গ্রামের রাস্তা, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার, কাজ না করেই উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রধান কার্যালয়সহ ৩৬টি কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল মঙ্গলবার দুদকের প্রধান কার্যালয়সহ সারা দেশের সমন্বিত জেলা কার্যালয়গুলো থেকে একযোগে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে রডের বদলে বাঁশের চটা ব্যবহারসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। দুদকের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
দুদক সূত্র জানায়, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে ২০২৪ সালের বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসনের জন্য বরাদ্দকৃত এক হাজার ৯০৯ কোটি টাকার বরাদ্দকৃত প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়। গাজীপুর জেলা সদরের শিংরাতলি থেকে ভবানীপুর রাস্তার কাজে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় কাশিনগর ইউপির যাত্রাপুর থেকে শ্রীপুর ইউপির পারুয়ারা পর্যন্ত ২.৩ কিলোমিটার সড়ক পরিদর্শনকালে কিছু জায়গায় জলাবদ্ধতা, ফিনিশিং সমস্যা, কম পুরুত্বের কার্পেটিং এবং সড়কের দুই পাশের শোল্ডার না থাকার চিত্র দেখা যায়।
যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার খলশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে চারতলা ভবনের গাঠনিক কাজ শেষ হলেও অন্যান্য কাজ চলমান এবং এতে বাঁশের চটা ব্যবহার করা হয়েছে।
স্কুল ভবনের উইন্ডো সিলিং এবং সেলফ ঢালাইয়ের কাজে রড ব্যবহার, ভবনের ৭ ফুট ১১ ইঞ্চি সেলফের ঢালাই কাজে লং ডিসটেন্সে মাত্র একটি রড এবং শর্ট ডিসটেন্সে মাত্র তিনটি রড ব্যবহার করার তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার সিংগা হাই স্কুল থেকে রামদিয়া পর্যন্ত ৭.৫ কিলোমিটার সড়ক কার্পেটিংয়ে অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। এলজিইডি, কমলনগর উপজেলা, লক্ষ্মীপুরের একটি চলমান প্রকল্পে রাস্তা নির্মাণে ব্যবহৃত ইটের খোয়া নিম্নমানের বলে প্রতীয়মান হয়। বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার কালিখোলা বলভদ্রপুর কালীমন্দির থেকে বালিয়াডাঙ্গা পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়ক নির্মাণসহ ওই উপজেলায় এলজিইডি কর্তৃক অন্যান্য সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের খোয়া ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। গাইবান্ধার চৌধুরীপাড়া গণপাঠাগার এবং একতা সংঘের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা ইউনিয়নের সিকদার মার্কেট থেকে আবেদ আলী মুন্সী কান্দির সড়কে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়।
এ ছাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, দিনাজপুর ও জামালপুর, উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়, ঢাকার কেরানীগঞ্জ, বরিশালের মুলাদী, বগুড়ার শিবগঞ্জ, কক্সবাজারের রামু, চট্টগ্রামের আনোয়ারা, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ, মাগুরার শ্রীপুর, খুলনার বটিয়াঘাটা, কিশোরগঞ্জ সদর, কুড়িগ্রামের উলিপুর, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর, নারায়ণগঞ্জের বন্দর, নোয়াখালীর কবিরহাট, নওগাঁ সদর, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, পটুয়াখালী সদর, পিরোজপুরের নাজিরপুর, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর, টাঙ্গাইলের ভুঞাপুর, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া, রাঙামাটির কাপ্তাই ও ময়মনসিংহের ত্রিশালে পরিচালিত অভিযানে নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া যায়। এসব অভিযানে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এনফোর্সমেন্ট টিমগুলো কমিশনের কাছে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেবে।