ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭

সুপেয় পানির সংকটে এলাকা ছাড়ছে মানুষ

নিখিল ভদ্র
নিখিল ভদ্র
শেয়ার
সুপেয় পানির সংকটে এলাকা ছাড়ছে মানুষ

জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, লবণাক্ততার আগ্রাসন ও মনুষ্যসৃষ্ট নানা কারণে সারা দেশে সুপেয় পানির সংকট বাড়ছে। এতে সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যগত সমস্যাসহ নানা ধরনের ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে। এমনকি সুপেয় পানির সংকট এড়াতে মানুষ এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। দেশের উপকূলীয় এলাকায় এই প্রবণতা বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং আরিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় বলা হয়েছে, লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় ভবিষ্যতে বাংলাদেশের উপকূলের প্রায় দুই লাখ কৃষক বাস্তুচ্যুত হবেন। কারণ সেখানকার মাটি ধান চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। একই সঙ্গে সুপেয় পানির সংকট আরো বাড়বে। লবণাক্ততার আগ্রাসন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে উপকূলীয় এলাকার সুপেয় পানির উৎসগুলো নষ্ট হয়ে যায়।

সমস্যা সমাধানে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে পুকুর খনন, নলকূপ স্থাপন, লবণ পানি পরিশোধন যন্ত্রপন্ডস অ্যান্ড ফিল্টার (পিএসএফ) স্থাপন এবং বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং-এর মতো প্রকল্প নেওয়া হলেও তেমন সুফল মেলেনি। মেরামত ও সংরক্ষণ না করায় এরই মধ্যে বেশির ভাগ পিএসএফ নষ্ট হয়ে পড়েছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো পৌর এলাকায় ওভারহেড ট্যাংকের মাধ্যমে পাইপলাইনে পানি সরবরাহ, রিভার্স অসমোসিস প্লান্ট, বায়োস্যান্ড ফিল্টার বসানোর পর সেগুলোও নষ্ট হচ্ছে।

এই অবস্থায় সহনীয় মাত্রার থেকে বেশি মাত্রার লবণ পানি পান ও ব্যবহারের ফলে উপকূলের মানুষের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি ও দুর্ভোগ বাড়ছে।

মোটা অঙ্কের অর্থ ও সময় ব্যয় করে খাবারের পানি সংগ্রহ করলেও বেশির ভাগ মানুষকে গোসলসহ দৈনন্দিন অন্যান্য কাজ নোনা পানিতে সারতে হয়।

জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা। গাবুরার চারপাশ ঘিরে রেখেছে খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষ নদ। ঘূর্ণিঝড় আইলায় গাবুরার চকবারা গ্রামের বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে লবণ পানি ঢোকে। কয়েক মাস ধরে চলে জোয়ার-ভাটা।

ফলে সুপেয় পানির উৎসগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এরপর বেশির ভাগ পরিবারের মানুষ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। আইলার আগে গ্রামটিতে তিন শতাধিক পরিবারের বসতি থাকলেও বর্তমানে ১২০টি পরিবার।

খুলনার কয়রা উপজেলার চিত্রও একই রকম। ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও ইয়াসের সময় নদীর বাঁধ ভেঙে উপজেলার বেশির ভাগ ইউনিয়নে ছয় মাস জোয়ার-ভাটা হয়েছে। বাঁধটি সংস্কার করা হলেও সেখানকার মানুষ এখনো নদীতে জোয়ারের পানি বাড়লে আতঙ্কে থাকে। সেই আতঙ্কের কারণে অনেকেই শহরে পাড়ি জমাচ্ছে।

উপকূলীয় এলাকায় জলবায়ু ও পানি সংকট নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা লিডার্স। লিডার্সের নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মণ্ডল কালের কণ্ঠকে জানান, উপকূলের ৭৩ শতাংশ মানুষ সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত।

বিশ্ব পানি দিবসকে সামনে রেখে আবারও উপকূলে লবণ পানির আগ্রাসন ও সুপেয় পানির সংকটের বিষয়টি সামনে এসেছে। আজ ২২ মার্চ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিশ্ব পানি দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

এদিকে সুপেয় পানির সংকট মোকাবেলায় সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি বলে মনে করেন পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ম. ইনামূল হক। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, পানির চাহিদা ও প্রাপ্যতা বিবেচনায় সংকটপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে সংকট উত্তরণে করণীয় বিবেচনায় জনমত যাচাইসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় সময়ভিত্তিক পরিকল্পনা করতে হবে। বৃষ্টির পানি ও ভূ-উপরিস্থ পানির আধার সংরক্ষণ, জলাধারগুলো সংস্কারসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সুপেয় পানির সংকটে থাকা এলাকায় জনগণের পানির চাহিদা মেটাতে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে পাট চাষ

শেয়ার
তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে  পাট চাষ

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে করা হয়েছে পাট চাষ। সেই পাট কেটে মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পানিতে জাগ দেওয়ার জন্য। গতকাল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের চর বাঘমারা থেকে তোলা। ছবি : মো. আসাদুজ্জামান

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

শেয়ার
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকার আড়াই বছর বয়সী নূরজাহান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল তোলা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম

মন্তব্য

২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দলটির আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দলটি আগামী জাতীয় সংসদে নিম্নকক্ষে আংশিক আনুপাতিক ও উচ্চকক্ষে পূর্ণ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক দ্বিকক্ষীয় সাংবিধানিক কাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দলের নেতারা বলেন, একদলীয় শাসনব্যবস্থা জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ।

আনুপাতিক পদ্ধতির মাধ্যমেই সব শ্রেণি ও মতধারার সঠিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব।

মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া আত্মঘাতী। এতে ফ্যাসিবাদের দোসররা আরো উৎসাহী হচ্ছে। আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, তবে ফ্যাসিবাদ ফের মাথা চাড়া দেবে।

গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী শৈথিল্য দেখালেও পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে দুষ্কৃতকারীরা দ্রুত প্রতিহত হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেনদলের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মূসা, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা ফয়সাল আহমদ। এ ছাড়া ছিলেন মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা হারুনুর রশীদ, মাওলানা রুহুল আমীন খান, মাওলানা হাসান জুনাইদ, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন ও মাওলানা মুহসিন বেলালী।

মন্তব্য

রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা

রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী
রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী
শেয়ার
রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা

পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার ওয়াহেদুজ্জামান (৭১) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পরিবারের সদস্যরা গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে পাঠানো হয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে (মেডিসিন ওয়ার্ড)। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করে নেন।

সেখানে বারান্দায় একটি শয্যায় রেখে চলতে থাকে রোগীর চিকিৎসা। পরের দিন ১৪ জুলাই সকালে ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বরত স্থায়ী অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা গিয়ে রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন।

পরের দিন ১৫ জুলাই সকালের দিকে রোগী কিছুটা সুস্থ বোধ করলে তাঁকে ছুটি দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই রোগী আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।

তখন কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা রোগীকে প্রথমে অক্সিজেন এবং পরবর্তীতে স্যালাইন দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত রোগীর অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত একটা অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় নগরীর বাকির মোড়ে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে।
সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরে দ্রুত তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। ধরা পড়ে তাঁর শরীরে ডেঙ্গুসহ নানা জটিলতা। তবে তাৎক্ষণিক সঠিক চিকিৎসা পাওয়ায় রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকেন।

এটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। চিকিৎসকসংকটে দিনের প্রায় ১৮ ঘণ্টাই ইন্টার্ন চিকিৎসকনির্ভরতার মাধ্যমে চলছে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা।

খুব জরুরি প্রয়োজনে ফোনে পরামর্শ নেওয়া হয় অভিজ্ঞ ডাক্তারদের। এর বাইরে এফসিপিএস ডিগ্রিধারী বা এফসিপিএস করছেন এমন মধ্যম মানের চিকিৎসকরা থাকেন ভর্তির দিন ধার্য থাকা ওয়ার্ডগুলোতে। এ ছাড়া দিনের ২৪ ঘণ্টা প্রতিটি ওয়ার্ডেই চার থেকে ছয়জন করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে হয় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই ইন্টার্নদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। 

পাবনার ঈশ্বদীর রোগী ওয়াহেদুজ্জামানের ছেলে হামিম আবেদীন বলেন, রামেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিনে একবার করে আসার কারণে আমার বাবার সমস্যাগুলো জটিল হয়ে গিয়েছিল, যা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুঝে উঠতে পারেননি।

ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি রোগীর সেবা দেওয়ার। কিন্তু যে পরিমাণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়, সে পরিমাণ ইন্টার্ন চিকিৎসকও নেই।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বলেন, হাসপাতালে পর্যাপ্ত আনসার সদস্যও নেই। অন্যদিকে যেসংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে, সেসংখ্যক অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাসামগ্রী ও ওষুধপথ্যও আমরা দিতে পারছি না। কারণ সব কিছু বরাদ্দ হচ্ছে ৫০০ শয্যার বিপরীতে। কিন্তু এখানে শয্যাই আছে এক হাজার ২০০টি। এর বাইরেও অতিরিক্ত আরো দুই থেকে আড়াই হাজার রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের নানাভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।    

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