত নিতে হবে।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। তিনি জানান, আগামী দু-এক দিনের মধ্যে দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন।
নতুন পররাষ্ট্রসচিব কে হবেন, সেটিও দু-এক দিনের মধ্যে জানাবে সরকার। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. আসাদ আলম সিয়াম পররাষ্ট্রসচিব হতে পারেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। তবে আরো কয়েকজনের নাম আলোচনায় আছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গতকাল সাংবাদিকদের পরবর্তী পররাষ্ট্রসচিবের নাম বলেননি।
বাংলাদেশে পুশ ইন করা ভারতের নাগরিক বা রোহিঙ্গাদের পুশব্যাক করা হবে কি না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত আমার কাছে এখন পর্যন্ত নেই। আমরা সাধারণত পুশব্যাক করি না। তবে বিষয়টি হলো, যারা ভারতীয় নাগরিক হিসেবে প্রমাণিত, তাদের অবশ্যই ফেরত নিতে হবে।’
সীমান্তে পুশ ইন নিয়ে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
তিনি আরো জানান, পুশ ইন নিয়ে বাংলাদেশের চিঠির জবাব দেয়নি ভারত।
জসীম উদ্দিনের পররাষ্ট্রসচিব পদ ছাড়ার প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘পররাষ্ট্রসচিব বিভিন্ন কারণে নিজে থেকে এখান থেকে সরে যেতে চান। সরে যেতে চান মানে এই দায়িত্ব থেকে চলে যেতে চান। আমরা তাঁকে সরে যেতে দিচ্ছি। উনি আগামী দু-এক দিনের মধ্যে দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন।
’
পররাষ্ট্রসচিব জসীম ছুটিতে যাবেন, নাকি চাকরি ছাড়ছেন, জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘উনি চাকরি ছেড়ে দেবেন কেন? চাকরিতে আছেন। উনার দায়িত্ব পরিবর্তন হবে।’
পররাষ্ট্রসচিব সরে যাচ্ছেন কেন আর আপনারা কেন তাঁকে সরে যেতে দিচ্ছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা আসলে ঠিক ব্যাখ্যা করার মতো বিষয় নয়। বিভিন্ন কারণে মানুষ দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করে এবং তেমন কোনো কারণে...।’
পররাষ্ট্রসচিব পরিবর্তনের সঙ্গে বাইরের চাপ আছে কি না, জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, যেকোনো সিদ্ধান্তের পেছনে অনেকের স্বার্থ, তাদের বিভিন্ন মতামত এগুলো থাকে। কখনো কোনো সিদ্ধান্ত কোনো একজন নিয়ে নেয় না। এর বিবেচনায় অনেক সময় সিদ্ধান্ত পরিবর্তনও হয়, দেখা যাক।
এদিকে সাবেক রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমানকে অন্তর্বর্তী সরকার গত ২০ এপ্রিল প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেয়। তবে এক মাস পার হয়ে গেলেও তিনি এখনো দায়িত্ব শুরু করেননি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, উনি এখন পর্যন্ত যোগ দেননি। সরকারের সিদ্ধান্ত যখন হবে তখন যোগ দেবেন বা দেবেন না।
সুফিউর রহমানের দায়িত্বে যোগ দিতে কোনো সমস্যা আছে কি না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘যোগদান করতে সমস্যার প্রশ্ন না। এ ব্যাপারে কিছু চিন্তা-ভাবনা চলছে। তাঁর দায়িত্ব পরিবর্তন বা কোনো কিছু। সেটা যথাসময়ে আপনারা জানতে পারবেন।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে সই হওয়া বাংলাদেশের চুক্তি বাতিলের কোনো সিদ্ধান্ত নেই সরকারের। স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য আমদানি বন্ধ করায় দিল্লিকে চিঠি পাঠানো হচ্ছে।’