টিকটক ভিডিও বানাতে গিয়ে প্রায়ই হতাহতের শিকার হচ্ছেন তরুণ-তরুণীরা। দ্রুত পরিচিতি অর্জন এবং অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে জনপ্রিয়তা বাড়ছে অ্যাপটির। প্রতিযোগিতার বাজারে ভিউ বাড়াতে বিভিন্ন ‘স্টান্টবাজি’ ও ‘হিরোইজম’ কর্মকাণ্ডে ঝুঁকে পড়ছেন ব্যবহারকারীরা। ফলে টিকটকের অপব্যবহারে দিন দিন মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে।
টিকটক ভিডিও বানাতে গিয়ে ঝুঁকি, বাড়ছে মৃত্যু
শরীফ শাওন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় চলন্ত ট্রেনের ছাদে দাঁড়িয়ে টিকটক ভিডিও বানানোর সময় পড়ে গিয়ে আবদুল কাইয়ুম মিয়া (২২) ও তারেক মিয়া (২০) নামের দুই তরুণের মৃত্যু হয়েছে। গত ২ এপ্রিল এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন দুজন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের এ পর্যন্ত মোবাইল ফোনে টিকটক ভিডিও বানানোকে কেন্দ্র করে অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশত।
বিশ্লেষকদের দাবি, আইসিটি গাইডলাইন অনুসরণ না করে অ্যাপ পরিচালনা করা, পর্যাপ্ত সচেতনতা তৈরির পদক্ষেপ না নেওয়া এবং ব্যবহারকারীদের উচ্চাভিলাষ ও অসাবধানতার কারণে দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে।
বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, ২০২২ সালে টিকটক করতে গিয়ে দেশে অন্তত ১০ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। কয়েক বছর ধরে চীনা শর্ট ভিডিও মেকিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকের অপব্যবহার এতটা বেড়েছে যে বর্তমান প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এটি মৃত্যুফাঁদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘টিকটক ভিডিও বানাতে গিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে।
তিনি আরো বলেন, ‘আইসিটি গাইডলাইনে বলা হয়েছে, এ ধরনের অ্যাপ ব্যবহারের সময় কেউ হতাহতের শিকার হলে অ্যাপ কর্তৃপক্ষ সেই ক্ষতিপূরণ বহন করবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনার দিনই সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় বাসের ছাদে টিকটক ভিডিও বানাতে গিয়ে সাকিব (১৮) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার পুটিয়া ইউনিয়নে গত ৫ ফেব্রুয়ারি টিকটক করা নিয়ে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে মুবিনুল হক মুমিন (১৭)। পরে ছুরিকাঘাতে তার মৃত্যু হয়। একই ঘটনায় একজন গুরুতর আহত হয়।
শুধু টিকটক নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা পোস্টকে কেন্দ্র করে সুনামগঞ্জের জামালপুরে গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গত ১ এপ্রিলের এই সংঘর্ষে পাঁচজন গুলিবিদ্ধসহ ৪০ জন গুরুতর আহত হন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ঝুঁকিপূর্ণভাবে শুধু বাস বা ট্রেনের ছাদে নয়, এক্সপ্রেসওয়ে বা হাইওয়ের মতো সড়কগুলোর মধ্যে দাঁড়িয়েও টিকটক ব্যবহারকারীরা ভিডিও তৈরি করেন। এ সময় তাঁরা সড়কে নয়, বরং পারদর্শিতায় নজর দিতে গিয়ে নানা দুর্ঘটনায় পড়েন। বিভিন্ন আবাসিক এলাকায়ও মোটরসাইকেলে ‘স্টান্টবাজি’ করা এখন নিত্যদিনের বিষয়। এ ছাড়া কেউ কেউ আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে ভিডিও তৈরি করেন। অসাবধানতাবশত এসব অস্ত্রের মাধ্যমে তাঁদের হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। ‘হিরোইজম’ (বীরত্ব) ফলাতে ও ভিউ বাড়াতে তাঁরা এমন নানা ধরনের ভয়ংকর কাজ করে থাকেন। দ্রুত পরিচিতি লাভ এবং অর্থ উপার্জনের সহজ মাধ্যম হিসেবে অন্যরাও এসব কর্মকাণ্ডে আকৃষ্ট হন। আইনের চোখে এগুলো অপরাধ না হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। তবে এগুলো সামাজিক অপরাধ। দর্শকদের আকর্ষণ করতে