রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে ঢুকতেই শুরুতে চোখ আটকে যায় রংধনুর সাতরঙে আঁকা আলপনায়। একটু সামনে এগোতেই লাল-নীল-হলুদ রঙের বেলুনের বিপুল সমাহার। তার নিচে খোলা ফ্লোরে খড় দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ছোট ছোট বাহারি পোশাকের দোকান। আর সেখানকার আলোকসজ্জা আমেজ ছড়াচ্ছে, যেন জোনাক পোকার ঝিলমিলে আলো।
এই আয়োজন ঘিরে কাঠের ফ্রেমে আলপনা এঁকে লেখা রয়েছে ‘শুভ নববর্ষ-১৪৩২’। ইট-পাথরের শহরে এভাবেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের বৈশাখী মেলা।
গতকাল রবিবার থেকে বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে শুরু হয়েছে ৯ দিনের বৈশাখী আয়োজন। এ জন্য পুরো মল সাজানো হয়েছে বৈশাখী সাজে।
লিফটের আটতলায় করা হয়েছে মুড়ি-মুড়কি, পান্তা-ইলিশসহ বৈশাখের সব মুখরোচক খাবারের আয়োজন। হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী বৈশাখের উৎসব সবার সামনে তুলে ধরার প্রয়াসে ৯ দিনের এই বর্ণিল বৈশাখী মেলার আয়োজন করেছে বসুন্ধরা সিটি শপিং মল। এই মেলায় বাঙালি ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির এক অপূর্ব মিলন ঘটেছে।
গতকাল দুপুরে পান্থপথে অভিজাত এই শপিং মলে বৈশাখী মেলা ও উৎসবের উদ্বোধন করেন বসুন্ধরা গ্রুপের বসুন্ধরা সিটি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের (বিসিডিএল) ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ক্যাপ্টেন (অব.) শেখ এহসান রেজা।
এ সময় প্রতিষ্ঠানের অন্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের আয়োজনে গতকাল শুরু হওয়া এই বৈশাখী মেলা চলবে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
উদ্বোধনের সময় শেখ এহসান রেজা বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ বাঙালির ঐতিহ্যের একটি আনন্দময় উৎসব। আমরা সবাই মিলে এই উৎসব উদযাপন করে থাকি।
এই উদযাপনকে আরো রঙিন করে তুলতে বিসিডিএল ও বসুন্ধরা শপিং মলের দেশি-বিদেশি কিছু স্বনামখ্যাত ব্র্যান্ডের সহায়তায় আমাদের এই বৈশাখী মেলা।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে আগত দর্শনার্থীদের স্মরণীয় অভিজ্ঞতা উপহার দেওয়া। এবার প্রথমবারের মতো বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে বৈশাখের ঐতিহ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বহু ধরনের দেশি ও সুস্বাদু খাবারের আয়োজন করা হয়েছে, যা বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের লেভেল আটের তিনটি স্টলে পাওয়া যাবে। আমি সবাইকে অনুরোধ করব, সবাই যেন বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে আসেন এবং আমাদের এই আনন্দে শরিক হন।’
বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে বৈশাখী মেলা ও উৎসবকে রাঙিয়ে তুলতে অংশ নিচ্ছে দেশি-বিদেশি সেরা ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো। এ ছাড়া পাশাপাশি থাকছে চুড়ির মেলা, ফুল, দেশীয় খাবার, হাওয়াই মিঠাই, ঢোল ও ঢুলির সঙ্গে ক্লাসিক্যাল ফ্ল্যাশ মব। কেনাকাটা, থিম পার্কে সময় কাটানো কিংবা মুভি দেখার পাশাপাশি চলবে বৈশাখী উৎসবের বর্ণিল এই আয়োজন। এর মাধ্যমে আধুনিকতার সঙ্গে বাঙালি ঐতিহ্যের অভূতপূর্ব মেলবন্ধন ঘটবে বলে আশা করছেন আয়োজকরা।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিভিন্ন স্টলে কেনাকাটায় ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। মেলায় ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্ট দিচ্ছে লাইভ শপিং। প্রতিষ্ঠানটির সেলস এক্সিকিউটিভ তাহমিদ বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন পণ্যে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকাও ডিসকাউন্ট আছে। পাশাপাশি একটি পণ্য কিনলে মাত্র ৭৫ টাকায় মিলছে টি-শার্ট।’
মেলায় বিভিন্ন ধরনের পোশাকে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট দিচ্ছে ভোগ বাই প্রিন্স। প্রতিষ্ঠানটির সেলস এক্সিকিউটিভ সালমান বলেন, ‘আমাদের লেডিস ও জেন্টস দুই ধরনেরই পোশাক আছে। পাঁচতলায় আমাদের শোরুম আছে। সেখান থেকেও কেনাকাটার সুযোগ আছে।’
মেলায় আরো রয়েছে বায়োস্কোপ, হাওয়াই মিঠাই, চুড়ির মেলা, ফুল, দেশি-বিদেশি ফ্যাশন ব্র্যান্ড শপ-বিটু, ইনফিনিটি মেগা মল, শিশু পরিবহন, লাইভ শপিং, ভোগ বাই প্রিন্স ও স্পাশ।
এ ছাড়া শপিং মলের লেভেল-৮-এ চড়ুইভাতির আড্ডা, পিঠাপুলির আসর ও শরবতের হাঁড়ি খাবারের স্টলে থাকবে বাংলার ঐতিহ্যবাহী খাবার পান্তা-ইলিশ, ইলিশ-পোলাও, ইলিশ-খিচুড়ি, রূপচাঁদা ফ্রাই, বগুড়ার দই, চার রকমের ভর্তা ও পিঠা-পাটিসাপটা, নলডা, মালপোয়া, নিমকি, চিনি ও গুড়ের মুড়ালি, কদমা/তিলা, চিনির হাতি-ঘোড়া, মুড়ির মোয়া, নাড়ু, জুস, কুষ্টিয়ার কুলফি এবং ঢোল ও চুলির সঙ্গে ক্লাসিক্যাল ফ্ল্যাশ মব।