ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাকিস্তান ও পাকিস্তান সমর্থিত সন্ত্রাসীদের সতর্ক করে বলেছেন, পেহেলগামের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে। অপারেশন সিন্দূরই এখন নতুন স্বাভাবিক ঘটনা বলেও জানান তিনি। স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার সকালে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমানঘাঁটি আদমপুরে মোদি এসব কথা বলেন।
এ সময় ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী নীতির মৌলিক পরিবর্তনের গুরুত্ব তুলে ধরে মোদি বলেন, ‘অপারেশন সিন্দূরই এখন নতুন স্বাভাবিক।
’ তিনি আরো জানান, এটি ভারতের সরকারের নীতি হয়ে উঠবে। এই নীতিতে যেকোনো রাষ্ট্র সমর্থিত সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ সময় মোদি জানান, নতুন ভারতের জীবন তিন সূত্রে গাঁথা। সেই সূত্রগুলো ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদী হামলা হলে ভারত চুপ করে বসে থাকবে না।
নিজের শর্তে জবাব দেবে। ভারত কোনো নিউক্লিয়ার ব্ল্যাকমেইল (পরমাণু হুমকি) সহ্য করবে না। সন্ত্রাসবাদী ও তাদের মদদদাতাদের আলাদা করে দেখবে না ভারত।’
দীর্ঘ ভাষণে মোদি ভারতীয় সেনাবাহিনীর কৃতিত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘অপারেশন সিন্দূরের আওয়াজ শত্রুদের কানে বাজছে।
যারা আমাদের মা-বোনদের সিঁদুর মুছেছে, ঘরে ঢুকে তাদের শেষ করা হয়েছে। জঙ্গিরা কাপুরুষের মতো লুকিয়ে ছিল। কিন্তু আমাদের সেনাবাহিনী সেখানে গিয়ে তাদের শেষ করেছে। আপনারা (ভারতীয় সেনাবাহিনী) ওদের সামনে থেকে হামলা করেছেন। জঙ্গিদের ৯টি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছেন।’
অপারেশন সিন্দূর সফল হয়েছে দাবি করে বিমান সেনাদের ভূয়সী প্রশংসা করেন মোদি। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল সন্ত্রাসের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া। কিন্তু পাকিস্তান ষড়যন্ত্র করে আমাদের হামলার সামনে যাত্রীবাহী বিমান পাঠিয়ে দিয়েছিল। যাত্রীবাহী বিমানকে বাঁচিয়ে আপনারা যেভাবে অপারেশন চালিয়েছেন সেটা অত্যন্ত কঠিন ছিল। তা সত্ত্বেও আপনারা সফল হয়েছেন।’ বিমান সেনারা কেবল অস্ত্র দিয়ে নয়, বরং তথ্য আর ড্রোন দিয়েই শত্রুকে শেষ করতে পারেন বলেও এ সময় উল্লেখ করেন মোদি।
এদিকে ভারতের সঙ্গে চার দিনের লড়াইয়ে পাকিস্তানের ৪০ বেসামরিক ও ১১ সেনাসহ মোট ৫১ জন নিহত হয়েছেন বলে দেশটির সামরিক বাহিনীর গণমাধ্যম শাখা জানিয়েছে। পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ (আইএসপিআর) জানায়, ৬ ও ৭ মে রাতে ভারতের সশস্ত্র বাহিনী ‘বিনা উনকানিতে’ নারী, শিশু ও বয়স্ক মানুষসহ নিরপরাধ বেসামরিক লোকদের লক্ষ্যস্থল করে হামলা চালিয়েছে।
এক বিবৃতিতে আইএসপিআর বলেছে, ‘এই বর্বর হামলায় ৪০ জন বেসামরিক শহীদ হয়েছে। তাদের মধ্যে সাতজন নারী ও ১৫টি শিশু রয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরো ১২১ জন। তাদের মধ্যে রয়েছে ১০ জন নারী ও ২৭টি শিশু।’
অন্যদিকে ভারত শাসিত কাশ্মীরে সেনা অভিযানে তিন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। শোপিয়ান জেলায় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে ‘সন্ত্রাসীদের’ বন্দুকযুদ্ধে এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এনডিটিভি জানিয়েছে, প্রথমে কুলগাম জেলায় দুই পক্ষের মধ্যে বন্দুক লড়াই শুরু হয়েছিল, তারপর সেখানে থেকে সরতে সরতে শোপিয়ানের একটি বন এলাকায় চলে যায়। ওই বনে আরেক ‘সন্ত্রাসী’ লুকিয়ে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর পেয়ে ভারতের সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে গঠিত নিরাপত্তা বাহিনীর দল ‘সন্ত্রাসীদের’ ঘেরাও করে ফেলে। তারপর থেকে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে দুই পক্ষের মধ্যে বন্দুক লড়াই চলে। সূত্র : এনডিটিভি, জিও নিউজ