ভিন্ন কিছু করার এমন প্রবণতা তৈরি হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ বি এম নাজমুস সাকিব কালের কণ্ঠকে বলেন, এগুলো একটি অপসংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। তাদের এই প্রবণতা থেকে বের করে মূল সংস্কৃতিতে নিয়ে আসতে হবে। এ জন্য সন্তানদের ওপর পরিবারের পর্যাপ্ত নজরদারির পাশাপাশি বিনোদনের জন্য খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে গুরুত্বারোপ করতে হবে। টিকটকের নামে বর্তমানে যা চলছে তা সমাজের আইন-কানুন দিয়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। তারা বিনোদন হিসেবেই এসব কর্মকাণ্ড করছে, যা শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা নব্বইয়ের দশকে সামাজিকীকরণ ও সংস্কৃতি, বিশেষ করে কিছু অলিখিত সামাজিকতা দেখেছি। সন্ধ্যার পর সন্তানদের বাড়ির বাইরে থাকা যাবে না। সন্তানরা কাদের সঙ্গে চলাফেরা করছে তা অভিভাবকরা নজরদারিতে রাখতেন। বিভিন্ন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সন্তানদের সম্পৃক্ততা ছিল। বর্তমানে টেকনোলজির সময়ে অভিভাবকরা এসব নজরদারি করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। অন্যদিকে একটি বাচ্চা যখন টিকটকের ভিডিও বানিয়ে রাতারাতি পরিচিতি পেয়ে যায় বা বিপুল অর্থ উপার্জন করে, তখন তা অন্যদের মধ্যেও এসব কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়।’
সম্পর্কিত খবর

মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্ত
‘কেউ তো জানাবে আমার মেয়ে বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে?’
নিজস্ব প্রতিবেদক

‘যদি দেখতাম আমার পাখি ফিরে এসেছে, দরজায় দাঁড়িয়ে বলছে : আম্মু, দরজা খোল। গতকাল মঙ্গলবার সকালে এমন বিলাপ ভেসে আসছিল রাজধানীর উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আঙিনায়। কথাটি বারবার কানে বাজছিল অন্যদেরও। বিলাপ করছিলেন রাবেয়া খাতুন মিম।
এ ঘটনায় রইসার মা রাবেয়া খাতুন মিম চোখে অন্ধকার দেখছেন। বেশির ভাগ সময় বাকরুদ্ধ থাকছেন। গত সোমবার দিনভর স্কুল প্রাঙ্গণসহ রাজধানীর অন্তত আটটি হাসপাতালে ছুটে গেছেন, সন্তানের খোঁজ পাননি। আশায় বুক বেঁধে আছেন, হয়তো জীবিত অবস্থায় তাঁর কোলে ফিরে আসবে ছোট্ট শিশুটি।
যাঁরা তাঁর বিলাপ শুনছিলেন তাঁরা আরো কিছু জানতে চাইছিলেন। কিন্তু কান্নার জন্য রাবেয়া আর কিছুই বলতে পারছিলেন না। তিনি কেবলই বিলাপ করছিলেন। একই কথা বারবার বলছিলেন : ‘যদি দেখতাম আমার পাখি ফিরে এসেছে... দরজায় দাঁড়িয়ে বলছে আম্মু, দরজা খোল।’
পাশেই ছিলেন রাইসার মামা সাগর হোসেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাতভর রাইসাকে খুঁজেছি। সকাল হতেই আবার খুঁজতে এসেছি। তার বই, খাতা, আইডি কার্ড পেয়েছি। তাকে কেন পাওয়া যাচ্ছে না? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট কেউ তার খোঁজ দিতে পারছে না। জীবিত বা মৃত, যাই হোক সন্ধান তো পাওয়ার কথা।’
স্কুল প্রাঙ্গণে নিখোঁজ সন্তানের খোঁজ নিতে এসেছিলেন তানিয়া আক্তার। তাঁর মেয়ে মারিয়াম উম্মে আফিয়াকে খুঁজতে খুঁজতে দিশাহারা তিনিও। সামনে যাকেই পাচ্ছিলেন তাকেই মেয়ের ছবি দেখিয়ে খোঁজ জানার চেষ্টা করছিলেন। আফিয়া এই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী জানিয়ে তানিয়া আক্তার বলেন, ‘প্রতিদিন স্কুল শেষে সে কোচিং করত। নিজে থেকে বাসায় ফিরত। সেদিন (সোমবার) আর ফেরেনি। বিমান দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলের কাছে ছুটে যাই। কিন্তু আমার বাচ্চাকে কোথাও খুঁজে পাইনি। রাতভর বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেছি। আজ সকালে আবারও স্কুলে এসেছি, হয়তো কেউ কিছু বলতে পারবে। কিন্তু কেউ তার খোঁজ দিতে পারছে না। অন্তত কেউ তো জানাবে আমার মেয়ে বেঁচে আছে, নাকি মারা গেছে!’

চিকিৎসক-নার্সদের অভিজ্ঞতা
‘ভেতরে যেন প্রাণ আছে বাইরে পোড়া লাশ’
- মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্ত
জুবায়ের আহমেদ

‘আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম চলছিল। হঠাৎ খবর আসে, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় মাইলস্টোন স্কুল থেকে বেশ কিছু শিক্ষার্থী জরুরি বিভাগে আসছে। প্রথমে কেউ কিছু বুঝতে পারছিল না কী ঘটেছে। আমরা প্রস্তুতি নিই, কিন্তু বুঝে উঠতে পারিনি ঘটনা এতটাই হৃদয়বিদারক!’
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোল স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনার পর দগ্ধদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার এসব অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন উত্তরা আধুনিক হাসপাতালের ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. বজলুর রহমান আদিল।
আহতদের মধ্যে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশের অবস্থা গুরুতর ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিছু দগ্ধের শরীর থেকে চামড়া উঠে গিয়েছিল, যা দেখতে অত্যন্ত মর্মান্তিক ছিল। জীবিত মানুষের শরীর থেকে চামড়া উঠে যাওয়া এক বিভীষিকাময় দৃশ্য ছিল। ভেতরে যেন প্রাণ আছে, বাইরে পোড়া কোনো লাশ।’
শিশু শিক্ষার্থীদের পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে ডা. বজলুর রহমান আদিল বলেন, ‘শিশুদের অবস্থা আরো হৃদয়বিদারক ছিল।
ডা. বজলুর রহমান আদিল এ কথা বলতে বলতে কান্না ধরে রাখতে পারেননি।
মাইলস্টোন ট্র্যাজেডির বিভীষিকাময় দিনটি দেখে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন উত্তরা আধুনিক হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স সামিউল আলম। তিনি বলেন, ‘প্রথমে আসে এক সাত-আট বছরের মেয়ে শিশু। মেয়েটির শরীরের চামড়া ঝুলছিল, কাপড় পুড়ে গেছে। অথচ তাদের সঙ্গে কেউ নেই, না অভিভাবক, না শিক্ষক।’
তিনি বলেন, ‘তখনো কেউ ভাবতে পারিনি, এটি কেবল শুরু। মাত্র পাঁচ-সাত মিনিট পরই একের পর এক পোড়া রোগী ঢুকতে থাকে জরুরি বিভাগে। কাউকে কাঁধে করে, কাউকে ট্রলিতে চাপিয়ে আনা হচ্ছিল। ছোট ছোট বাচ্চারা, তাদের শরীর পুড়ে কালো হয়ে গেছে। কারো মুখে চামড়া নেই, কারো পিঠ গলে গেছে, কারো শরীরের চামড়া ঝুলে ঝুলে পড়ছে। প্রথমে আনা প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থীর বেশির ভাগেরই ৯০ শতাংশ শরীর পুড়ে গিয়েছিল। শ্বাসকষ্টে থাকা দেহগুলোকে অক্সিজেন দেব, সেই অবস্থাও নেই। কারণ কণ্ঠনালিও পুড়ে গেছে।’
সিনিয়র এই নার্স বলেন, ‘জরুরি বিভাগের ফ্লোরে এত পানি জমে গিয়েছিল যে মনে হচ্ছিল পায়ের গোড়ালি সমান পানিতে দাঁড়িয়ে আছি। আর সেই পানির মধ্যে পড়ে আছে দগ্ধ শিশুরা, ব্যান্ডেজ আর স্যালাইন।’
মর্মান্তিক ঘটনা মনে করে লুবানা জেনারেল হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মিরাজুন নাবী চঞ্চল বলেন, ‘ঘটনার দিন সারাক্ষণ কেবল শিশুদের যন্ত্রণা দেখেছি। রাতে গিয়ে ঘুমানো যায়নি। এত ছোট দেহে এত যন্ত্রণা! না তারা কোনো ভুল করেছে, যার জন্য এই সাজা? তারা তো কেবল স্কুলে গিয়েছিল!’

স্থায়ী কমিটির বৈঠক
বিএনপিকে বিব্রত করতে ‘অযৌক্তিক’ সংস্কার প্রস্তাব দিচ্ছে সরকার
নিজস্ব প্রতিবেদক

সংস্কারের নামে বিভিন্ন নতুন প্রস্তাব সামনে এনে অন্তর্বর্তী সরকার বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলতে চাচ্ছে বলে মনে করছে বিএনপি। দলটি বলেছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এমন সব সংস্কার প্রস্তাব আনছে, যা বাস্তবায়নযোগ্য নয়, যার কারণে বিব্রত হচ্ছে।
গত সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয় বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
বৈঠকে বিএনপি নেতাদের অভিমত, গণতন্ত্রের ইতিহাসে দেশে দেশে যেগুলোর স্বাভাবিক প্র্যাকটিস আছে, সেগুলোও কমিশন উপেক্ষা করতে চাচ্ছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
বিএনপি নেতারা মনে করছেন, রাজনীতিতে ক্রিয়াশীল অন্য দলগুলো অনেক বড় দল নয়। নির্বাচন হলে তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। সে ক্ষেত্রে ঐকমত্য কমিশনের সব প্রস্তাব মেনে নিলেও তাদের কোনো সমস্যা নেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুজন সদস্য বলেন, বর্তমানে অযৌক্তিক অনেক সংস্কার প্রস্তাব আনা হচ্ছে, যার উদ্দেশ্য বিএনপিকে বেঁধে ফেলা।
স্থায়ী কমিটির গত বৈঠকের মতো এ বৈঠকেও রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। দলটি তাদের মধ্যে ক্ষমতার কিছু ভারসাম্য আনতে রাজি আছে। তবে এমন ভারসাম্য চায় না, যেখানে সরকারপ্রধান তথা প্রধানমন্ত্রীর হাতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা থাকবে না। স্থায়ী কমিটি মনে করে, সার্বিক বিবেচনায় সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হাতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। বিএনপি নেতারা অভিমত দেন, রাষ্ট্রপতির কিছু ক্ষমতা, অর্থাৎ স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দু-একটি বিষয়ে ক্ষমতা বাড়ানো যেতে পারে। তবে রাষ্ট্রপতিকে যদি ব্যাপকভাবে ক্ষমতায়িত করা হয়, তাহলে সংসদীয় গণতন্ত্র তো তেমন অর্থবহ থাকবে না। সে ক্ষেত্রে সংসদেরই বা কী দরকার। প্রধানমন্ত্রীর হাতে যথেষ্ট ক্ষমতা না থাকলে সংসদীয় গণতন্ত্র অকার্যকর হয়ে পড়বে। তবে এই আলোচনায় এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এটা নিয়ে ভবিষ্যতে আরো আলোচনা হবে।
এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গত সোমবার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভেতরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের মর্মান্তিক ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করা হয়। এ বিষয়ে সভায় শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়। সভায় নিহত ছাত্র-ছাত্রী ও পাইলটের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত, আহতদের আশু সুস্থতা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করা হয়।
সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ ও অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

পাকিস্তানের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি
ম্যাচের সঙ্গে সিরিজও বাংলাদেশের
বোরহান জাবেদ

একে তো পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের হাতছানি। মানসিক চাপ অনুভব করা অস্বাভাবিক ছিল না বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের। তার ওপর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়ে গেছে পুরো দেশকে। সেই বিষণ্নতা ছুঁয়ে গেছে লিটন দাস-তাওহিদ হৃদয়দেরও।
এই সংস্করণে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবার সিরিজ জয়ের স্বাদও যোগ হয়েছে এই জয়ে। স্বাভাবিকভাবে উচ্ছ্বাস ছুঁয়ে গেছে কানায় কানায় পরিপূর্ণ মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারির দর্শকদের। অবশ্য ম্যাচের পূর্বাভাসে রঙিন দিনের বার্তা ছিল না।
