দেশের পুঁজিবাজারের সূচকে আবারও বড় ধস হয়েছে। গতকাল বুধবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স একলাফে ১৪৯ পয়েন্টের বেশি কমে গিয়ে নেমেছে ৪৮০২ পয়েন্টে, যা গত সাড়ে চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৪৮০৯ পয়েন্ট।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন—সব মিলিয়ে দেশের শেয়ারবাজারে আস্থাহীনতা চলছে।
বাজার স্থিতিশীল করতে হলে এখনই জরুরি ভিত্তিতে বিনিয়োগবান্ধব ও স্বচ্ছ পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
পুঁজিবাজার নিয়ে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আগামী ১১ মে দুপুর ১২টায় উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, পুঁজিবাজার উন্নয়ন ও শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে এই সভার আয়োজন করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা সভায় সভাপতিত্ব করবেন। এতে অর্থ উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (অর্থ মন্ত্রণালয়), আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
গতকাল ডিএসইতে মাত্র ৯টি কম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে, ৩৮৫টির কমেছে এবং পাঁচটির দর অপরিবর্তিত ছিল।
ডিএসইএক্স সূচক ১৪৯ পয়েন্ট বা ৩ শতাংশ পড়ে ৪৮০২ পয়েন্টে নেমে এসেছে, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এক দিনে এই পতন ২০২৪ সালের ২৯ অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ। আর ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১০ হাজার কোটি টাকা। অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) বড় দরপতন হয়েছে।
গতকাল ডিএসইতে ৩৯৯টি কম্পানির ২৪ কোটি ৩০ লাখ ৯৩ হাজার ২৬টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে।
এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৯টির, কমেছে ৩৮৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে পাঁচটি কম্পানির শেয়ারদর।
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের কার্যদিবসের চেয়ে ১৪৯.৩১ পয়েন্ট কমে ৪৮০২.৪২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সব মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৫১৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকার। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫৪৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকার। সেই হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৩৩ কোটি ২৮ লাখ টাকার।
অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২৭০ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২১৭ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৮৭টির এবং ১০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ছয় কোটি ৫২ লাখ টাকার। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১১ কোটি ৮৮ লাখ টাকার।
গতকাল লেনদেনের এক পর্যায়ে প্রায় তিন ডজন প্রতিষ্ঠানের কোনো ক্রেতা ছিল না। লেনদেনের শেষ পর্যায়ে ২৬টি প্রতিষ্ঠান ক্রেতাশূন্য অবস্থায় মুখ থুবড়ে পড়েছে। এর মধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরির উল্লেখযোগ্য কম্পানি হলো বিচ হ্যাচারি ও ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস।
মিডওয়ে সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশিকুর রহমান বলেন, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কারণে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। ভু-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা নিয়ে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে অনেকে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন।’
একটি ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বাজারে গুজব ছড়িয়েছে যে সরকার বর্তমান বিএসইসি চেয়ারম্যানকে সরিয়ে দেবে। তবে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের চিঠি থেকে বোঝা যাচ্ছে, তিনি আপাতত থাকছেন। অথচ বাজারের বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী এবং ইন্টারমিডিয়ারি তাঁর অপসারণ চাচ্ছেন। এই অনিশ্চয়তাও বাজার পতনের আরেকটি কারণ।’
শেয়ারবাজারে চলমান অব্যাহত দরপতনের প্রতিবাদে এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদ কমিশনের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ (বিসিআইএ)।
সংগঠনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় মতিঝিলের ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ভবনের সামনে এই কর্মসূচি পালন করা হবে।
বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি এ কে এম মিজান উর রশিদ চৌধুরী শেয়ারবাজারের সব বিনিয়োগকারী এবং দেশের বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।