চার বল বাকি থাকতে পাকিস্তান অলআউট হয় ১২৫ রানে। মিরপুরের উইকেটে প্রথম টি-টোয়েন্টির মতো গতকালও ব্যাট হাতে রীতিমতো খাবি খেয়েছেন পাকিস্তানের ব্যাটাররা।
পাকিস্তানের ইনিংসের পতন শুরু হয় সাইম আইয়ুবের রান আউট দিয়ে। এরপর শরিফুল ইসলামের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন মোহাম্মদ হারিস। এক ওভার বিরতি দিয়ে নিজের পরের ওভারে সফরকারী দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটার ফখর জামানের উইকেট তুলে নেন তাসকিন আহমেদের জায়গায় একাদশে ঢোকা শরিফুল। পরের ওভারে প্রথমবার আক্রমণে এসে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপের কোমর ভেঙে দেন তরুণ পেসার তানজিম হাসান সাকিব। টানা দুই বলে দুই নাওয়াজকে ড্রেসিংরুমের পথ দেখিয়ে দেন তানজিম। অফ স্টাম্প লাইনে লাফিয়ে ওঠা দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে আগ্রাসী ব্যাটার হাসান নাওয়াজকে উইকেটকিপার লিটন দাসের ক্যাচে পরিণত করেন তানজিম। এই পেসারের একই রকম ডেলিভারিতে উইকেটকিপার লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মোহাম্মদ নাওয়াজও।
প্রথম পাঁচ ব্যাটারকে ১৫ রানের মধ্যে হারানো পাকিস্তান আর দিশা খুঁজে পায়নি। বরং উইকেটে হাঁপিয়ে উঠে প্রথম টি-টোয়েন্টি-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তান দলের কোচ মাইক হেসনের কথার সঙ্গে যেন একাত্মতা ঘোষণা করে যান সালমান আগা। অফ স্পিনার শেখ মেহেদী হাসানের বলে আউট হওয়ার আগে ২৩টি বল খেলেন পাকিস্তান অধিনায়ক। ৯ রান করেন সালমান। একবারের জন্যও মনে হয়নি তিনি ব্যাটিংটা ঠিকঠাক করতে পারেন এবং এই সংস্করণে চলতি বছর পাকিস্তানের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক (২৬৯) ও স্ট্রাইক রেট (১৩৬.৮৪) তাঁর। ব্যাটে বল ছোঁয়াতে রীতিমতো সংগ্রাম করেছেন তিনি। প্রথম ম্যাচ শেষে মিরপুরের উইকেট নিয়ে কোচ হেসনের সঙ্গে সমালোচকের তালিকায় যুক্ত ছিলেন সালমানও। তাঁর দাবি ছিল, বাংলাদেশে কখনোই ভালো মানের উইকেট পাওয়া যায় না।
এই ম্যাচের পর সালমানের সেই বিশ্বাস আরো দৃঢ় হবে বৈকি। সালমানের বিদায়ের পর রানের চাকা ঘোরাতে চেষ্টা করেন ফাহিম আশরাফ, আব্বাস আফ্রিদি ও দানিয়েল। শেষ পর্যন্ত সেই চেষ্টা বৃথা গেছে। বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুটাও পাকিস্তানের মতো। পাওয়ার প্লের ৫.৫ ওভারে ২৮ রানে প্রথম সারির চার ব্যাটার মোহাম্মদ নাঈম, পারভেজ হোসেন ইমন, লিটন দাস ও তাওহিদ হৃদয়ের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এদিন তানজিদ হাসান তামিমকে বসিয়ে একাদশে সুযোগ দেওয়া হয় নাঈমকে। ৭ বলে ৩ রান করে নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি এই বাঁহাতি ওপেনার। আড়াই বছরের বেশি সময় পর সর্বশেষ শ্রীলঙ্কা সিরিজ দিয়ে দলে ফিরেছিলেন নাঈম। সেই সিরিজে এক ম্যাচে সুযোগ পেয়েছিলেন চার নাম্বারে। সিরিজ শেষে জানিয়েছিলেন, চারে খেলার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন না। যদিও গতকাল পছন্দের ওপেনিংয়ে নেমেও নাঈমের ব্যাটিংয়ে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগেনি। চার উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশের ইনিংসের গল্পটা সীমাবদ্ধ জাকের আলী অনিক ও শেখ মেহেদীর দুটি ইনিংসে। পঞ্চম উইকেটে দুজনে ৫৩ রান যোগ করে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দিয়েছিলেন। এখান থেকে ৩৩ রান করে শেখ মেহেদী আউট হয়ে গেলেও বাংলাদেশ ইনিংসের শেষ ওভার পর্যন্ত ছিলেন জাকের। শেষ বলে আব্বাস আফ্রিদির হাতে আউট হওয়ার আগে জাকেরের ব্যাট থেকে আসে ৫৫ রান। তাতে যে লড়াইয়ের পুঁজি আসে, সেটা দিয়েই পাকিস্তানের ব্যাটারদের বেঁধে ফেলেন বাংলাদেশের বোলাররা। আনন্দ দ্বিগুণ হয়েছে সিরিজ জয়ের ছোঁয়ায়।